২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সেমিফাইনালিস্ট চার দলের রেকর্ড

বিশ্বকাপ
সেমিফাইনালে উঠা চার দলের উল্লাস - সংগৃহীত

রাশিয়ার বন্দরনগরী সেন্ট পিটার্সবার্গে ২১তম বিশ্বকাপের আজ প্রথম সেমিফাইনাল। আগামীকাল মস্কোর লুজনিয়কি স্টেডিয়ামে ফাইনালে যাওয়ার অপর ম্যাচ। সেন্ট পিটার্সবার্গে মুখোমুখি ফ্রান্স এবং বেলজিয়াম। মস্কোতে পরস্পরের সামনে ইংল্যান্ড ও ক্রোয়েশিয়া। এই শেষ চারে আসার পথে কিছু রেকর্ড গড়েছে এই চার দল। এই রেকর্ড গুলো হলো :

১. এই নিয়ে পাঁচবার অল ইউরোপিয়ান সেমিফাইনাল হচ্ছে বিশ্বকাপে। ইউরোপে অনুষ্ঠিত আসরে প্রথম এই ঘটনার জন্ম ১৯৩৪ সালের বিশ্বকাপে। এর পুনরাবৃত্তি ১৯৬৬, ১৯৮২, ২০০৬ এবং এবার ২০১৮তে। এবারের এই চার দল এর আগেও শেষ চারে খেলেছিল। ইংল্যান্ড ১৯৬৬ এবং ১৯৯০ সালে। বেলজিয়াম ১৯৮৬ তে। ফ্রান্স ১৯৯৮ এবং ২০০৬ সালে। আর ক্রোয়েশিয়া ১৯৯৮তে।

২. এ পর্যন্ত ৭৪ বার মুখোমুখি হয়েছে ফ্রান্স এবং বেলজিয়াম। এতে জয়ের পাল্লা ভারী বেলজিয়ামেরেই। তারা ৩০ খেলায় জয়ের হাসি হেসেছে। ইংল্যান্ড ২৪ বার। তবে বিশ্বকাপে তাদের আগের দুই মোকাবেলায় জয় গেছে ইংলিশদের দখলে। তা ১৯৩৮ এবং ১৯৮৬ সালে।

৩. বেলজিয়ামের কোচ রবার্টো মার্টিনেজ হলেন দ্বিতীয় ভিন দেশী কোচ যার অধীনে একটি দল সেমি ফাইনলে উঠল। মার্টিনেজ স্পেনের নাগিরক। এর আগে এই কৃতিত্ব ছিল ব্রাজিলের লুইস ফিলিপে সোলারির দখলে। ২০০৬ সালে তিনি পর্তুগালকে নিয়ে গিয়েছিলেন শেষ চারে।

৪. আজ বেলজিয়ামের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ১১তম বিশ্বকাপের ম্যাচে ডাগ আউটে দাঁড়াবেন ফরাসি কোচ দিদিয়ে দেশ্যাম। এটা যে কোনো ফরাসি কোচের চেয়ে বেশি।

৫. বেলজিয়াম এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি গোল করেছে। তাদের করা গোলের সংখ্যা ১৫টি। জিতেছে টানা পাঁচ ম্যাচই। তা নির্ধারিত সময়েই।

৬. টাইব্রেকারে টানা দুই ম্যাচ জিতে ক্রোয়েশিয়া এখন আর্জেন্টিনার কাতারে। আর্জেন্টিনা ১৯৯০ সালে কোর্য়াটার ফাইনাল এবং সেমি ফাইনালে জয় পেয়েছিল যথাক্রমে যুগোশ্লাভিয়া এবং ইতালির বিপক্ষে। এবার ক্রোয়েশিয়ার জয় দ্বিতীয় রাউন্ড এবং কোর্য়াটারে যথাক্রমে ডেনমার্ক এবং রাশিয়ার বিপক্ষে।

৭. ইংল্যান্ড এ নিয়ে তিনবার বিশ্বকাপের সেমিতে উঠল। লক্ষ্যণীয় বিষয় তিনবারই সেই বিশ্বকাপ হয়েছে ইউরোপে। ১৯৬৬ সালে নিজ মাঠে, ১৯৯০ তে ইতালিতে এবং এবার রাশিয়ায়। এবারই প্রথম টাইব্রেকারে ম্যাচ জিতলো ইংল্যান্ড। আগের তিনবার হারতে হয়েছে এই পেনাল্টি শ্যূট আউটে।

৮. সেমিতে আসার পথে ক্রোয়েশিয়া এবার টানা পাঁচ ম্যাচ জিতলো। একই সাথে মোট নয়টি ম্যাচে তারা বল পাঠিয়েছে প্রতিপক্ষের জালে। তা তিন বিশ্বকাপ মিলে। ২০১০, ২০১৪ এবং এবার।

৯. সেমিতে উঠা দলগুলোর মধ্যে ইংল্যান্ডের হ্যারি কেন ৬ গোল দিয়ে গোলদাতার তালিকায় শীর্ষে। চার গোল দিয়ে এর পরেই বেলজিয়ামের রোমেলো লুকাকু। তিনটি করে গোল ফ্রান্সের গ্রিজম্যান এবং এমবাপে। দুই গোলের মালিক ক্রোয়েশিয়ার লকুা মডরিচ।

 

আরো পড়ুন : গর্ব ও বেদনার বিশ্বকাপ

নানা অঘটন ও চমকে পরিপূর্ণ রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রায় প্রতিটি ম্যাচ ছিল উত্তেজনায় ভরপুর। রাশিয়া বিশ্বকাপ ভাগাভাগি করে নিয়েছে আশা ও নিরাশায়। একই ফ্রেমে এক পাশে বেদনার সুর, অন্য পাশে গর্বের আনন্দ। বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথমবারের মত ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও জার্মানি ছাড়া বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল হতে যাচ্ছে। অথচ তারাই ২০ আসরের মধ্যে ১১ বার শিরোপাজয়ী দল। অনেক বড় বড় দলকে পেছনে ফেলে চমক দেখিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছে ইউরোপের চার দল ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম ও ক্রোয়েশিয়া। তন্মধ্যে একবারের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড। অন্য দুই দল বেলজিয়াম ও ক্রোয়েশিয়া রয়েছে নিজেদের প্রথম শিরোপার খোঁজে। এই দুই দলের কেউ যদি শিরোপা জিতে তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

প্রায় ৩২২ কোটি টাকার চ্যাম্পিয়ন প্রাইজমানির জন্য ৩২ দলের লড়াইয়ের বিশ্বকাপের ২১তম আসর হচ্ছে রাশিয়ায়। স্বাগতিকেরা চমক দেখাতে শুরু করে বিশ্বকাপের আগে থেকেই। চারবারের চ্যাম্পিয়ন ইতালি, টোটাল ফুটবলের জনক হল্যান্ড কিংবা সর্বশেষ দুইবার কোপা শিরোপাজয়ী চিলির মতো দল বাছাইপর্বে ব্যর্থ হয়ে এবারের বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে আসতেই পারেনি।

বিপরীত চিত্র হলো রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলেছে এমন কিছু দল যাদের নেই আলোড়ন সৃষ্টিকারী তারকা, মহাতারকা। ইরান, আইসল্যান্ড, মরক্কো, জাপান, নাইজেরিয়া, পেরু কিংবা স্বাগতিক রাশিয়া এই কাতারে। যাদেরকে নিয়ে কেউ আশাই করেনি। অবশ্য তারা একটি সঙ্ঘবদ্ধ দল হিসেবে খেলে মাঠের ফলাফলই বদলে দিয়েছে।

গ্রুপ পর্বের প্রায় সব ম্যাচই ছিল চমক ও প্রবল উত্তেজনায় ভরপুর। কমপক্ষে ২৮টি ম্যাচে শেষ বাঁশি বাজার আগ পর্যন্ত কেউই নিশ্চিতভাবে বলতে পারেনি কোন দল জিতবে। এফ গ্রুপের প্রথম ম্যাচেই ধাক্কা খায় গতবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি। মেক্সিকোর সাথে তারা হেরে যায় ১-০ গোলে। নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ভাগ্যগুণে একেবারে অন্তিম মুহূর্তের গোলে জিতলেও বাঁচা-মরার শেষ ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হারে ২-০ গোলে। যার ফলে ১৯৩৮ বিশ্বকাপের পর দ্বিতীয়বার প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ পড়ে জার্মানি।

জার্মানির পথ প্রায় অনুসরণ করার উপক্রম হয়েছিল আর্জেন্টিনা, স্পেন, পর্তুগাল ও কলম্বিয়ার মতো হেভিওয়েট দলেরও। তবে অনেক কষ্টে এবং নিতান্ত ভাগ্যগুণে প্রথম রাউন্ডের বৈতরণী পাড়ি দেয় তারা। গ্রুপ পর্বে ভালো খেলার পরও দুর্ভাগ্যের শিকার ও সমীকরণের জালে আটকা পড়ে ইরান, মরক্কো, আইসল্যান্ড, নাইজেরিয়া, সার্বিয়া ও পোল্যান্ডের মতো দল।

রাউন্ড অব সিক্সটিনে সুযোগ পাওয়া সব দল বদলে যায়। নকআউট পর্বে দ্বিতীয়বার সুযোগ পাওয়া যাবে না বলে মাঠে তাদের স্কিল টেকনিক পরিবর্তন হয় বহুগুণে। এই রাউন্ডের প্রথম দিনেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয় দুই হেভিওয়েট আর্জেন্টিনা ও পর্তুগাল। লায়নেল মেসির আর্জেন্টিনা হারে ৪-৩ গোলে এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদার ফ্রান্সের কাছে এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল হারে ২-০ গোলে উরুগুয়ের কাছে। এ ছাড়া এশিয়ার পরাশক্তি জাপান ৬৭ মিনিট পর্যন্ত বেলজিয়ামের সাথে দুই গোলে এগিয়ে থাকার পরও নিজেদের ভুল সিদ্ধান্তের খেসারত দিয়ে ৩-২ গোলে ম্যাচ হেরে বিশ্বকাপ মিশন শেষ হয়। প্রচুর গোল মিসের মহড়া দিয়ে স্বাগতিক রাশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে হারে ২০১০ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ও এবারের হট ফেবারিট স্পেন। পুরো ম্যাচে ভালো খেলার পরও দুর্ভাগ্যের কারণে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বাদ পড়ে কলম্বিয়া, সুইজারল্যান্ড ও মেক্সিকোর মতো দল।

কোয়ার্টার ফাইনালে সবচেয়ে বড় অঘটন ছিল হেক্সা মিশনে নামা ব্রাজিলের পরাজয়। তারাও স্পেনের মতো গোল মিসের মহড়া দিয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে ২-১ গোলে হেরে যায় ইউরোপের ডার্কহর্স খ্যাত বেলজিয়ামের কাছে। এ ছাড়া কোয়ার্টার ফাইনালে থামতে হয় দুইবারের চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে, স্বাগতিক রাশিয়া ও সুইডেনকে।

অবাক লাগছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, স্পেন ও পর্তুগালের মতো দল রাশিয়া বিশ্বকাপে পাত্তাই পেল না। তাদের বিদায়ে অনেক তারকা-মহা তারকাকে হারিয়ে যেতে হয়েছে বিশ্বমঞ্চ থেকে। ফলে বিশ্বকাপের রঙ এবং জৌলুস অনেকটাই কমে গেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। রাশিয়া বিশ্বকাপ ট্রফি নতুন কোনো দেশের সুকেশে স্থান পেলেও চমকের কিছু থাকবে না।

দেখুন:

আরো সংবাদ



premium cement