১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ক্যাম্পাসকে রাজনীতিমুক্ত রাখতে শিক্ষকদের পাশে চান অনড় শিক্ষার্থীরা

কোর্টের আদেশ শিরোধার্য : ভিসি
হাইকোর্টের রায়ের পর বুয়েট শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলন : নয়া দিগন্ত -


বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) সব রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার জরুরি বিজ্ঞপ্তি কার্যক্রম স্থগিত করে হাইকোর্ট। এই রায়ের পর সংবাদ সম্মেলন করেন বুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় ক্যাম্পাসকে ছাত্ররাজনীতিমুক্ত রাখতে শিক্ষকদের তাদের পাশে থাকার আর্জি জানান শিক্ষার্থীরা।
গতকাল বুয়েট ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পেশ করা হয়। লিখিত এই বক্তব্যে বলা হয়, আমরা বুয়েটের শিক্ষার্থীরা দেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি সম্পূর্ণ সম্মান ও আস্থা রাখি। বুয়েট ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও ২৮ মার্চ মধ্য রাতে ক্যাম্পাসে বহিরাগত রাজনীতি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের প্রবেশ এবং শোডাউনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালার লঙ্ঘন বলে মনে করেন বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর ৯ অক্টোবর বেলা সাড়ে ৩টায় গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠানেই তো সংগঠন করা নিষিদ্ধ আছে। বুয়েট যদি মনে করে তারা সেটা নিষিদ্ধ করে দিতে পারে। এটা তাদের ওপর। এরই ফলস্বরূপ, বুয়েটের সব শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েট প্রশাসন সবৃ প্রকার সাংগঠনিক রাজনীতি ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করে।
আমরা বুয়েট প্রশাসনের কাছে দাবি রাখব, এ বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত বিচার বিভাগে যথাযথভাবে তুলে ধরা হোক। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি না থাকার যে দাবি তার যৌক্তিকতা নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ এবং অটল। যেই ছাত্ররাজনীতি র‌্যাগিং কালচারকে প্রশ্রয় দেয়, ক্ষমতার অপব্যবহারের পথ খুলে দেয়, যার বলি হতে হয় নিরীহ ছাত্রদেরকে, যা আমাদের জন্য ভালো কিছু কখনোই বয়ে আনেনি, আনবেও না।
এর চরম মূল্য হিসেবে আমরা আমাদের কেমিকৌশল ৯৯ এর সাবেকুন্নাহার সনি, যন্ত্রকৌশল ০৯ এর আরিফ রায়হান দ্বীপ এবং সর্বশেষ তড়িৎকৌশল ১৭ এর আবরার ফাহাদকে হারিয়েছি। ছাত্ররাজনীতিবিহীন বুয়েটের পরিবেশ ছিল সর্বোচ্চ নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব। মৌলবাদী শক্তিকেও আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দিতে পারি।

এ সময় আরো বলা হয়, দেশ এবং বিদেশের নানাপ্রান্ত থেকে বুয়েটের অ্যালামনাইরাও ইতোমধ্যে আমাদের ক্যাম্পাস ছাত্ররাজনীতিমুক্ত রাখার মতামতের সাথে দৃঢ়ভাবে একাত্মতা পোষণ করছেন এবং সোস্যাল মিডিয়াতে নিজ নিজ জায়গা থেকে তারা আমাদের পক্ষে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করছেন। আমরা বর্তমান শিক্ষার্থীরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি পূর্ণ ভরসা এবং আস্থা রাখি। তাদের কাছ থেকেই আমরা শিক্ষা গ্রহণ করি, তারাই আমাদের প্রতিটি ক্লাসরুম প্রতিটি ল্যাবের নায়ক। প্রফেসর, অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, লেকচারার যারাই আমাদের ক্লাস নিয়েছেন, আমরা গত চার বছরে শিক্ষার্থীরা এমনটা কখনো অনুভব করিনি যে তারাও চান পুনরায় ছাত্ররাজনীতি প্রবেশ করে সেই অন্ধকার দিনগুলো ক্যাম্পাসে ফিরে আসুক। তারা কখনোই আমাদের অকল্যাণ চাননি এবং কখনোই চাইবেনও না। তারা সবসময়ই শিক্ষার্থীদের পক্ষেই ছিলেন। আজ এই প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে আমরা আমাদের বুয়েটের সব শিক্ষকের কাছে আর্জি জানাচ্ছি, তারা যাতে এমন সঙ্কটের মুহূর্তে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ান।
আমরা আমাদের মাননীয় ভিসি স্যারের ওপর আস্থা পোষণ করি। তার সদিচ্ছা সবসময় আমাদের পক্ষেই ছিল বলেই আমরা বিশ্বাস করি। গত তিন দিনব্যাপী আন্দোলনের মধ্যে তিনি আমাদের সব ব্যাচের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সাথে দেখা করেন, বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং আমাদের কথা শোনার চেষ্টা করেন। আমরা শিক্ষার্থীরা আমাদের মাননীয় ভিসি স্যারকে এই আর্জি জানাচ্ছি, তিনি যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষককে নিয়ে আপামর বুয়েট শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের যে আকাক্সক্ষা তা সব আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যাতে পূরণ করেন।

