২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গাজীপুর ও বরিশাল নিয়ে চিন্তিত আ’লীগ

৫ সিটি নির্বাচন
-

পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা জল্পনাকল্পনা। তবে সিটি নির্বাচনে দলীয়ভাবে মাঠের প্রধানবিরোধী দল বিএনপি অংশ না নেয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ কিছুটা কম। বিএনপিবিহীন নির্বাচনেও স্বস্তি পাচ্ছে না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। রাজশাহী, খুলনা ও সিলেট নিয়ে নির্ভার থাকলেও বরিশাল ও গাজীপুরের জয় নিয়ে কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়েছে ক্ষমতাসীনরা। জানা গেছে, এখনো দলের মধ্যে অনৈক্য দূর হয়নি। বরিশাল ও গাজীপুরে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এই দুই সিটিতে দলীয় কোন্দল মীমাংসা করে কিভাবে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখা যায় সে বিষয়েও কেন্দ্রীয় নেতারা নানা কৌশল নির্ধারণ করছেন।

পাঁচ সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের জয় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম নয়া দিগন্তকে বলেন, নির্বাচনে জয়লাভই আমাদের লক্ষ্য থাকে। তবে অতীতের মতো এবারো আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে নজর রাখছি। নির্বাচনে জনগণ নির্ভয়ে ও স্বাচ্ছন্দ্যে যাতে ভোট দিতে পারে সেজন্য চেষ্টা থাকবে। নেতাকর্মীদেরও সেভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ভোটারদের ভোট প্রয়োগের মধ্য দিয়ে আমরা নির্বাচনে বিজয়ী হতে চাই।

পাঁচ সিটির মধ্যে এ মাসের ২৫ তারিখে গাজীপুরের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই সিটিতে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো: আজমত উল্লা খান। সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন ধরে দলীয় কোন্দলে বিপর্যস্ত গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ। এখানকার সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমের মধ্যে দ্বন্দ্বও দীর্ঘদিনের। গতবার দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম এবার দলীয় মনোনয়ন থেকে ছিটকে পড়ে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। শেষমেশ বাছাই পর্বে ঋণখেলাপির দায়ে জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে তার মায়ের মনোনয়ন। অবশ্য গত সিটি নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলম দলীয় মনোনয়ন পেলে তার নির্বাচনী এজেন্ট করা হয় আজমত উল্লা খানকে।

যদিও ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটির প্রথম নির্বাচনে মেয়র পদে আজমত উল্লা খানকে আওয়ামী লীগ সমর্থন জানালে জাহাঙ্গীর আলম বিদ্রোহী প্রার্থী হন। তখন আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হয়। সেই জাহাঙ্গীর আলমকে গতবার মনোনয়ন দিয়ে আওয়ামী লীগ জয় পেয়েছিল। ফলে স্থানীয় রাজনীতিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল দৃশ্যমান থাকায় এ নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়া আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। এ জন্য দলীয় প্রার্থীকে জিতিয়ে আনার জন্য ২৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক টিম গঠন করা হয়েছে। যুবলীগও নির্বাচনী প্রচারণার জন্য পৃথক টিম গঠন করেছে।

খুলনা ও বরিশাল সিটিতে আগামী ১২ জুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। খুলনায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। আর বরিশাল সিটিতে মেয়র পদে পরিবর্তন করে বর্তমান মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর পরিবর্তে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তার চাচা আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতকে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, খুলনায় সহজ জয় পেলেও বরিশালে জেতা কঠিন হয়ে পড়বে। চাচা-ভাতিজার অভ্যন্তরীণ মন কষাকষির পাশাপাশি ছাত্রলীগের সাবেক প্রভাবশালী কয়েকজন নেতার বিরোধিতা এখন সেখানকার মানুষের মুখে মুখে। এ ছাড়াও মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করায় বরিশালে সাদিক আব্দুল্লাহকে ঘিরে একটি বলয় তৈরি হয়েছে। ওই বলয়কে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামানো অনেকটা কঠিন হয়ে পড়বে।


আগামী ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেট সিটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। রাজশাহী সিটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন এবং সিলেটে মনোনয়ন পেয়েছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় রাজশাহী সিটিতে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন সহজ জয় পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আর সিলেটে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনে অংশ না নিলে সেখানেও জয়ের সম্ভাবনা বেশি রয়েছে।

বরিশাল ও গাজীপুরের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কিছু সমস্যা থাকে। তবে সেগুলো নিরসন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। দলের যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল তা শেষ পর্যন্ত থাকে না। এটা আওয়ামী লীগের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন করার মধ্য দিয়েই প্রত্যেক জায়গায় নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামবে এবং আমাদের প্রার্থীই বিজয়ী হবে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রবীণ রাজনীতিবিদ অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন নয়া দিগন্তকে বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন বা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটাররা সাধারণত প্রার্থীর ইমেজ দেখে ভোট দেয়। আর জাতীয় নির্বাচনে যেহেতু ক্ষমতার পালাবদলের একটি বিষয় থাকে, সেহেতু এখানে পুরোপুরি দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে ভোটাররা ভোট দিয়ে থাকে। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর জয়-পরাজয় জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপক ভিত্তিতে প্রভাব পড়ে না। তবে কিছুটা প্রভাব পড়ে।

 


আরো সংবাদ



premium cement