প্রতিকূল ফ্রান্স ছাড়ছেন মেধাবী মুসলিম পেশাজীবীরা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৯ মে ২০২৪, ১৬:৪৮
বিজনেস স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষে চাকরির জন্য প্রায় ৫০টি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ৩২ বছর বয়সী আদম। কিন্তু সফল না হওয়ায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাই পাড়ি জমান তিনি।
উত্তর আফ্রিকান বংশোদ্ভূত আদম ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘ফ্রান্সের চেয়ে এখানে অনেক ভালো লাগছে। এখানে সবাই সমান। আপনার বস ভারতীয়, আরব কিংবা একজন ফরাসিও হতে পারেন। আমার ধর্ম এখানে বেশি গ্রহণযোগ্য।’
গতমাসে প্রকাশিত ‘ফ্রান্স, ইউ লাভ ইট বাট ইউ লিভ ইট নামে একটি গবেষণা বলছে, উচ্চশিক্ষিত মুসলিম ফরাসি নাগরিকেরা ফ্রান্স ছেড়ে দুবাই, লন্ডন, নিউইয়র্ক ও মন্ট্রিলের মতো শহরগুলোতে পাড়ি জমাচ্ছে। তবে সংখ্যাটি কত সেটি জানা কঠিন বলে গবেষকেরা বলছেন। তারা অনলাইনে একটি জরিপের প্রশ্নমালা প্রকাশ করেছিলেন। প্রায় এক হাজার জন এতে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ৭১ শতাংশ বলেছেন, তারা বর্ণবাদ ও বৈষম্যের জন্য ফ্রান্স ছেড়েছেন।
আদম এএফপিকে বলেন, ফ্রান্সে ‘আপনি নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যালঘু ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসলে আপনাকে দ্বিগুন পরিশ্রম করতে হয়। তবে ফ্রান্সে লেখাপড়া করতে পারায় আদম ফ্রান্সের প্রতি ‘দারুণ কৃতজ্ঞতা' প্রকাশ করেছেন। বন্ধু, পরিবার, ফ্রান্সের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক জীবন মিস করার কথাও জানিয়েছেন। তারপরও ‘ইসলামোফোবিয়া' ও ‘সিস্টেম্যাটিক রেসিজম' (যেমন কারণ ছাড়াই পুলিশ আপনাকে দাঁড় করিয়ে দেয়) থেকে মুক্তি পাওয়ায় আদম খুশি বলে জানান।
অনেকদিন ধরেই ফ্রান্সে অভিবাসীরা থাকছেন। সাবেক উপনিবেশ উত্তর ও পশ্চিম আফ্রিকার মানুষজনও সেখানে বাস করেন। কিন্তু মুসলিম অভিবাসীদের উত্তরসূরিরা বলছেন, ফ্রান্স মুসলমানদের জন্য ক্রমে প্রতিকূল হয়ে উঠছে, বিশেষ করে ২০১৫ সালে ফ্রান্সে ইসলামিক স্টেটের হামলার পর। ওই হামলায় ১৩০ জন মারা যান।
তারা বলছেন, ফ্রান্সে স্কুলে সব ধর্মের প্রতীকপ্রদর্শনের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মুসলিম নারীদের ক্ষেত্রে বেশি প্রয়োগ করা হয়।
মরক্কান বংশোদ্ভূত ