৬ উইকেট নিয়েও দুশ্চিন্তায় বাংলাদেশ

ইদানীং খেলার বাইরেও আলাদা একটা লড়াই চলে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে। সাকিবের টাইমড আউটের পর থেকেই ক্রিকেটের নানা সংস্করণে এ ধারা অব্যাহত। এবার মনে হয় সুস্থ মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে লঙ্কানরা। টেস্ট ক্রিকেট বলেই হয়তো তাদের এই নমনীয়তা। চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার করা ৫৩১ রানের জবাব দিতে নেমে নিজেদের প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৭৮ রানে অলআউট হয়ে গেছে বাংলাদেশ। ৩৫৩ রানে পিছিয়ে থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশকে ফলো অনের লজ্জায় না ফেলে, টাইমড আউটের প্রতিশোধ না নিয়ে নিজেরাই আবার ব্যাট করতে নামে। অবশ্য লঙ্কানদের দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। টাইগার বোলারদের তোপে ১০২ রানেই ছয় উইকেট হারায় তারা। তাতে তেমন একটা চিন্তিতি নয় সফরকারিরা। কারণ এখনো ৪৫৫ রানে এগিয়ে। তাতেই দুশ্চিন্তা বাংলাদেশের।

সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের তৃতীয় দিন বাংলাদেশ ব্যাটারদের চরম ব্যর্থতার পর শেষ সেশনে বল হাতে আলো ছড়িয়েছেন দলের দুই পেসার হাসান মাহমুদ ও খালেদ আহমেদ। প্রথম ইনিংসে সফরকারিদের ৫৩১ রানের জবাবে ৮২ রানে শেষ ৯ উইকেট হারিয়ে ১৭৮ রানে অলআউট হয়ে ফলো-অনে পড়ে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল এক উইকেটে ৫৫ রান। জাকির হাসান ২৮ ও তাইজুল ইসলাম শূন্য রানে অপরাজিত ছিলেন। গতকাল তৃতীয় দিনের প্রথম এক ঘণ্টা শ্রীলঙ্কা বোলারদের দারুণভাবে সামাল দেন জাকির-তাইজুল। এ সময় টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান জাকির। হাফ-সেঞ্চুরি পর পেসার বিশ^ ফার্নান্দোর বলে বোল্ড হন ৮টি চারে ৫৪ রান করা জাকির। দলীয় ৯৬ রানে জাকির ফেরার পর দ্রুত আরো দুই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এতে ৯ রানের ব্যবধানে তিন ব্যাটারকে হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। জাকিরের পর তাইজুলকে ২২ রানে বিশ্ব এবং বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে এক রানে আউট করেন স্পিনার প্রবাথ জয়সুরিয়া।
১০৫ রানে চতুর্থ উইকেট পতনের পর বাংলাদেশকে চাপমুক্ত করার চেষ্টা করেন মুমিনুল হক ও সাকিব আল হাসান। কিন্তু ২১ রানে বেশি যেতে পারেনি এই জুটি। আম্পায়ার্স কলে আসিথা ফার্নান্দোর বলে লেগ বিফোর আউট হন ১৫ রান করা সাকিব। ক্রিজে এসে বাউন্ডারি দিয়ে রানের খাতা খোলার পরের ডেলিভারিতেই খোঁচা দিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ আউট হন লিটন দাস। আট নম্বরে নেমে একবার জীবন পেয়ে ৭ রানে বেশি করতে পারেননি শাহাদাত হোসেন। ১৪৮ রানে সপ্তম উইকেট হারিয়ে ফলো-অনের শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ।

লোয়ার অর্ডারে মেহেদি হাসান মিরাজ ৭ রানে আউট হলেও স্বীকৃত বাটারদের মধ্যে ক্রিজে টিকে ছিলেন মুমিনুল হক। টেস্ট মেজাজে শ্রীলঙ্কার বোলারদের সামলিয়ে শেষ পর্যন্ত আসিথার বলে লেগ বিফোর আউট হন। রিভিউ নিয়েও নিজের উইকেট বাঁচাতে পারেননি তিনটি চারে ৮৪ বলে ৩৩ রান করা মুমিনুল।
এরপর শেষ ব্যাটার হিসেবে খালেদ আহমেদ আউট হলে ১৭৮ রানে গুটিয়ে ফলো-অনে পড়ে বাংলাদেশ। এই নিয়ে টানা পাঁচ ইনিংসে ২০০-এর নিচে অলআউট হলো টাইগাররা। সবগুলোই ঘরের মাঠের টেস্টে। বল হাতে শ্রীলঙ্কার আসিথা চারটি, বিশ্ব ফার্নান্দো-লাহিরু কুমারা-প্রবাথ জয়সুরিয়া দু’টি করে উইকেট নেন। বাংলাদেশকে ফলো-অন না করিয়ে প্রথম ইনিংসে ৩৫৩ রানে এগিয়ে থেকে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেই বিপদে পড়ে শ্রীলঙ্কা। ওপেনার দিমুথ করুনারতœকে চার রানে বোল্ড করেন পেসার হাসান মাহমুদ। দুই রান করা কুশল মেন্ডিসের উইকেট ভাঙেন পেসার খালেদ আহমেদ।
তৃতীয় উইকেটে ৪৫ রানের জুটিতে শ্রীলঙ্কার লিড ৪০০ পার করেন ওপেনার নিশান মাদুশকা ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ। এই জুটিতে হাসানের বলে স্লিপে শাহাদাতকে ক্যাচ দিয়ে ৭ রানে জীবন পান ম্যাথুজ। দলীয় ৬০ রানে মাদুশকাকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন হাসান। পাঁচটি চারে ৩৪ রান করেন মাদুশকা। এরপর নিজের পরের দুই ওভারে আরো দুই উইকেট নেন অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা হাসান। দিনেশ চান্দিমালকে ৯ ও শ্রীলঙ্কার ইনফর্ম অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে এক রানে বিদায় দেন হাসান। পরপর তিন ওভারে হাসানের তিন উইকেট পতনের ধাক্কার পর খালেদের বলে ৯ রানে আউট হন কামিন্দু। এরপর দিনের বাকি ৩০ বলে অবিচ্ছিন্ন ১৩ রান যোগ করে মাঠ ছাড়েন ম্যাথুজ ও প্রবাথ জয়সুরিয়া। ম্যাথুজ তিনটি চারে ৩৯ ও জয়সুরিয়া তিন রানে অপরাজিত আছেন। বাংলাদেশের হাসান ৫১ রানে চারটি ও খালেদ ২৯ রানে দুই উইকেট নেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর : তৃতীয় দিন
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস : ৫৩১/১০
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৬৮.৪ ওভার ১৭৮/১০ (মাহমুদুল ২১, জাকির ৫৪, তাইজুল ২২, নাজমুল ১, মুমিনুল ৩৩, সাকিব ১৫, লিটন ৪, শাহাদাত ৮, মিরাজ ৭, খালেদ ১, হাসান ২*
বি্শ্ব ফার্নান্দো ২/৩৮, অসিথা ফার্নান্দো ৪/৩৪, লাহিরু কুমারা ২/১৯, প্রবাথ জয়সুরিয়া ২/৬৫)।
শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংস : ২৫ ওভার ১০২/৬ (করুনারতেœ ৪, মাদুশকা ৩৪, কুশল ২, ম্যাথুজ ৩৯*, চান্দিমাল ৯, ধনঞ্জয়া ১, কামিন্দু ৯, জয়সুরিয়া ৩*, খালেদ ২/২৯, হাসান ৪/৫১ ও সাকিব ০/২০)।