প্রাণহানি আর সহিংস ভোট চসিকে
বাইরে জটলা ভেতরে ফাঁকা; নারী এজেন্টের শ্লীলতাহানি; ভোটবিমুখ অধিকাংশ মানুষ- চট্টগ্রাম ব্যুরো
- ২৮ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০
দুইজনের প্রাণহানি, বিভিন্ন কেন্দ্রে সরকার সমর্থকদের অভ্যন্তরীণ বিরোধে দফায় দফায় সংঘর্ষ-গুলিবিনিময়, ককটেল বিস্ফোরণ, কয়েকটি স্থানে বিএনপি সমর্থকদের সাথে সরকার সমর্থকদের সংঘর্ষ, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধাদান, বিএনপি সমর্থক এজেন্টদের বের করে দেয়া, ইভিএমে ভোটের গোপন কক্ষে সরকার সমর্থকদের হস্তক্ষেপের মধ্য দিয়ে গতকাল বুধবার শেষ হয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচন। ভোটের আগের রাতেই নগরীর বিভিন্ন অলি-গলিতে ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক ছড়ানো, সাধারণ ছুটি ঘোষণা না করাসহ ভোট প্রদানের মাধ্যমে গণরায়ের প্রতিফলনে আশ্বস্ত হতে না পেরে অধিকাংশ ভোটারই ভোটকেন্দ্রে যাননি। ভোটকেন্দ্রে যারা গেছেন তাদের অনেকেই শাসক দল সমর্থক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে হেনস্তার শিকার হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ফলে ভোটের প্রতি মানুষের অনাস্থা আরো প্রবল হয়েছে।
সকাল ৮টায় ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্রে একযোগে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ভোট গ্রহণ শুরু হয় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। চলে টানা বিকেল ৪টা পর্যন্ত। অতীতে নির্বাচন একটি উৎসব হিসেবে বিবেচিত হয়ে ফজরের নামাজের পরপরই ভোটাররা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে যেত ভোট দেয়ার জন্য। কিন্তু সেই চিরচেনা রূপ দেখা যায়নি। ভোটারদের কেন্দ্রমুখী হওয়ার পরিবর্তে অনেকটাই কেন্দ্র বিমুখ দেখা যায়। ভোট গ্রহণের সর্বশেষ সময় পর্যন্ত প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে বিপুলসংখ্যক সরকার সমর্থক যুবককে দেখা গেছে, ফলে ভোটাররা কেন্দ্রে যাওয়ার সাহস করেননি। কোনো কোনো কেন্দ্রে বিরোধী প্রার্থীর মহিলা এজেন্টকে হেনস্তার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ আর প্রাণহানি : নির্বাচন চলাকালে নগরীর বিভিন্নস্থানে ব্যাপক সহিংসতা হয়। সহিংসতায় নিহত হয়েছেন দুই প্রার্থীর দুই সমর্থক। নগরের পাহাড়তলী থানাধীন পশ্চিম নাছিরাবাদ বার কোয়ার্টার এলাকায় সকাল সাড়ে ৮টায় ভাইয়ের হাতে খুন হয়েছেন ভাই। দুই ভাই দুই কাউন্সিলর প্রার্থীকে সমর্থন করতেন। পুলিশ জানিয়েছে, দুই ভাইয়ের মধ্যে আগে থেকে বিরোধ ছিল। নিহতের নাম নিজাম উদ্দীন মুন্না। অভিযুক্ত তার ভাই সালাউদ্দীন কামরুল। তাদের মধ্যে নিজাম উদ্দীন মুন্না সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবের আহমদের সমর্থক আর অভিযুক্ত সালাউদ্দীন কামরুল আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুল আমিনের সমর্থক। অপর দিকে ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের ঝাউতলা এলাকায় নিহত ভোটারের নাম আলাউদ্দিন (২৫)। তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থী মাহমুদুর রহমানের কর্মী। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঝাউতলার ইউসেফ আমবাগান স্কুলকেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে লাগা সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের ছোড়া গুলিতে নিহত হন তিনি। এ হত্যার জন্য সেই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী ওয়াসিম চৌধুরীর অনুসারীদের দায়ী করা হচ্ছে। এ দিকে ছেলে মারা যাওয়ার খবরে তার মা আছিয়া বেগম স্ট্্েরাক করে মারা গেছেন। সকালে ভোট গ্রহণ শুরুর আগেই বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দখলে চলে যায় ১৩নং পাহাড়তলী ওয়ার্ডের তিন ভোটকেন্দ্র। এ ওয়ার্ডের আমবাগান ইউসেপ স্কুল, ঝাউতলা ওয়্যারলেস স্কুল ও পাহাড়তলী কলেজকেন্দ্র তিনটিতে অস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্যে মহড়া দিতে দেখা গেছে।
এ দিকে লালখান বাজার ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীর অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে তিন পক্ষের অন্তত ২১ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সেখানে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। বিএনপি সমর্থিত সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম মনি অভিযোগ করেন, লালখান বাজার ওয়ার্ডের ১৪টি কেন্দ্রের মধ্যে সবগুলো দখল করে নেয় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকজন। তারা বিএনপির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর এজেন্টকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। ভোটারদের মারধর করে। বেলা ১১টার দিকে মনোয়ারা বেগম মনি লালখান বাজার মোড়ে তার সমর্থকদের নিয়ে রাস্তায় বসে পড়েন। তিনি পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
সকাল থেকে ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবুল হাসনাত বেলাল এবং বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর এফ কবির মানিকের অনুসারীদের মধ্যে শহীদনগর সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র ও শহীদনগর সিটি করপোরেশন বালক উচ্চবিদ্যালয় দখল নিয়ে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সময় বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকাগুলির শব্দ শোনা গেছে। থেমে থেমে সংঘর্ষে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশের সামনে সংঘর্ষ চললেও তাদেরকে নির্বিকার দেখা গেছে। ওই কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আবদুল হালিম শাহ আলম বলেন, কোনো কেন্দ্রেই মেয়র ও আমার এজেন্ট ঢুকাতে পারিনি। তারা আমাকেও শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছে। আমাদের ১৫ জন আহত হয়েছে।
বেলা ২টার দিকে আকবর শাহ থানাধীন বিশ^ কলোনির পি ব্লক কোয়াট স্কুল ভোটকেন্দ্র দখলে নিতে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর অনুসারীদের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়। আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী আফছার মিয়ার অনুসারীরা গুলিবর্ষণ করে বলে অভিযোগ উঠে। এ সময় হাসান নামে বিদ্রোহী কাউন্সিরর প্রার্থী জহুরুল আলম জসিমের এক অনুসারী আহত হন। বিকেলে জসিমকে পুলিশ গ্রেফতার করে। ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুল কাদের সমর্থকদের সাথে নজরুল ইসলাম বাহাদুর অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়েছে সকাল পৌনে ১২টার দিকে। এ সময় ফাঁকা গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। ওই কেন্দ্রের একটি বুথে ভোটার ছিল ৩৯২ জন। বেলা ১টায় ভোট পড়েছে মাত্র ২৬টি। আব্দুল কাদেরের স্ত্রী নুসরাত জানান নয়া দিগন্তকে বলেন, আব্দুল কাদেরের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। নারী এজেন্টদের মারধর করা হয়েছে। এটা প্রহসনের নির্বাচন।
৯, ১০ ও ১৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী বিএনপি নেত্রী সখিনা বেগমকে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর লোকজন কুপিয়ে আহত করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেলা ১টার দিকে আকবরশাহ থানাধীন নিউ মনসুরাবাদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সখিনা বেগমের অভিযোগ, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থী তাসলিমা বেগম, নূরজাহান রুবী ও আবিদা আজাদের অনুসারীরা তাকে কুপিয়ে আহত করেছে। এ ব্যাপারে তিনি আকবর শাহ থানায় মামলা করতে গেলে থানার ওসি জহির হোসেন গ্রহণ করেনি।
পাহাড়তলী রেলওয়ে হাসপাতাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কেন্দ্রে সকাল ১০টায় গিয়ে দেখা গেছে কেন্দ্রের বাইরে শতাধিক ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মী অবস্থান করছে। কেন্দ্রের ভেতরে কোনো ভোটার নেই। বাইরে ভোট দিতে আসা লোকজনকে মারধর করতে দেখা যায়। কেন্দ্রে বেলা ১২টার দিকে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়।
দামপাড়ায় পুলিশ লাইন্স ভোটকেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থীর অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় অন্তত চারজন আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সকাল ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযোগ উঠেছে, বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল হালিম পুলিশ লাইন্স ভোটকেন্দ্রে মিছিল নিয়ে প্রবেশ করেন। এ সময় তাদের সাথে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হাসনাত বেলালের কর্মীদের মারামারি হয়।
৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডে বিএনপির মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী মুহাম্মদ হাসান লিটনকে ঘর থেকেই বের হতে দেয়নি পুলিশ। দুপুর ৩টা পর্যন্ত তিনি পূর্ব ষোলশহর খাজা রোড এলাকার বাসা থেকে বের হতে পারেননি। তিনি অভিযোগ করেন, এক পুলিশ কর্মকর্তা ঘরের সামনে গিয়ে তাকে গালি দিয়ে বলেন, খানকির পোলা তুমি যদি কেন্দ্রে যাও সোজা তুলে নিয়ে যাবো।
বেলা ১২টা ২০ মিনিটে পাঠানটুলী খান সাহেব সরকারি বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মোহাম্মদ জাবেদ বুথের মধ্যে ঢুকে বসে রয়েছেন। এ সময় তার সাথে প্রায় ২০ জন ছিলেন। কেন্দ্রে সাংবাদিক প্রবেশ করতে দেখে জাবেদ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। তিনি বলেন, ডিসি বলেছেন, সাংবাদিকরা যেন কেন্দ্রে প্রবেশ না করেন।
হামজারবাগ রহমানিয়া স্কুল কেন্দ্রে সকাল ১০টার দিকে দেখা যায় বাইরে উঠতি বয়সের শতাধিক ছেলে চারটি গ্রুপ করে স্কুলের সামনে বসে আছে। কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, ভোটার শূন্য। নারীর বুথে কয়েকজন যুবক দাঁড়িয়ে আছে। মুরাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ভোটারের উপস্থিতি না থাকলেও উঠতি যুবকদের কেন্দ্র পাহারা দিতে দেখা গেছে।
বেলা ১১টার পর কোতোয়ালি থানার ব্রিক ফিল্ড রোডে পাথরঘাটা বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। এ দিকে ঘটনার একপর্যায়ে ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে কয়েক শ’ লোক হামলা চালায়। এ সময় তারা ভেতরে ঢুকে ইভিএম ভাঙচুর করে। ভোটকেন্দ্রে হামলা এবং ভাঙচুরের কারণে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। এ ঘটনার পর ওই ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মোহাম্মদ ইসমাইল বালীকে আটক করে পুলিশ। তাকে কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে সকাল ৮টায় আসাদগঞ্জ সোবহানিয়া মাদরাসার ভোটকেন্দ্রে বিএনপির এজেন্ট হিসেবে গেলে ইসমাইল বালীর ভাগিনা আবু তাহের টারজেন্টকে দুর্বৃত্তরা ছুরিকাঘাত করে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। বিএনপির দাবি, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা তাকে ছুরিকাঘাত করে।
জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে আসছেন : রেজাউল করিম চৌধুরী
চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী সকালে বহদ্দারহাটের এখলাসুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেন। ভোট দিয়েই তিনি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী জানিয়ে বলেন, জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে আসছেন, দিনভর সুষ্ঠুভাবেই ভোট হবে। জয়ের প্রত্যাশা করলেও নির্বাচনের ফল যাই হোক তা মেনে নেবেন বলেও জানান তিনি।
এ সময় তার সাথে ছিলেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ নেতারা।
এ সময় বিএনপির এজেন্টদের গ্রেফতার-হয়রানির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি অভিযোগের পার্টি। সাংগঠনিক অবস্থার কারণে তাদের লোক নেই। সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে এজেন্ট দিতে পারেনি। এজেন্ট দেয়ার লোক না থাকলে কেন্দ্রে এজেন্ট থাকবে কোত্থেকে।
এজেন্ট ঢুকতে না দেয়া ও বের করে দেয়ার অভিযোগ ডা: শাহাদাতের
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট ডাকাতির নগ্নতা জনগণ প্রত্যক্ষ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ডা: শাহাদাত হোসেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর বাকলিয়ার সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজকেন্দ্রে ভোট দেয়ার পর তিনি এই অভিযোগ করেন। তিনি জানান ভোটের পরিবেশ প্রার্থী হিসেবে আমার জন্য এক রকম, সাধারণ ভোটারদের জন্য ভিন্ন রকম। ১৮নং পূর্ব বাকলিয়া এবং ১৯নং দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্রগুলোতে কাউকেই ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্রের অধিকাংশতেই ধানের শীষের এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হয়নি, আবার যেসব কেন্দ্রে এজেন্টরা ঢুকেছিল তাদের বের করে দেয়া হয়েছে। এমনকি ধানের শীষের মহিলা এজেন্টদের হেনস্তার পাশাপাশি তাদের শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়ার মতো জঘন্য ঘটনাও ঘটেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। ভোটকেন্দ্রের বাইরে অনেক লোকের উপস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, যে বুথে আমি ভোট দিয়েছি, সেই বুথে ৩৩৬ ভোটারের মধ্যে আড়াই ঘণ্টায় ভোট পড়েছে মাত্র ৯টি। তাতে প্রমাণিত হয়, বাইরে বহিরাগতরা অবস্থান করছে এবং সাধারণ ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে দিচ্ছে না। ভোটাররা যাতে কেন্দ্রে না আসতে পারে সেজন্য রাষ্ট্রযন্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সাথে মিলে যত ধরনের কৌশল নেয়া দরকার সব নিয়েছে। প্রশাসনযন্ত্র, রাষ্ট্রযন্ত্র এবং আওয়ামী লীগ এখন একাকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, কাউকে যে কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না সে বিষয়টি ১৮ ও ১৯ নং ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটকে জানানো হলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।
ভোটকেন্দ্রের বাইরে জটলা ভেতরে ফাঁকা : সরেজমিন দেখা যায়, সকাল ৮টায় চট্টগ্রাম আঞ্চলিক লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণকেন্দ্রের ভেতরে দু’টি ভোটকেন্দ্র (৪০১ ও ৪০২) থাকলেও কেন্দ্রের প্রবেশ মুখে নৌকার ব্যাজধারী ১৫/২০ জন লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। এই দু’টি পুরুষ ভোটকেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা পাঁচ হাজার ৬৬১ জন। কেন্দ্রে প্রবেশ করে দেখা যায়, সকাল ৮টা ২০ মিনিট পর্যন্ত উভয় কেন্দ্রে ১০-১২ জন ভোট দিতে এসেছেন। ৪০২ নং ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী আ হ ম মিজবাহ উদ্দিন জানিয়েছেন ৯টি বুথের সব ক’টিতে সরকার সমর্থক মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর এজেন্ট রয়েছে। ২টি বুথে ধানের শীষের এজেন্ট থাকার কথাও তিনি জানান। পার্শ্ববর্তী ৪০১ নং ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা অনিমেষ মজুমদার জানান, এই কেন্দ্রের সাতটি বুথে তখন পর্যন্ত ধানের শীষ প্রতীকের কোনো পোলিং এজেন্ট আসেননি।
সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে কাজির দেউরি সরকারি প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ভেতরে দু’টি মহিলা ভোটকেন্দ্রের মোট তিন হাজার ৩৮১ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন মাত্র ১৯ জন। এই দু’টি ভোটকেন্দ্রেও ধানের শীষের পোলিং এজেন্ট ছিল না। ভোটকেন্দ্রের বাইরে শাসক দলের নেতাকর্মীরা সড়কে জটলা পাকিয়ে অবস্থান করায় সাধারণ ভোটারদের মাঝে ভীতি কাজ করছে, ফলে ভোটাররা কেন্দ্রমুখী নয় বলে স্থানীয়রা জানান। তা ছাড়া রাতে নগরীর বিভিন্ন অলিগলিতে ফাঁকা গুলি ছোড়ে ভীতির সঞ্চার করা হয়েছে বলেও কোনো কোনো ভোটার নাম প্রকাশ না করার শর্তে নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন। এ দিকে বিএনপির সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির এজেন্টদের অনেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে, আবার অনেককে এলাকা ছাড়া করা হয়েছে।
২১ নম্বর জামালখান ওয়ার্ডের সরকারি ন্যাশনাল প্রাইমারি স্কুলে দেখা যায় কেন্দ্রের বাইরে বিপুল লোকজন থাকলেও ভেতরে ভোটার উপস্থিতি একেবারেই নগণ্য। এই কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী এবং সরকারি দল সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের এজেন্ট দেখা গেলেও বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র ও বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের কোনো এজেন্ট দেখা যায়নি।
২২ নম্বর এনায়েত বাজার ওয়ার্ডের এনায়েত বাজার মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজকেন্দ্রেও একই অবস্থা দেখা যায়। কলেজ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে বিএনপি সমর্থিত মিষ্টি কুমড়া প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী এম এ মালেক ভোট শুরুর আধা ঘণ্টার মধ্যেই অভিযোগ করেন, কেন্দ্র থেকে তার পুরুষ ও মহিলা এজেন্টদের সবাইকে বের করে দেয়া হয়েছে।
আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের কদমমোবারক এমওয়াই উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি একেবারেই কম ছিল।
এমওয়াই উচ্চবিদ্যালয় ও এমইএস উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রেও বিএনপি প্রার্থীর কোনো এজেন্ট ছিল না। ভোট গ্রহণ শুরুর ২ ঘণ্টা পর সকাল ১০টার দিকে নগরীর ১৬নং চকবাজার ওয়ার্ডের কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন মহিলা কলেজ, কাতালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজসহ কয়েকটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে যুবলীগ-ছাত্রলীগ কর্মীদের জটলা দেখা গেলেও দেখা মিলেনি ভোটারের।
কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন মহিলা কলেজ ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটার তিন হাজার ১৬৬ জন। তবে সকাল ১০টা পর্যন্ত এই কেন্দ্রে ৩০টির মতো ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত কর্মকর্তারা। এই কেন্দ্রে মাত্র দু’জন ভোটারের দেখা মিললেও কেন্দ্রের বাইরে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের জটলা দেখা গেছে।
কাতালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা পিকলু দাশ সকাল সোয়া ১০টার দিকে জানান, এই ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটার দুই হাজার ৮৪১ জন। শীতের কারণে সকালে ভোটার উপস্থিতি কম। হয়তো দুপুরের দিকে সবাই আসবেন। এই কেন্দ্রেও ভোটারের কোনো লাইন দেখা যায়নি। তবে বাইরে ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের জটলা দেখা গেছে।
হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ কেন্দ্রে মোট এক হাজার ৭২৩ জন ভোটার রয়েছেন বলে জানান এই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আজমল হুদা। শুধু নারীদের এই ভোটকেন্দ্রের বুথ ঘুরে একজন ভোটারেরও দেখা মিলেনি। ছিলেন না বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের কোনো এজেন্ট।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা