১৮ মে ২০২৪, ০৪ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫
`


কমে যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ

-

-আকুর দায় পরিশোধ করতে হবে চলতি সপ্তাহে
-রিজার্ভ ধরে রাখার নানা চেষ্টা

চলতি সপ্তাহেই এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায় পরিশোধ করতে হবে প্রায় সোয়া বিলিয়ন ডলার। পাশাপাশি বিপিসির জ্বালানি তেল, বিসিআইসির সারসহ সরকারের অত্যবশ্যকীয় পণ্য আমদানি ব্যয় মেটাতে সরকারি ব্যাংকগুলোকে রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করতে হবে। গতকালও ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করা হয়েছে ৭ কোটি ৮০ লাখ। সবমিলেই চলতি সপ্তাহ শেষেই আরেক দফা কমে যাবে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ। গতকাল বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ছিল ৩৩.৭৮ বিলিয়ন ডলার। সপ্তাহ শেষে তা ৩২ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এর ফলে আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী রফতানি উন্নয়ন তহবিলসহ (ইডিএফ) বিভিন্ন তহবিলে রিজার্ভ থেকে জোগান দেয়া অর্থ বাদ দিলে ব্যবহারযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ২৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে যেতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
জানা গেছে, প্রতি দুই মাস পর পর আকুর দায় পরিশোধ করতে হয়। আকু হলো আন্তঃদেশীয় এক লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। আকুর মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার লেনদেনের দায় পরিশোধ করা হয়। ইরানের রাজধানী তেহরানে আকুর কেন্দ্রীয় কার্যালয়।


বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত জুলাই-আগস্ট ১.৭৩ বিলিয়ন ডলার আকুর দায় পরিশোধ করতে হয়। আর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর আমদানি দায় পরিশোধ করতে হয় ১.৩৫ বিলিয়ন ডলার। ওই সময় বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ কমে ৩৪.৪৭ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে গিয়েছিল। আর আইএমএফ হিসাব অনুযায়ী তা নেমেছিল ২৬ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদার চেয়ে সরবাহ কম হওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে সরকারি কেনাকাটায় বিশেষ করে জ্বালানি তেল, সার, বীজসহ অন্যান্য অত্যবশ্যকীয় পণ্য আমদানিতে সরকারি ব্যাংকগুলোকে ডলার সরবরাহ করতে হয়। গতকালও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৭ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এভাবেই বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ না বেড়ে বরং কমে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ছিল প্রায় ৪৬ বিলিয়ন ডলার। গত ২৮ ডিসেম্বরে তা কমে নেমেছে ৩৩.৮৩ বিলিয়ন ডলার।


গতকাল তা আরো কমে নেমেছে ৩৩.৭৮ কোটি ডলার। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। যেমন স্বল্পমেয়াদি আমদানি ব্যয় পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। গ্রিন ট্রান্সফারমেশন ফান্ড বা জিটিএফ থেকে অর্থ ছাড় সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। এ তহবিল থেকে বৈদেশিক মুদ্রা তথা ডলার ও ইউরোর মাধ্যমে অর্থ ছাড় করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি রফতানি উন্নয়ন তহবিল বা ইডিএফ বিকল্প ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়েছে।
এ তহবিল থেকে রফতানিকারকরা স্থানীয় মুদ্রায় স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে ডলার কিনে ব্যাক টু ব্যাক এলসির দায় পরিশোধ করতে পারবেন। যা আগে ইডিএফ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় সরবরাহ করা হতো। এ ছাড়া আকুর দায় প্রায় ১.৭ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পরিশোধ করতে হতো। কিন্তু বাকিতে পরিশোধের সুযোগ দেয়ায় এ দায় ১.১২ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হচ্ছে, যা চলতি সপ্তাহে ছাড় করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে। এসব পদক্ষেপ না নিলে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ আরো কমে যেত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশে অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া বিলাসী পণ্য আমদানি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে ডলার সংস্থান করতে না পারায় শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও আগের মতো ব্যাংকগুলোকে ডলার সরবরাহ করছে না।
সবমিলেই এলসি খোলার হার অর্ধেকে নেমে গেছে। এর পরও ডলার সঙ্কট কাটছে না। বকেয়া পণ্য আমদানির দায় পরিশোধ করতে সামনে আরো চাপ বাড়বে। যে হারে রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় আসছে তাতে চাহিদার চেয়ে ঘাটতি থাকবে। এ কারণে সামনে ডলার সঙ্কট কাটবে না বরং বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল