০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ক্ষমতায় টিকে থাকার হাতিয়ার: বিএনপি

-

ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে ‘হাতিয়ার’ হিসেবে ব্যবহার করছে মন্তব্য করে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
গতকাল শুক্রবার সকালে উত্তরার বাসা থেকে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলে এই দাবি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১৫৩ জন মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করে হয়রানি করা হয়েছে। মামলার অভিযোগগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাবেন, সরকারি দলের লুটেরাদের বিরুদ্ধে কথা বললে, রাজনৈতিক মতপ্রকাশ করলে, সরকারের সমালোচনা করলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হচ্ছে। এমনকি যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন তাদের কোনো দুর্নীতির কথা, তাদের কোনো বিবেকবর্জিত কীর্তিকলাপের কথাও যদি সোশ্যাল মিডিয়াতে অথবা প্রিন্টিং মিডিয়াতে প্রকাশ করে তাহলে সেই সাংবাদিক বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার ভয়ে আজ জাতির কণ্ঠ রুদ্ধ। বিএনপি শুরু থেকেই বলে এসেছে এই আইন সংবিধানবিরোধী এবং এটা জনগণের কণ্ঠরোধ করার জন্য সরকারের হাতিয়ার। তারা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এই আইন করেছে। আমরা মনে করি, অবিলম্বে এ আইনটি বাতিল করা উচিত এবং জনগণের চিন্তা-ভাবনা, তার স্বাধীনতার প্রকাশকে নিশ্চিত করতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সাংবাদিকসহ সবাই এটা (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) নিয়ে প্রচণ্ড সমালোচনা করার পরও ৯৪ শতাংশ মামলা হয়েছে এই বিতর্কিত ৫৭ ধারায়। জারি হওয়ার দুই বছরের কম সময়ের মধ্যেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রতিক্রিয়া বেশ লক্ষণীয় হয়ে উঠছে। এটাও মনে রাখা দরকার যে, এই আইন কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ প্রক্রিয়ারই একটা অংশ। যখনই কোনো সরকার কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে ওঠে, স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে, ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় তখনই প্রথম যে আঘাত হানে সংবাদ প্রকাশ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর এবং একই সাথে সোশ্যাল মিডিয়াকে দমন করা। সেটাই এই সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে, অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে, সচেতনতার সাথে করে চলেছে।
এই অবস্থা থেকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবানও জানান ফখরুল।
প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাগুলোর মূল অভিযোগ হলো, ব্যক্তির মানহানি, আক্রমণাত্মক মিথ্যা বা ভীতি প্রদর্শন কিংবা রাষ্ট্রের তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ করা, ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করা। আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন, এই সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা প্রতিনিয়ত কিভাবে বিরোধীদলীয় কিংবা ভিন্নমতাবলম্বীদের সম্মানহানি করছেন, কিভাবে আক্রমণাত্মকভাবে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করছেন, কিভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন। এই সরকারের মন্ত্রী-এমপি-আমলা-পুলিশের লুটপাট কিভাবে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণœ করছে। এ সরকারের নেতাকর্মীদের করোনা সার্টিফিকেট বিক্রির কারণে ইতালিতে বাংলাদেশ থেকে আগত কোনো ব্যক্তিকে এখন প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না, নিউ ইয়র্ক টাইমসে নেতিবাচক প্রবন্ধ হয় বাংলাদেশকে নিয়ে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের শীর্ষ দেশগুলোতে বাংলাদেশ উঠে আসে শীর্ষে। এসবের জন্য বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও সুনাম ক্ষুণেœর জন্য তাহলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কিংবা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী কর্মকাণ্ড বা সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে কি তাহলে এই সরকারের কর্তাব্যক্তিরা দণ্ডিত হবেন না বা তাদেরকে দায়ী করা সম্ভব হবে না? সরকার কি কোনোভাবে দায় এড়াতে পারেন।
২০২০ সালে জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ১২ জন সাংবাদিককে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ইতোমধ্যে সংবাদপত্র, সম্পাদক পরিষদ তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮-এর জন্য সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে লিখতে পারছেন না। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই কালো আইন বাতিলের দাবি তুলেছে।
‘ক্ষমতায় গেলে আইনটি বাতিল হবে’
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যেসব আইন মানুষের অধিকারকে খর্ব করে, যেসব আইন মানুষের স্বাধীনতার চেতনার যে বিষয়গুলো ছিল বাকস্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা সেগুলোকে খর্ব করে, হরণ করে। অবশ্যই আমরা রাষ্ট্র পরিচালনায় দায়িত্ব যদি পাই কোনো সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা সেগুলোকে অবশ্যই বাতিল করব।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলে সরকারকে কোনো চিঠি দেবেন কি না, কোনো কর্মসূচি নেবেন কি নাÑ প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা জানেন যে, গত পাঁচ মাস ধরে কোভিড-১৯ এর কারণে জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেই কারণে এই মুহূর্তে এই ধরনের কোনো কর্মসূচি যেটা জনসমাবেশ থাকে সেটা আমরা আনিনি।
তবে আপনি যেটা বলেছেন যে, সরকারকে চিঠি দেয়া, সরকারকে অবগত করানোর চেষ্টা করাÑ সেটা তো আমরা এর আগেও করেছি, এখনো আমরা করব।
‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার পরিসংখ্যান’
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ২০২০ সালের ২২ জুন পর্যন্ত মোট মামলা হয়েছে ১০৮টি। এসব মামলায় মোট আসামি ২০৪ জন। তাদের মধ্যে সাংবাদিক ৪৪ জন, আর অন্যান্য পেশায় কর্মরত ও সাধারণ মানুষ ১৬০ জন। এই হিসাবে প্রায় ২৫ ভাগ আসামিই হলেন সাংবাদিক। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ১০, ফেব্রুয়ারিতে ৯, মার্চে ১৩, এপ্রিলে ২৪, মে-তে ৩১ এবং জুনের ২২ তারিখ পর্যন্ত ২১টি মামলা হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। গত বছর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে ৬৩টি, ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও আইসিটি অ্যাক্ট মিলিয়ে মামলা হয়েছে ৭১টি।


আরো সংবাদ



premium cement