০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`


রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা কমাতে দরকষাকষি করা হবে

দুই সপ্তাহের সফরে আইএমএফের মিশন ঢাকায়
-

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণপ্রাপ্তির শর্ত অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার শর্ত অনুযায়ী মার্চ শেষে ১ হাজার ৯২৬ কোটি মার্কিন ডলার রিজার্ভ রাখার কথা ছিল। কিন্তু প্রকৃত রিজার্ভ ১৬ বিলিয়নের চেয়েও কম। এমতাবস্থায় তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় করাতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমানোসহ শর্ত শিথিলের জন্য দরকষাকষি করবে সরকার। এজন্য আইএমএফের মিশন ঢাকায় আসা শুরু করেছে। আগামী ৮ মে পর্যন্ত মিশনের সাথে দরকষাকষি করবে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ডলার সঙ্কট কাটাতে আইএমএফ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণসহায়তা নিচ্ছে সরকার। এ ঋণের তৃতীয় কিস্তির অর্থছাড়ের আগে সংস্থাটির একটি রিভিউ মিশন বাংলাদেশ সফরে এসেছে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সাথে তাদের বৈঠক হয়েছে। আজ শেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আইএমএফের পক্ষ থেকে ঋণ দেয়ার অন্যতম শর্ত ছিল মার্চ শেষ বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ থাকতে হবে ১৯ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার। যদিও মার্চ শেষে এ রিজার্ভ ১৬ বিলিয়নেরও কম রয়েছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রকৃত রিজার্ভ হলো দায়হীন রিজার্ভ। প্রকৃত রিজার্ভের হিসাব কিভাবে হবে, সেই সূত্রও ঋণ দেয়ার সময় বাংলাদেশকে জানিয়ে দিয়েছিল আইএমএফ। সংস্থাটি ঋণের শর্ত হিসেবে নির্দিষ্ট সময় পরপর প্রকৃত রিজার্ভ কী পরিমাণে থাকতে হবে, তা ঠিক করে দেয়। সে অনুযায়ী, প্রতি তিন মাস পরপর আইএমএফের শর্ত মেনে বাংলাদেশকে রিজার্ভ সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। এর আগে গত ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর ও ডিসেম্বরের শেষেও আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী রিজার্ভের লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে বাংলাদেশের অনুরোধে রিজার্ভ সংরক্ষণের লক্ষ্য কমিয়ে দেয় সংস্থাটি। সদ্য সমাপ্ত মার্চের শেষে সংশোধিত লক্ষ্যও অর্জন হয়নি। এবার শর্ত শিথিল নাও করতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়ে আজ বুধবার থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, ঋণের জন্য দেয়া বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা ও সংস্কার কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে পর্যালোচনা শুরু করবে আইএমএফ মিশন। ইতোমধ্যে মিশনের প্রতিনিধি দলের একটি অংশ ঢাকায় পৌঁছেছে। মিশনের বাকি সদস্যরা অচিরেই ঢাকায় এসে মূল দলের সাথে যোগ দেবে। তারা আগামী ৮ মে পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করবে। ওই সময়ে অর্থ মন্ত্রণালয়, জ্বালানি মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সাথে আলোচনা করবে আইএমএফ মিশন।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আইএমএফের এসডিআর খাত, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে রাখা ডলার ও এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিলের জন্য জমা থাকা ডলার বাদ দিয়ে যে হিসাব হয়, সেটিই প্রকৃত রিজার্ভ। এর বাইরে রিজার্ভের আরো দু’টি হিসাব রয়েছে। তার একটি হলো, মোট রিজার্ভ। আরেকটি আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রক্ষিত রিজার্ভ। গত মার্চের শেষে মোট রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৪৮১ কোটি ডলার। তবে আইএমএফের চাওয়া শুধু নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ কত হবে সেটি।

আইএমএফ সাধারণত ঋণ দেয়ার সময় আর্থিক খাতে নানা সংস্কারের পাশাপাশি বেশ কিছু শর্তও জুড়ে দেয়। তাদের শর্ত অনুযায়ী গত বছরের জুনের শেষে নিট রিজার্ভ থাকার কথা ছিল ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু ওই সময় তা ছিল ২০ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সংস্থাটিকে তখন জানানো হয়, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের পর রিজার্ভ ও রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য অর্জনের শর্ত পূরণ করা সম্ভব হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আইএমএফ রিজার্ভ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে শর্ত কিছুটা শিথিল করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ডলারের বিপরীতে বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার কথা ছিল গত জুলাইয়ের মধ্যে। এটি এখনো পুরোপুরি চালু করা সম্ভব হয়নি। দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের আলোচনার সময় এটি চালু করতে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হয়। এর মধ্যেও চালু করা যায়নি। এটি চালু করতে আরো সময় চাওয়া হবে। কারণ ডলার বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারভিত্তিক দর চালু করতে চাচ্ছে না।

আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় রেখে দেশের বাজারে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো বা কমানোর কাঠামো তৈরির বিষয়টি গত সেপ্টেম্বর থেকে চালুর কথা ছিল। এটি সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে কাঠামো তৈরি করতে আরো সময় চাওয়া হবে।

এ ছাড়াও গত জুন ও ডিসেম্বর ভিত্তিক যেসব শর্ত বাস্তবায়নের কথা ছিল সেগুলোও পর্যালোচনা করবে আইএমএফ। যেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি সেগুলোর বিষয়ে সরকারের মতামত চাইবে। একই সাথে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে সংস্কারের অগ্রগতি সম্পর্কেও জানতে চাইবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement