১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

শুধু ফ্যাসিস্ট নয়, বর্ণবাদীদের কবলেও পড়েছে বাংলাদেশ

স্বাধীনতা দিবসের আলোচনায় মির্জা ফখরুল
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিএনপির আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম : নয়া দিগন্ত -


বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশ শুধু ফ্যাসিস্টদের কবলেই পড়েনি, বর্ণবাদীদের কবলেও পড়েছে । আজকে যারা বিএনপি করে তাদের ঘর-বাড়ি দখল করে নেয়া হচ্ছে, জমি দখল করা হচ্ছে, ব্যবসা-বাণিজ্য দখল করে নেয়া হচ্ছে। তাদের ছেলে-মেয়েদেরকে চাকরির কোনো সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। এমনকি দুঃসম্পর্কের আত্মীয় হলেও বিএনপি হিসেবে চিহ্নিত করে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এটা বর্ণবাদ ছাড়া আর কিছু নয়।
গতকাল বুধবার দুপুরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশটাকে ক্ষমতাসীনরা দুই ভাগ করে ফেলেছে। একটা ভাগ হচ্ছে আওয়ামী লীগ, আরেকটা ভাগ হচ্ছে বিরোধী দল। এই অবস্থা তৈরি করে তারা এই দেশকে নিজেরাই সাম্প্রদায়িক একটা অবস্থা তৈরি করেছে। তারা আবার দাবি করে যে, সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে তাদের নাকি এই জিহাদ সব সময় অব্যাহত থাকবে। যারা সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করে, যারা নিজেরা গোষ্ঠী তৈরি করেছে, বর্ণবাদ সৃষ্টি করছে তাদের মুখে এ কথা শোভা পায়? শুধু কথা বলে মানুষের সম্পদ লুট করে, মানুষজনকে সর্বস্বান্ত করে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করা যায় না।

তিনি বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে যাচ্ছে, ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে, শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ধ্বংস করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন একটা অবস্থা তৈরি করেছে যেখানে স্বেচ্ছাচারিতা, অসামাজিক কার্যকলাপ ছাড়া সেখানে আর কিছু হচ্ছে না। যাদেরকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে তাদেরকে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এমনকি প্রাইমারি স্কুলগুলোতেও দলীয়করণ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। অর্থাৎ এক কথায় পুরো দেশকে তারা গিলে ফেলেছে।
তরুণ সমাজকে জেগে উঠার আহ্বান রেখে বিএনপি মহাসচিব বলেন, চলমান আন্দোলনে এত ত্যাগের পরেও আমার কাছে মনে হয় তরুণদেরকে আরো শক্ত করে জেগে উঠতে হবে, যুবকদেরকে জেগে উঠতে হবে। ২৮ তারিখের ঘটনার পরে আমার কাছে মনে হয়েছে যে, আমরা তরুণদেরকে বোধহয় সেভাবে নামাতে পারিনি। আমার কাছে মনে হয়েছে মানুষকে জাগিয়ে তোলা এখন আমাদের প্রধান কাজ। তিনি বলেন, মানুষকে আবারো সংগঠিত করতে হবে, জনগণকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, নিজের অধিকারের জন্য, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অবশ্যই রুখে দাঁড়াতে হবে।
সংগঠন শক্তিশালী করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চলমান আন্দোলন আরো জোরদার করার কথা বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, আজকের বাংলাদেশ ভিন্ন বাংলাদেশ। আজকে যে ভূ-রাজনীতি, সেটা সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে পরিচালিত হচ্ছে। শুধু স্বার্থ স্বার্থ আর স্বার্থ। নিজ নিজ দেশ তাদের স্বার্থ ছাড়া কোনো কিছু ভাবে না।
সেখানে মানবাধিকার, অন্য দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি যে শ্রদ্ধা-সম্মান সব কিছু ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, গাজায় ফিলিস্তিনে দীর্ঘ ৭ মাস ধরে নির্বিচারে গণহত্যা চলছে, অথচ প্রতিবেশী মুসলিম দেশগুলো এখন পর্যন্ত সেভাবে কথা বলছে না, গোটা বিশ্ব সেইভাবে কথা বলছে না। জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটা রেজুলেশন পাস হয়েছে গত মঙ্গলবার। তার পরে গাজায় বোমা মেরে প্রায় ১৫ জনকে হত্যা করেছে। আজকে ইউক্রেনে রাশিয়া আক্রমণ করেছে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, এবার সরকার অলিখিত বাকশাল কায়েম করেছে। বিশ্বের একটি নামীদামি নিউজ ম্যাগাজিন ‘টাইম ম্যাগাজিন’ বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের নাম দিয়েছে বাকশাল টু। সারা বিশ্ব বলেছে যে, এই সরকার জগদ্দল পাথরের মতো বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের ওপর চেপে বসেছে এবং তাদের ওপরে জুলুম-অত্যাচার-নির্যাতন করছে, বাংলাদেশের বিরোধী দলের বিরুদ্ধে লাখ লাখ মামলা দেয়া হয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক দলের ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেন, আপনারা ঐক্যবদ্ধ হোন, মোবাইলটা বাদ দিয়ে রাস্তায় নেমে আসুন। সেøাগান আর ভোটের মাধ্যমে কাজ হবে না, আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এই অবস্থার অবসান করতে হবে। জিয়াউর রহমান আমাদের আদর্শ। ছয় বছর রাষ্ট্র শাসন করার পরে তার ব্যাংকে একটা টাকাও নাই, কোনো জমি নাই, বাড়ি নাই, জীবন উৎসর্গ করে গেছেন দেশের জন্য। সেই নেতার আদর্শের মানুষজন আমাদের কি শুধু বসে বসে খালি সেøাগান দিলে হবে? দেশের ডাকে সাড়া দিয়ে রাস্তায় নামতে হবে।
স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনু, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বক্তব্য রাখেন।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement