১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলকদ ১৪৪৫
`


না’গঞ্জে মাদরাসাছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা : বিধবাকে গণধর্ষণ

গাজীপুরে পার্লার ব্যবসায়ী; ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্কুলছাত্রী; বরিশালে কলেজছাত্রী; যশোরে গৃহবধূ ধর্ষিত
-

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় এক মাদরাসাছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া এক বিধবা গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। অন্য দিকে গাজীপুরে পার্লার ব্যবসায়ী নারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় স্কুলছাত্রী, বরিশালের উজিরপুরে কলেজছাত্রী এবং যশোরের ঝিকরগাছায় গৃহবধূকে ধর্ষণ করা হয়েছে।
মাদরাসাছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা
আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় তানজিনা আক্তার (১৪) নামের এক মাদরাসাছাত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা করে বাড়ির পাশে একটি গর্তে ফেলে দেয় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। তবে পুলিশ বলছে কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। গোপালদী পৌরসভার রামচন্দ্রদী এলাকা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার নিহতের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
তানজিনা আক্তার আড়াইহাজার উপজেলার রামচন্দ্রদী এলাকার মাটি কাটার শ্রমিক আফতাব উদ্দিন ওরফে আকতার হোসেনের মেয়ে। সে স্থানীয় কওমি মাদরাসার ছাত্রী।
নিহতের বাবা আকতার হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার ফজর নামাজ পড়তে আমরা সবাই ঘুম থেকে উঠি। একই সময় তানজিনা আক্তারও নামাজ পড়তে উঠে। নামাজের পর মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে আশপাশে খুঁজে বেড়ালেও তাকে পাওয়া যায়নি। সকালে তাদের বাড়ির পাশে একটি গর্ত তানজিনার লাশ দেখতে পায়। তানজিনাকে কে বা কারা হত্যা করে লাশটি গর্তে ফেলে দেয়।
আড়াইহাজার থানার গোপালদী তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আজহার উদ্দিন পরিবারের বরাত দিয়ে জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে কে বা কারা তানজিনাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে তাদের বাড়ির পাশে একটি গর্তে লাশটি ফেলে দিয়ে যায়। সংবাদ পেয়ে দুপুরে নিহতের লাশ উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়। তিনি আরো জানান, তানজিনাকে পরিকল্পিতভাবে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। হত্যাকারীকে গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বিধবা নারী গণধর্ষণের শিকার : অন্য দিকে নারায়ণগঞ্জ আড়াইহাজার উপজেলায় দুই সন্তানের জননী বিধবা (৪০) নারী গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এক রাতে ছয়জন ওই বিধবা নারীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ঘটনায় আলী আকবর (৫০) নামে একজনকে গতকাল গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনি ওই এলাকার মৃত বছির উদ্দিনের ছেলে। এ ঘটনায় গণধর্ষণের শিকার বিধবা নারী বাদি হয়ে আলী আকবরকে প্রধান আসামি করে ছয়জনের বিরুদ্ধে আড়াইহাজার থানায় ধর্ষণ মামলা করেন।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কায়েমপুর এলাকার দুই সন্তানের জননী বিধবা নারী একই উপজেলার বিনাইচরের ভাই ভাই স্পিনিং মিলের শ্রমিক। গত ৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় ওষুধ আনতে দোকানে গেলে আলী আকবর ওই নারীকে দোকানের শাটার বন্ধ করে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরে ওই নারী দোকান থেকে বের হওয়ার পর বাইরে থাকা একই এলাকার মোস্তফা (৫৫), আনারুল (৪০) ও লিটন (৩২) পুকুর পাড়ে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে লিটন ফোন করে শাহীন (৩২) ও তরিকুল (৩৪) ডেকে এনে তারা নারীকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যেতে চায়। এতে রাজি না হওয়ায় শাহীন ও তরিকুল নারীকে জোর করে আলী হোসেনের নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে নিয়ে ধর্ষণ করে। পালাক্রমে ধর্ষণের শিকার হওয়ার পরও বিধবা নারী লোকলজ্জায় ও ছেলেমেয়ের কথা চিন্তা করে ঘটনা গোপন করে রাখে। কিন্তু পরে স্থানীয় লোকজনের সাথে আলোচনা করে গত বুধবার রাতে আড়াইহাজার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বিধবা নারীকে গণধর্ষণের ঘটনায় ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রধান আসামি আলী আকবরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য আসামিদেরকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
গাজীপুরে পার্লার ব্যবসায়ীকে ধর্ষণ
গাজীপুর সংবাদদাতা জানান, গাজীপুরে বেড়াতে নিয়ে এক পার্লার ব্যবসায়ী নারীকে প্রাইভেট কারে ধর্ষণ করেছে চালক। এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ওই চালককে আটক করেছে পুলিশ। তার নাম পিন্টু মিয়া (২৯)। সে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার নওলা এলাকার বারেক মিয়ার ছেলে।
জিএমপির কাশিমপুর থানার এসআই এ কে মানিক জানান, বুধবার সন্ধ্যার পর কালিয়াকৈরের একটি মার্কেটে কেনাকাটা শেষে ছেলে ও বান্ধবীকে নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন স্থানীয় এক পার্লার ব্যবসায়ী নারী (৩১)। এ সময় তাদের সাথে দেখা হয় পূর্ব পরিচিত প্রাইভেটকার চালক পিন্টু মিয়ার। তাদেরকে বাসায় পৌঁছে দেয়ার কথা বলে গাড়িতে তোলে পিন্টু মিয়া। গাড়িতে বসে পিন্টু বেড়াতে যাওয়ার প্রস্তাব দিলে তারা সম্মতি প্রকাশ করেন। তারা সাভারের জিরানীর উদ্দেশে রওনা হন। সেখানে গিয়ে হালিম খেতে পার্লার ব্যবসায়ীর বান্ধবী ও ছেলে গাড়ি থেকে নেমে দোকানে যায়। এ সময় প্রাইভেটকারের ভেতর পার্লার ব্যবসায়ীকে ধর্ষণ করে পিন্টু। বাসায় ফিরে ধর্ষণের শিকার ওই নারী স্বজনদের ঘটনা জানালে তারা ৯৯৯-এ অবহিত করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মামলা দায়ের করতে ধর্ষণের শিকার নারী আশুলিয়া থানায় যান। বিষয়টি জানতে পেরে ভিকটিমের সাথে সমঝোতা করতে পিন্টু সেখানে যায়। এ সময় পুলিশ পিন্টুকে আটক করে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ
ইউএনবি জানায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় নবম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শাহাদাত হোসেনকে (৩৬) গত বুধবার দুপুরে গ্রামবাসী আটক করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশ সোপর্দ করেছেন। আটক শাহাদাত জেলার বিজয়নগর উপজেলার সেজামুড়া গ্রামের লুৎফুর রহমানের ছেলে।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, গত মঙ্গলবার শাহাদাত ওই স্কুলছাত্রীর ঘরে প্রবেশ করে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় ওই ছাত্রী চিৎকার করলে স্থানীয় লোকজন এসে প্রথমে তাকে আটক করে। পরে গণধোলাই দিয়ে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। এ ঘটনায় স্কুলছাত্রীর মা বাদি হয়ে থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ অভিযোগটি এজাহারভুক্ত করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, শাহাদাত ২০১৮ সাল থেকে তার বোনের সাথে মিনারকোট গ্রামে বসবাস করে আসছে। শাহাদাতের বোন ও ছাত্রীর মা সম্পর্কে জা হয়। জায়ের বসতঘর মেরামত করার কারণে তাদের একটি ঘরে থাকার জন্য আশ্রয় দেয়া হয়। তখন থেকেই শাহাদাত তার মেয়েকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছে। ২০১৯ সালে ১ এপ্রিল শাহাদাত সুযোগ বুঝে তাদের পরিবারের সবাইকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তার মেয়েকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে সে একাধিকবার তার মেয়েকে ধর্ষণ করে। লোক লজ্জা ও মান-সম্মানের ভয়ে ঘটনার কথা গোপন রাখে ওই ছাত্রী। পরে মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে বিষয়টি ছাত্রী তার মাকে জানায়।
এ দিকে মঙ্গলবার শাহাদাত পুনরায় ঘরে প্রবেশ করে ছাত্রীকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে। তার চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে শাহাদাতকে আটক করে। একপর্যায়ে গণধোলাই দিয়ে থানায় সোপর্দ করে।
উজিরপুরে ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা কলেজছাত্রী
উজিরপুর (বরিশাল) সংবাদদাতা জানান, বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণে বরিশালের উজিরপুর পৌর এলাকায় এক কলেজছাত্রী (১৯) অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। অভিযুক্ত যুবক পলাতক রয়েছে। গত বুধবার সকালে নির্যাতিতা ওই কলেজছাত্রী বাদি হয়ে উজিরপুর মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এতে স্বপন হাওলাদার (২০) নামের এক যুবককে আসামি করা হয়েছে। স্বপন হাওলাদার উজিরপুর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ মাদার্শী গ্রামের বাবুল হাওলাদারের ছেলে। ভুক্তভোগী সনাতন ধর্মাবলম্বী ওই শিক্ষার্থীর বাড়ি একই এলাকায় এবং সে স্থানীয় কলেজের এইচএসসি প্রথমবর্ষের ছাত্রী। মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ওই ছাত্রীকে কলেজে আসা-যাওয়ার পথে যুবক স্বপন প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত। একপর্যায়ে ওই ছাত্রীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে স্বপন। গত ২৫ মে রাতে ওই ছাত্রীর ঘরে কেউ না থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন স্বপন। গত ১০ অক্টোবর ওই ছাত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের সন্দেহ হয়। পরে পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে ওই শিক্ষার্থী ঘটনা সম্পর্কে জানায় এবং ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি ধরা পড়ে। পরবর্তীতে নির্যাতিতার পরিবার ঘটনা সম্পর্কে জানাতে যুবক স্বপনের বাড়িতে গেলে তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে স্বপন পালিয়ে যান। গত কয়েক দিন ধরে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল আপসরফার নামে নির্যাতিতা ছাত্রীর পরিবারকে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিল। পরে থানা পুলিশের সহযোগিতায় গত বুধবার নির্যাতিতা ছাত্রী বাদি হয়ে অভিযুক্ত স্বপন হাওলাদারের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।
ঝিকরগাছায় গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় মামলা
ঝিকরগাছা (যশোর) সংবাদদাতা জানান, যশোরের ঝিকরগাছার পল্লীতে এক গৃহবধূ ধর্ষণের স্বীকার হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে, গত বুধবার রাতে ঝিকরগাছাসদর ইউপির মির্জাপুর গ্রামে। খবর পেয়ে রাতেই থানা পুলিশ মূল আসামি রুফি মিয়া ওরফে শুভকে (২৬) আটক করেছে। ধর্ষিতার স্বামী জানিয়েছেন, প্রতিবেশী রুফি মিয়া ওরফে শুভ মোবাইলে তার স্ত্রীকে বাড়ির পাশের রাস্তায় আসতে বলে। তার স্ত্রী রাস্তায় এলে পূর্বপরিকল্পিতভাবে শুভসহ চারজন তাকে নির্জনস্থানে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার ঝিকরগাছা থানায় ধর্ষিতার স্বামী বাদি হয়ে চারজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনার পর থেকেই অন্য তিন আসামি পালাতক রয়েছে বলে থানার ডিউটি অফিসার সাহিদুজ্জামান জানিয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement