০৯ অক্টোবর ২০২৪, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ৫ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

ডেঙ্গুর ৬৩ শতাংশ মৃত্যু শক সিনড্রোমে

এক দিনে হাসপাতালে ভর্তি ২৯৯৩, মৃত্যু ১৪
রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে চলছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা : আবদুল্লাহ আল বাপ্পী -

ডেঙ্গুর ৬৩ শতাংশ মৃত্যু হয়েছে শক সিনড্রোমে এবং এক্সপান্ডেড ডেঙ্গু সিনড্রোমে মারা গেছে ২২ শতাংশ। অপর ১৫ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ও ডেঙ্গু কোমরবিডিটিতে। গত ৩ থেকে ৯ সেপ্টেম্বর এই সাত দিনে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মৃত্যুর কারণ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ এমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার। এদিকে গতকালও ডেঙ্গু আক্রান্তের ঊর্ধ্বগতি লক্ষ করা গেছে।

এবার চলতি বছরের মধ্যে সবচেয়ে আক্রান্ত ও হাসপাতালে ভর্তির তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গতকাল রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশে নতুন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে দুই হাজার ৯৯৩ জন এবং একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের। আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার বাইরে গতকাল মোট এক হাজার ৯৯৯ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। গতকালই প্রথম ঢাকার বাইরে ঢাকার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। যে ১৪ জন ডেঙ্গুতে মারা গেছে এদের মধ্যে ঢাকার বাইরের ছিল ছয়জন, ঢাকায় ছিল আটজন।

ঢাকার বাইরে অনেক বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত মানে ভবিষ্যতে সেখানে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আরো বাড়বে এবং মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে। কারণে গ্রামে চিকিৎসার জন্য যথেষ্ট হাসপাতাল কিংবা ডাক্তারও নেই। উপজেলা হাসপাতালে সীমিতসংখ্যক ডাক্তারকে পাওয়া যায়, এ অভিযোগ পুরনো। তা ছাড়া উপজেলা শহরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার যথেষ্ট ভালো সুযোগও গড়ে উঠেনি। ফলে এখনি মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে শেষ পর্যন্ত মেডিক্যাল হাসপাতালে কিংবা অবস্থা খারাপ হলে ঢাকায় চলে আসছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, ঢাকায় যারা ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিচ্ছেন এদের বিরাট একটি অংশ ঢাকার বাইরে থেকে আসছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কিংবা জেলা সদরের হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা রোগীদের সন্তুষ্ট করতে পারে না বলে তারা ঢাকায় চলে আসছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ এমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার গত সপ্তাহের ডেঙ্গু আক্রান্ত ও ডেঙ্গুতে শেষ পর্যন্ত মারা গেছে এমন তথ্য বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে, গত সাত দিনে দেশে ডেঙ্গুতে মোট ৯৮ জন মারা গেছে। এক সপ্তাহে মৃতদের ৫৬ জন ছিল নারী এবং ৪২ জন ছিল পুরুষ। আক্রান্তে পুরুষের সংখ্যা বেশি থাকলেও মৃত্যুতে নারীরা বেশি। ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে এমন নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছে ৪৬ থেকে ৫০ বছর বয়সীরা, আর পুরুষের মধ্যে বেশি মারা গেছে ২১ থেকে ২৫ বছর বয়সীরা। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গতকাল সকাল পর্যন্ত চলতি সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুতে মারা গেল ১৩৭ জন। চলতি বছর দেশে মোট মারা গেছে ৭৩০ জন এবং চলতি বছরে সারা দেশে রোগটিতে মৃত্যু হয়েছে ৭১৬ জনের।

চলতি বছর আক্রান্তদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এক লাখ ৩৭ হাজার ৭২৭ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ৬২ হাজার ২৪১ এবং ঢাকার বাইরে ৭৫ হাজার ৪৮৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে এখনো ৯ হাজার ৮৭১ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ভর্তি আছেন ৪ হাজার ২৯৭ জন এবং ঢাকার বাইরের ঢাকা বিভাগের বাকি জেলাগুলোসহ অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৫ হাজার ৫৭৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।

বরিশালে ডেঙ্গু জ্বরে যুবকের মৃত্যু, আক্রান্ত ৩৭৪
বরিশাল ব্যুরো জানায়, বরিশাল বিভাগে গতকাল সকাল ৮টার আগের ২৪ ঘণ্টায় সুজন (২৯) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে আক্রান্ত হয়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৭৪ জন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন ৫৬ জন। গতকাল রোববার বেলা ২টায় স্বাস্থ্য অধিদফতর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানা যায়।
মৃত সুজন বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বাসিন্দা। তিনি গত শনিবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বরিশাল শেরে-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাতেই তার মৃত্যু হয়।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের উপ-পরিচালক ডা: শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের ছয় জেলার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৩৭৪ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরিশালে ১২৪ জন, পটুয়াখালীতে ৬৮ জন, পিরোজপুরে ৬৩ জন, ভোলায় ৫৩ জন, বরগুনায় ৬২ জন ও ঝালকাঠিতে চারজন রয়েছেন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ১৬ হাজার ৯৭১ জন ডেঙ্গুরোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৫ হাজার ৮১৪ জন। মারা গেছেন ৫৬ জন। মৃতদের মধ্যে বরিশালে ৩৫ জন, ভোলায় সাতজন, বরগুনায় পাঁচজন, পিরোজপুরে পাঁচজন ও পটুয়াখালীতে চারজন রয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement