বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি চলতে বাধা নেই : হাইকোর্ট
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০২ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫৭
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একই সাথে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। গতকাল সোমবার বিচারপতি মো: খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের সমন্বয়ে গঠিত অবকাশকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ বুয়েটের হল থেকে সম্প্রতি বের করে দেয়া শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের করা এক রিট আবেদনের শুনানি গ্রহণ করে এ আদেশ দেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, বুয়েটের ভিসি ও রেজিস্ট্রারকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এর ফলে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি চলতে কোনো বাধা নেই বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। রাষ্ট্র পক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান দাউদ।
আদালতে শুনানিতে আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, রাজনৈতিক সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা আইনগতভাবে তাদের নেই। একটি সংগঠনকে এভাবে বন্ধ করার রাইট বা এখতিয়ার তাদের নেই। আদালত শুনানি গ্রহণ করে রুল ও স্থগিতাদেশ দেন।
আদালত থেকে বের হয়ে শাহ মঞ্জুরুল হক আরো বলেন, সংবিধানের ৩৭, ৩৮ ও ৩৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের নোটিশ দেয়ার কোনো ভিত্তি নেই। সমাবেশ, রাজনৈতিক দল করার এবং বাকস্বাধীনতার অধিকার মৌলিক অধিকার হিসেবে দেয়া আছে। বুয়েট অর্ডিন্যান্স, ১৯৬১ অনুসারে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলা আছে। নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা নেই। তারপরও ওই নোটিশকে সম্মান করে আসছিল ছাত্রলীগ। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিতে গেলে বাধা দেয়া হয়। এরপর রাজনীতি নিষিদ্ধের নোটিশ যখন আমাকে দেখানো হলো, আমি বললাম, এটা মৌলিক অধিকার ও বুয়েট অর্ডিন্যান্স পরিপন্থী। আদালত রুল জারি করেছেন এবং বুয়েটের বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করেছেন। যার ফলে বুয়েটে রাজনৈতিক কার্যক্রমে আর কোনো বাধা থাকল না।
আদালতে শুনানির সময় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন।
২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর বুয়েট কর্তৃপক্ষের দেয়া ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তির’ বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বুয়েটের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম আদালতে রিট আবেদন করেন। তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্টাটাস দেয়াকে কেন্দ্র করে ২০১৯ সালে আবরার ফাহাদ নামে এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তখন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। বুয়েটের ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল রাজনৈতিক সংগঠন এবং এর কার্যক্রম কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে নিষিদ্ধ করা হলো।’
এরপর থেকে বুয়েটে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ রয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, দফতর সম্পাদকসহ অনেকেই বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। পুরকৌশল বিভাগের ২১তম ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম এ সমাগম ঘটান বলে অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন।
এরপর শুক্রবার রাতে বুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ফোরকান উদ্দিনের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৮ মার্চ মধ্যরাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংঘটিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে ১. বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ ব্যাচের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের (স্টুডেন্ট নাম্বার ২১০৪১৪১) হলের সিট বাতিল করা হলো। ২. এ ছাড়া সার্বিক বিষয়ে তদন্তপূর্বক সুপারিশ প্রদান করার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং ৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর টার্ম সেমিস্টার ফাইনালসহ সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চলমান থাকবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা