১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
সিপিডির আলোচনায় তথ্য প্রকাশ

সরকার ঋণ নিয়ে ঋণ পরিশোধ করছে

-


বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ ও ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতা বাড়ছে। যা সরকারকে অপর্যাপ্ত রাজস্ব আদায়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধের জন্য ক্রমাগত নতুন ঋণ নিতে বাধ্য করছে বলে জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈদেশিক ঋণ এবং ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতার হার বেড়েছে। ২০২৩ সালের জুনে বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি বিদেশী ঋণ ছিল ৯৮ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। যা বর্তমানে এক শ’ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। বর্তমানে বিদেশী ঋণ-জিডিপি অনুপাত ২১ দশমিক ৬ শতাংশ। আর ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, তিন বছরের ব্যবধানে মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ অস্বাভাবিক বেড়েছে। তিন বছর আগে মানুষের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ টাকা। এখন তা দেড় লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

সিপিডি ও এশিয়া ফাউন্ডেশন যৌথভাবে গতকাল ঢাকার লেকশোর হোটেলে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ ও ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা নিয়ে আলোচনায় একটি প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান এ কথা বলেন। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহউদ্দিন আহমদ, এমসিসিআই প্রেসিডেন্ট কামরান টি. রহমান, সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, এশিয়া ফাউন্ডেশনের কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ, রাজনীতিবিদ জোনায়েদ সাকী।
উপস্থাপনায় ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা পাবলিক ও পাবলিকলি গ্যারান্টিযুক্ত ঋণের দায়বদ্ধতার একটি বড় অংশ পরিশোধের জন্য ঋণ নিচ্ছি। তাই দ্রুত অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ বাড়ানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, কোভিড কিংবা ইউক্রেন যুদ্ধ নয় ২০১৮-১৯ সালের ভিন্ন কারণে সরকারের ঋণ নেয়ার প্রবণতা বেড়েছে। বর্তমানে বিদেশী ঋণ-জিডিপি অনুপাত ২১ দশমিক ৬ শতাংশ তুলনামূলকভাবে বেশি নয়। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঋণ পোর্টফোলিওর গঠন দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। রেয়াতি ঋণের অনুপাত কমছে, অন্যদিকে রেয়াতি ও বাজারভিত্তিক ঋণের অংশ বাড়ছে। ঋণের শর্তাবলীও আরো কঠোর হচ্ছে। তিনি বলেন, বিশেষ করে জিডিপি, রাজস্ব আয়, রফতানি, রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সাথে তুলনা করলে বৈদেশিক ঋণ ও ঋণ পরিশোধের দায়বদ্ধতার দ্রুত বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।

সিপিডি বলছে, বাংলাদেশের রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সর্বনি¤œ। এর সাথে ঋণ বহনের সক্ষমতা ও ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা উদ্বেগ তৈরি করেছে। দিন শেষে অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ গুরুত্বপূর্ণ। যা অভ্যন্তরীণ ও বিদেশী উভয় ঋণ পরিশোধের জন্য বিবেচনা করতে হবে। অভ্যন্তরীণ সম্পদের একটি ক্রমবর্ধমান অংশ দেশী ও বিদেশী ঋণের মূল ও সুদ পরিশোধে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, নীতিনির্ধারকরা প্রায়ই বলেন, অর্থনীতিবিদরা ঠিকমতো বিশ্লেষণ করতে পারে না এবং ভবিষ্যতও বলতে পারে না। অর্থনীতিবিদদের নিয়ে প্রায়শই শ্লেষাত্মক ও ব্যাঙ্গাত্মক কথা বলেন। আজ থেকে দুই বছর আগে সিপিডিতে বসে আমি বলেছিলাম যে, ২০২৪ সাল আমাদের জন্য কঠিন হবে। সেখানে দায়দেনা পরিশোধে বড় ধরনের ধাক্কা আসতে পারে। ২০২৫ সাল থেকে ঋণ পরিশোধে অস্বস্তি শুরু হবে। বলেছিলাম ২০২৬ সালে এটা আরো বাড়বে। ঋণের হিসেবে গাফলতি আছে। এই হিসেবে এখনো অনেক কিছু বিবেচনায় নেয়া হয়নি।

তিনি বলেন, গত দেড় দশকে ঋণ করে অনেক মেগা প্রকল্প করা হলেও তা মানুষের উন্নতিতে কাজে আসেনি। বরং মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার বেড়েছে। খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে। তিনি বলেন, বেকার বেড়েছে। ট্রেনিং নাই এমন মানুষের সংখ্যা ৪০ শতাংশ হয়ে গেছে। ২৫ শতাংশ মানুষ আহারের জন্য ঋণ নিচ্ছে। উন্নয়ন প্রকল্পের ৭০ শতাংশ নেয়া হয়েছে বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরিতে। ফলে খাতভিত্তিক উন্নয়ন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। প্রকল্প থেকে একটি গোষ্ঠী লাভবান হয়েছে।
মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে একটি গোষ্ঠীকে সুবিধা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করে ড. দেবপ্রিয় বলেন, মেগা প্রকল্পের সাথে যুক্ত প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিরা বিদেশে টাকা পাচারের সাথে জড়িত থাকতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যারা গাজা বা ইউক্রেন যুদ্ধের কথা বলেন তাদের সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত না। কিছুটা একমত। আমি তথ্য উপাত্ত দিয়ে আপনাদের দেখাতে পারি যে, কভিড, গাজা কিংবা ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে না, সম্পূর্ণ ভিন্নতর কারণে এটা বেড়েছে। ২০১৮ সালের পরের থেকে ঋণ নেয়ার প্রবণতা বেড়েছে। ঋণ বাড়া উদ্বেগের বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, এখন রেভিনিউ বাজেট থেকে একটা পয়সা দিতে পারি না উন্নয়ন প্রকল্পকে অর্থায়ন করার জন্য। কেউ যদি বলে আমরা এখন ঋণে আছি, ডেফিনেটলি আমরা আর ঋণে নেই। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ সবাই আমাদের রেটিং নামাচ্ছে। আমরা সবুজ থেকে হলুদ হয়েছি। আমি বলব আমরা খয়েরিতে আছি। তিনি বলেন, বর্তমান বাস্তবতা যখন ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে যখন আটকে দেয় তাকেই ব্রাউন জোন বলে। গত ১০ বছর যাবৎ বিনিয়োগ কেন ২৩.৮ শতাংশে আটকে আছে। দেড় দশকের সাফল্য কেন বিনিয়োগে প্রতিফলিত হলো না। বৈদেশিক বিনিয়োগ কেন বাড়ল না। কেন জিডিপির ১ শতাংশে আটকে গেল এবং গত বছর ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ জিডিপির অংশ হিসেবে সরকারি হিসেবে কমে গেছে।


আরো সংবাদ



premium cement