গাজায় ত্রাণকর্মী নিহতের ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দা
ফিরে যাচ্ছে ত্রাণবাহী জাহাজ- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০৫
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় প্রয়োজনীয় ত্রাণ সরবরাহের সময় ইসরাইলি বিমান হামলায় একটি দাতব্য সংস্থার সাত কর্মী নিহত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ব্রিটেনসহ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। ‘ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন’ নামক এনজিওর একটি নৌকার সাহায্য ত্রাণসামগ্রী বিতরণের প্রাক্কালে ইসরাইলি বাহিনী হামলা চালিয়ে অস্ট্রেলিয়ান, ব্রিটিশ, ফিলিস্তিনি, পোলিশ এবং মার্কিন-কানাডিয়ান সাতজন কর্মীকে হত্যা করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, হামলার ঘটনায় তিনি ক্ষুব্ধ। তিনি কঠোর ভাষায় এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইসরাইলকে ‘এই হামলার দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে।’ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বিমান হামলার ‘দ্রুত, নিরপেক্ষ তদন্ত’ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য ইসরাইলকে আরো অনেক কিছু করতে হবে।
ব্রিটেনে ইসরাইলি রাষ্ট্রদূতকে তলব : ব্রিটেন দেশটিতে নিযুক্ত ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত জিপি হোটোভেলিকে ২ এপ্রিল, মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে এ ঘটনার নিন্দা জানানো হয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক এই দুঃখজনক ঘটনার জবাব দেয়ার জন্য ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ত্রাণকর্মীদের সুরক্ষার জন্য এবং গাজায় গুরুত্বপূর্ণ মানবিক কার্যক্রমের সুবিধার্থে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন জানিয়েছেন, তিনি মঙ্গলবার তার ইসরাইলি প্রতিপক্ষ ইসরাইল কাটজের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা করে হত্যার ঘটনা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য। এর আগে তিনি এই মৃত্যুর ঘটনাটিকে গভীর বেদনাদায়ক বলে উল্লেখ করেছিলেন।
তেমনি উন্নয়ন ও আফ্রিকাবিষয়ক ব্রিটিশ মন্ত্রী অ্যান্ড্রু মিচেল ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত জিপি হোটোভেলির সাথে বৈঠকের পর একটি বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘আমি ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলার বিষয়ে একটি দ্রুত এবং স্বচ্ছ তদন্তের অনুরোধ করেছি। সম্পূর্ণ জবাবদিহিতার জন্য এ তদন্তের ফলাফল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে ভাগ করে নেয়ারও আহ্বান জানিয়েছি। তিনি আরো বলেছেন, ‘আমি ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের তিনজন ব্রিটিশ নাগরিকসহ সাতজন ত্রাণকর্মীদের নির্মমভাবে হত্যার জন্য ইসরাইলি সরকারের দ্ব্যর্থহীন নিন্দা জানিয়েছি।’ ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই মর্মান্তিক ঘটনার পরিস্থিতি বোঝার জন্য তারা সর্বোচ্চ স্তরে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা কমিটি গঠন করছে।
তবে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, হামলাটি ছিল ‘অনিচ্ছাকৃত’। ইসরাইলি সেনাবাহিনী হামলার তদন্ত করবে এবং ‘আমাদের তদন্তের রিপোর্ট স্বচ্ছভাবে প্রকাশ করার’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন সেজার্ন প্যারিসে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্লিনকেনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, ‘মানবতাবাদী কর্মীদের সুরক্ষা একটি নৈতিক এবং আইনি বাধ্যতামূলক; যা সবাইকে অবশ্যই মেনে চলতে হবে। এমন মর্মান্তিক ঘটনাকে কেউ সমর্থন করে না।’
