১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠানে বিশেষ ছাড়

ইচ্ছাকৃত খেলাপি না হলে ঋণ দেয়ায় বাধা থাকছে না

-

গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষ ছাড় দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। কোনো গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইচ্ছেকৃত খেলাপি না হলে অন্য প্রতিষ্ঠান খেলাপি বলে গণ্য হবে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এক সার্কুলার জারি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সার্কুলারের ফলে গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠান বাড়তি সুবিধা পাবে। একটি খেলাপি হলে অন্য প্রতিষ্ঠানের নামে নতুন করে ঋণ নিতে পারবে। এভাবে একই গ্রুপের অধীনে পুঞ্জীভূত খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাবে।

জানা গেছে, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ধারা ২৭কক (৩) অনুযায়ী, কোনো খেলাপি ঋণগ্রহীতার অনুকূলে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কোনোরূপ ঋণ দিতে পারবে না। আর এ কারণে আগে কোনো গ্রুপের কোনো প্রতিষ্ঠান খেলাপি হলে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ সুবিধা নিতে পারত না। এতে একই প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বেশি পরিমাণ খেলাপিঋণ পুঞ্জীভূত হতে পারত না। কিন্তু সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৫(গগ) ধারার বিধান অনুসারে পরস্পর স্বার্থসংশ্লিষ্ট গ্রুপভুক্ত কোনো খেলাপি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অথবা কোম্পানি যদি ইচ্ছাকৃত খেলাপী ঋণ গ্রহীতা না হয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট ওই ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার ক্ষেত্রে কারণ যুক্তিসঙ্গত মনে হয় তাহলে ওই ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি খেলাপি হওয়ার কারণে গ্রুপের অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি খেলাপি বলে গণ্য হবে না। এ ছাড়া ওই সব প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানীকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে ঋণসুবিধা দেয়া যাবে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ আইনের বলে একই গ্রুপের একাধিক প্রতিষ্ঠান ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা নিতে পারবে। এখন এমনিতেই নানা ফাঁকফোকর দিয়ে ঋণ বের করে নিচ্ছেন এক ধরনের স্বার্থান্বেষী মহল। এ সুবিধা থাকায় একই গ্রুপের অধীনে পুঞ্জীভূত খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কোনো ঋণ গ্রহীতা খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হলে ওই খেলাপি ঋণগ্রহিতার অনুকূলে কোন ঋণ সুবিধা দেয়া যাবে না। তফসিলি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গ্রুপভুক্ত কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিকে চূড়ান্তভাবে ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা হিসেবে তালিকাভুক্ত করার পর ওই তালিকাভুক্তির বিরুদ্ধে ঋণ গ্রহীতার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আপিল করলে তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে ঋণ দেয়ার আবেদন করা যাবে না।

একই সাথে গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি খেলাপি হওয়ার পরও যদি ঋণ সুবিধা পায় তবে সুবিধা নেয়ার ১ বছরের মধ্যে খেলাপী ঋণ হিসাবটি বিদ্যমান নীতিমালা অনুসরণ করে সমন্বয় বা নিয়মিত করতে হবে। যদি এই সময়ে খেলাপি ঋণ হিসাব সমন্বয় বা নিয়মিত করতে ব্যর্থ হয় অথবা ঋণ হিসাব নিয়মিতকরণের পর পুনরায় খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয় তবে গ্রুপভুক্ত অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিকে নতুন করে আর কোনো ঋণ সুবিধা দেয়া যাবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, ঋণ প্রদানের আবেদনপত্র বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানোর ক্ষেত্রে আবেদনপত্রের সাথে গ্রুপভুক্ত খেলাপী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি খেলাপী হওয়ার কারণগুলো উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। ওই খেলাপি ঋণ গ্রহীতা ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ গ্রহীতা কি না তা নিশ্চিত করার জন্য এ সংক্রান্ত হালনাগাদ সিআইবি রিপোর্ট সংযুক্ত করতে হবে। একই সাথে সিআইবি-তে রিপোর্টিংয়ের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্দেশনা জারির পূর্ব পর্যন্ত উক্ত খেলাপিঋণ গ্রহীতা ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা নন মর্মে সংশ্লিষ্ট সব ঋণদাতা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে প্রত্যয়নপত্র নিয়ে তা সংযুক্ত করতে হবে। পূর্বানুমোদন দেয়ার আগে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক গ্রুপভুক্ত খেলাপি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানী খেলাপী হওয়ার যুক্তিসঙ্গত কারণ, ঋণ আবেদনকারী সংশ্লিষ্ট ঋণ গ্রহীতার ব্যাংক হিসাব ও প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম এবং পরিদর্শন দলের বিবেচনায় প্রয়োজনীয় বিষয়াবলি পর্যালোচনার লক্ষ্যে সরেজমিন পরিদর্শন করা হবে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক যেই সিদ্ধান্ত নেবে তাই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।


আরো সংবাদ



premium cement