কায়রোয় আবার গাজার যুদ্ধবিরতি আলোচনা শুরু
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ০১ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০৫
- স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি ফ্রান্স মিসর ও জর্দানের
- আল শিফা হাসপাতালে ইসরাইলি হামলায় নিহত ৪ শতাধিক
- গাজার উদ্দেশে সাইপ্রাস ছেড়েছে ৩টি ত্রাণবাহী জাহাজ
ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে গতকাল রোববার মিসরের কায়রোয় নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। মিসরীয় সংবাদমাধ্যম আল-কাহেরা গতকাল জানিয়েছিল, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কাছ থেকে সবুজসঙ্কেত পাওয়ার দিন কয়েক পর কায়রোয় এ আলোচনা শুরু হচ্ছে। এএফপি ও আলজাজিরা।
মিসরের গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে বলে জানায় সংবাদমাধ্যমটি। গাজায় সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে আগের আলোচনায় অংশ নিয়েছিল মিসর, কাতার ও ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো সমঝোতা হয়নি। মধ্যস্থতাকারীরা আশা করেছিলেন, পবিত্র রমজান মাস শুরুর আগে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা সম্ভব হবে। কিন্তু রমজান মাসের অর্ধেকের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে, এখনো যুদ্ধ চলছে। গত শুক্রবার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু কাতারের দোহা ও মিসরের কায়রোয় নতুন করে যুদ্ধবিরতির আলোচনার বিষয়ে অনুমোদন দেন। নেতানিয়াহুর দফতর জানায়, তিনি এ বিষয়ে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধানের সাথে কথা বলেছেন। তবে মোসাদপ্রধান আলোচনায় অংশ নিতে দোহা বা কায়রোয় যাবেন কি না, তা জানানো হয়নি। শনিবার ইসরাইলের তেল আবিবের রাজপথে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা হামাসের হাতে বন্দীদের দ্রুত মুক্তির জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর দাবি তুলেছেন। এরপরই যুদ্ধবিরতি নিয়ে নতুন করে আলোচনার বিষয়টি জানা গেল।
তুর্কি সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি জানায়, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হাতে বন্দী ইসরাইলিদের বিনিময় চুক্তির বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিতে মিসরে গেছে ইসরাইলের একটি প্রতিনিধিদল। শনিবার ইসরাইলের একটি মিডিয়া আউটলেট চ্যানেল ১২ জানায়, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে বন্দিবিনিময় চুক্তির বিষয়ে আলোচনায় রোববার কায়রো যাবে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা শিন বেত এবং সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আমানের প্রতিনিধিদল। শুক্রবার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দোহা এবং কায়রোতে হামাসের সাথে পরোক্ষ আলোচনার অংশ নিতে তেলআবিবের প্রতিনিধিত্বকারী দলটি পাঠাতে সম্মত হয়েছিলেন। এদিন তার দেশ গাজায় বন্দিবিনিময় এবং দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতির বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে আলোচনা আবার শুরু করবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং বন্দী মুক্তির বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। তবে বারবার আলোচনায় বসলেও সুনির্দিষ্ট কোনো ফলাফলে পৌঁছাতে পারছে না গাজা যুদ্ধের দুই পক্ষ ইসরাইল ও হামাস।
স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি ফ্রান্স মিসর ও জর্দানের : আলজাজিরা জানায়, গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছে ফ্রান্স, মিসর ও জর্দান। কায়রোতে বৈঠকের পর তারা এ দাবি জানান। মিসর, ফ্রান্স ও জর্দানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা গাজায় ‘অবিলম্বে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি’ এবং হামাসের হাতে আটক সব বন্দীকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। শনিবার মিসরের রাজধানী কায়রোতে তিন কূটনীতিকের বৈঠকের পর এ আবেদন জানানো হয়।
এএফপির খবরে বলা হয়েছে, বৈঠকের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা দেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন সেজোর্নও। তিনি বলেন, তার সরকার জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধের ‘রাজনৈতিক’ নিষ্পত্তির জন্য একটি খসড়া প্রস্তাব পেশ করবে। তিনি আরো বলেন, সেই প্রস্তাবে ইসরাইলি-ফিলিস্তিন সঙ্ঘাত নিরসনে ‘দুই-রাষ্ট্র সমাধানের সব মানদণ্ড’ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। মূলত ইসরাইল-ফিলিস্তিন সঙ্কট নিরসনে দীর্ঘকাল ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দু’টি পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টিকে সমর্থন করে এলেও প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ইসরাইলি সরকার এর বিরোধিতা করছে।
আল শিফা হাসপাতালে ইসরাইলি হামলায় নিহত ৪ শতাধিক : আলজাজিরা আরো জানায়, গাজার আল-শিফা হাসপাতালে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় চার শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী, বাস্তুচ্যুত মানুষ, মেডিক্যাল কর্মীসহ চার শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছে ইসরাইল।
গাজার উদ্দেশে সাইপ্রাস ছেড়েছে ৩টি ত্রাণবাহী জাহাজ : রয়টার্স জানায়, গাজার উদ্দেশে সাইপ্রাস বন্দর ছেড়েছে তিনটি জাহাজ। শনিবার প্রায় ৩৩২ টন খাবার ও অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী নিয়ে লারনাকা বন্দর ছাড়ে জাহাজগুলো। সমুদ্রপথে প্রায় ৬০ ঘণ্টা চলার পর আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকে জাহাজগুলো অবরুদ্ধ গাজায় পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। মার্কিন দাতব্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডব্লিউসিকে) জানিয়েছে, জাহাজগুলোতে চাল, পাস্তা, ময়দা, লেবু, টিনজাত শাকসবজি এবং প্রোটিনজাত খাবার রয়েছে যা অন্তত ১০ লাখের বেশি খাবার প্রস্তুত করা জন্য যথেষ্ট। এছাড়া পবিত্র রমজান মাসে রোজা ভাঙার জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত খেজুর। গাজা উপত্যকায় সাহায্য পৌঁছানোর জন্য পশ্চিমা চাপের মুখে প্রায় ১৭ বছরের নৌঅবরোধ শিথিল করার পর এই মাসে দ্বিতীয়বারের মতো ত্রাণভর্তি জাহাজ এলো। মার্চের শুরুর দিকে প্রায় ২০০ টন ত্রাণ নিয়ে প্রথমবারের মতো গাজার উপকূলে আসে স্পেনের ওপেন আর্মস জাহাজটি। গাজাবাসীর জন্য ত্রাণ দিতে অর্থায়ন করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। আর একে জাহাজ দিয়ে সাহায্য করেছে স্পেনের দাতব্য সংস্থা ওপেন আর্মস। সমুদ্রপথে ত্রাণসহায়তাকে স্বাগত জানালেও, তা অপ্রতুল বলে মন্তব্য করেছে ত্রাণ সংস্থাগুলো। তারা ইসরাইলকে স্থলপথে আরো সাহায্য পৌঁছানোর অনুমতি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। গাজার উত্তরাঞ্চলের অধিবাসীরা জুলাইয়ের মধ্যে দুর্ভিক্ষের কবলে পড়বে বলে সতর্ক করেছে জাতিসঙ্ঘ। সেখানে যুদ্ধের কারণে প্রায় তিন লাখ মানুষ আটকা পড়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা