১৭ মে ২০২৪, ০৩ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫
`


প্রবৃদ্ধি কমবে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জ

-


বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস
-প্রবৃদ্ধি টেকসই করতে শক্তিশালী সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ
-৫.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে চলতি অর্থবছর
-নির্বাচন সামনে রেখে অনিশ্চয়তা অর্থনীতিতে

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমে হবে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। আগামী অর্থবছর এই প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত হতে পারে বলে তারা পূর্বাভাস দিয়েছে। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য সরকার সাড়ে ৭ শতাংশের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সংস্থাটি মনে করছে, বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য তিনটি চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি রয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ অর্থনীতির অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। আগামী দিনেও উচ্চ মূল্যস্ফীতির ধারা অব্যাহত থাকতে পারে বলে মনে করছে তারা। অসমতা ও বৈষম্যও রয়েছে। তবে মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি নির্ভর করবে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য কেমন থাকে, তার ওপর। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তার আশঙ্কা রয়েছে। মূল্যস্ফীতি সহসা কমছে না।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রকাশ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্যগুলো প্রকাশ করা হয়। এতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ও ভুটানের জন্য বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক, চিফ ইকনোমিস্ট বার্নার্ড হ্যাভেন ও অর্থনীতিবিদ নাজমুস সাদাত খান। সঞ্চালনায় ছিলেন সংস্থাটির মেহরিন এ মাহবুব। উল্লেখ্য, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ দশমিক ১ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল সংস্থাটি।

বাংলাদেশের টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে অর্থনৈতিক সংস্কার জরুরি বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। কোভিড-১৯ মহামারির সঙ্কট থেকে বর্তমানে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। তবে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, আর্থিক খাতের দুর্বলতা, বৈশ্বিক চাপ এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে। যার ফলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ব্যাহত হচ্ছে। অর্থনীতিতে এখন বিভিন্ন ধরনের বাধা কাজ করছে। ফলে ঝুঁকিও ক্রমশ বাড়ছে। বিশ^ব্যাংক বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি বাড়ার চারটি কারণ চিহ্নিত করেছে। তা হলো, অভ্যন্তরীণ জ্বালানির মূল্য বেড়ে যাওয়া, দুর্বল মুদ্রানীতি, টাকার অবমূল্যায়ন ও বৈদেশিক মুদ্রা কমে যাওয়ায় আমদানি কমে যাচ্ছে। এই চার কারণেই বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। সংস্থাটি বলছে, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ ও মালদ্বীপে ৫ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। ২০২৩ সালে শ্রীলঙ্কায় প্রবৃদ্ধি ছিল ঋণাত্মক ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০২৪ সালে দেশটি ঘুরে দাঁড়াবে, প্রবৃদ্ধি হবে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। বাংলাদেশে দারিদ্র্য কমে ৫ শতাংশ হয়েছে। যা ২০১৬ সালে যা ছিল ৯ শতাংশ।

সর্বশেষ বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেটে বিশ^ব্যাংক বলছে, মুদ্রাস্ফীতি মোকাবেলায় মুদ্রা ও রাজস্ব নীতির মাধ্যমে সংস্কার করা, সেইসাথে আর্থিক খাতের দুর্বলতাগুলো দেশের প্রবৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য হ্রাসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। একটি একক বাজারভিত্তিক বিনিময় হার এবং আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহকে আকর্ষণ করতে ও অর্থপ্রদানের ভারসাম্য এবং রিজার্ভ জমাতে সহায়তা করবে।
আবদৌলায়ে সেক বলছেন, মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে পারলে এবং বহির্বিশ্বের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক করা সম্ভব হলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে। তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং টাকার অবমূল্যায়নের কারণে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ছে। মানুষের ভোগও চাপের মুখে পড়েছে। এ ছাড়া মজুরি বৃদ্ধির তুলনায় খাবারের দাম বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে মুদ্রানীতির কার্যকর ব্যবহারের গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে সুদের হারের সীমা পর্যায়ক্রমে তুলে দিতে হবে। এ ছাড়া ব্যাংকিং খাতের কার্যকর তদারকির মাধ্যমে আর্থিক খাতের ঝুঁকি কমানোর উদ্যোগ নেয়া উচিত।

 


আরো সংবাদ



premium cement