কোর্টের আদেশ শিরোধার্য : বুয়েট ভিসি
এ দিকে আদেশের পর বুয়েটের ভিসি সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেছেন, আদালত যেটা বলবেন, আমাকে সেটা মানতে হবে। আদালতের আদেশ শিরোধার্য। আমরা আদালত অবমাননা করতে পারব না।
গতকাল সোমবার দুপুরে বুয়েট ক্যাম্পাসের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ভিসি ।
আদালতের আদেশের পর বুয়েটের পদক্ষেপ কী হবে জানতে চাইলে ভিসি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের আইনজীবীদের সাথে আলোচনা করতে হবে। আদালতকে তো আমরা ভায়োলেট (আদেশ লঙ্ঘন) করতে পারব না। আমাদের আদালতের নিয়মে চলতে হবে। আইন ও নিয়ম অনুযায়ী এগোতে হবে।
ভিসি আরো বলেন, আদালতের আদেশ না দেখে তিনি কিছু বলতে পারছেন না। আদেশ দেখার পর বুয়েটের আইন উপদেষ্টার পরামর্শ অনুযায়ী তারা এগিয়ে যাবেন।
বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চালু হলে আবার আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটবে কি না এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে ভিসি বলেন, আমি ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারব না। কী হবে না হবে, সেটা কি আমি-আপনি জানি?
এক প্রশ্নের জবাবে বুয়েটের ভিসি বলেন, রাজনীতির পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রশাসন সবাই মিলে একটা রূপান্তর করতে হবে। কিভাবে সেটা করা যায়, তা আলোচনার মাধ্যমে বের করতে হবে। বর্তমানে ইউকসুর (ছাত্র সংসদ) কার্যক্রম বন্ধ আছে। সব পক্ষের মতামত নিয়েই একটা কিছু করতে হবে। একা কিছু করলে, তা বাস্তবায়ন করা যাবে না। সেটা সিন্ডিকেটে অনুমোদিত হতে হবে, অর্ডিন্যান্সে যুক্ত হতে হবে। রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের অনুমোদন নিতে হবে। তা না হলে এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্সে ঢুকবে না। আর বিশ্ববিদ্যালয় তার নিয়মে চলে। কিন্তু আদালতের আদেশ শিরোধার্য।
হাইকোর্টের আদেশের বিষয়ে জানতে চাইলে বুয়েট ভিসি বলেন, আদালত যা বলবেন, আমরা সেটা মানতে বাধ্য। আদালত সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। আদালত আমাদের যে নির্দেশনা দেবেন, আমরা সেই নির্দেশনা মেনে চলব।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে শেরেবাংলা হলে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় করা মামলায় আদালত ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। আর পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। এ হত্যাকাণ্ডের পর থেকে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ আছে।


আরো সংবাদ



premium cement
মামলা শেষ হলে দেশে ফিরবেন তারেক রহমান : মির্জা ফখরুল কালিয়াকৈরে ছুরিকাঘাতে যুবককে হত্যা ৫ আগস্টের পর চাঁদাবাজি-ছিনতাইয়ে র‍্যাবের ১৬ সদস্য আটক : ডিজি মিয়ানমারে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী শহর থেকে শত শত সৈন্যসহ জেনারেল আটক শনিবার থেকে শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে’ পাওনা টাকা চাওয়ায় চা দোকানির হাত ঝলসে দেয়ার অভিযোগ হাসিনার বিবৃতিকে ভারত সমর্থন করে না : বিক্রম মিশ্রি ডুয়েটে কৃষি যন্ত্রপাতি প্রতিভা অন্বেষণে সেমিনার ও প্রদর্শনী মেলা শুক্রবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরি চলাচল স্বাভাবিক

সকল