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ ‘সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য’ হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন এবং এ ধরনের ‘মর্মান্তিক হামলা চালানো উচিত হয়নি’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি হামলায় নিহত অস্ট্রেলিয়ান স্বেচ্ছাসেবক লালজাওমি ‘জোমি’ ফ্রাঙ্ককমের পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানিয়েছেন।
ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের প্রতিষ্ঠাতা স্প্যানিশ বংশোদ্ভূত ইউএস-ভিত্তিক সেলিব্রিটি শেফ জোসে আন্দ্রেস বলেছেন, তিনি ‘নিহতদের পরিবার ও বন্ধুবান্ধব এবং আমাদের ওয়ার্ল্ড কিচেন সেন্টারের পুরো পরিবারের জন্য হৃদয়বিদারক ঘটনা। জর্দান সফররত স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেছেন, আমি আশা করি ইসরাইলি সরকার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই নৃশংস হামলার সম্পর্কে স্পষ্ট করবে। তিনি মঙ্গলবার জর্দানে একটি ফিলিস্তিনি শরণার্থী শিবির পরিদর্শনকালে এমন মন্তব্য করেন।
ইইউর পররাষ্ট্রনীতির প্রধান জোসেপ বোরেল বলেছেন, ‘বেসামরিক ও মানবিক কর্মীদের সুরক্ষার জন্য সব দাবি সত্ত্বেও আমরা নিরীহ লোকদের হতাহতের ঘটনা দেখতে পাচ্ছি।’ একটি ভিডিওবার্তায় নেতানিয়াহু বলেছেন, দুর্ভাগ্যবশত গত দিনে একটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। আমাদের বাহিনী অনিচ্ছাকৃতভাবে গাজা উপত্যকায় যোদ্ধা নয় এমন ব্যক্তিদের ক্ষতি করেছে। তিনি বলছিলেন, ‘যুদ্ধে এমনটি ঘটে। তবে আমরা এ ঘটনার একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত নিয়ে সরকারের সাথে যোগাযোগ করছি। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে যা যা করা দরকার তার সব কিছু আমরা করব।’
অনাকাক্সিক্ষত এ ঘটনার জন্য ‘আন্তরিকভাবে দুঃখ’ প্রকাশ করেছে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী। ‘একটি স্বাধীন, পেশাদার এবং বিশেষজ্ঞ সংস্থার মাধ্যমে এই ঘটনা তদন্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা। জাতিসঙ্ঘের মতে, অক্টোবর থেকে গাজায় কমপক্ষে ১৯৬ মানবিক কর্মী নিহত হয়েছেন। এর আগে ইসরাইলের বিরুদ্ধে সাহায্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করার অভিযোগ করেছিল হামাস।
পণ্য খালাস ছাড়াই ফিরে যাচ্ছে ত্রাণবাহী জাহাজ : ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বিদেশী ত্রাণকর্মীদের ওপর দখলদার ইসরাইলের বর্বর হামলার পর, পণ্য খালাস না করে গাজা উপকূল থেকে ফিরে যাচ্ছে ২৪০ টন ত্রাণ নিয়ে আসা একটি জাহাজ। মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছে সাইপ্রাস। এই সাইপ্রাস থেকেই ত্রাণ নিয়ে গাজা উপকূলে ভিড়েছিল জাহাজ। এর মধ্যে একটি জাহাজ থেকে ১০০ টন ত্রাণ খালাস করার পরই ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এসব ত্রাণ বিতরণের দায়িত্বে ছিল ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন নামের একটি বেসরকারি সংস্থা। কর্মী নিহত হওয়ার পর গাজায় নিজেদের কার্যক্রম স্থগিত করে দেয় ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন। আরো হামলার শঙ্কায় এখন ত্রাণবাহী জাহাজ পণ্য খালাস না করে চলে যাচ্ছে। সাইপ্রাসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র থেদোরোস গোতসিস বলেছেন, এ হামলার ঘটনার আগে অন্তত ১০০ টন ত্রাণ খালাস করা হয়েছে। সাইপ্রাসের লার্নাকা বন্দর থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপকূলে একটি সামুদ্রিক পথ তৈরি করা হয়েছিল।
এই পথ দিয়ে অভুক্ত গাজাবাসীদের জন্য ত্রাণ আনার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু বিদেশী ত্রাণ কর্মীদের ওপর হামলার মাধ্যমে এটি এখন হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে ইসরাইল।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা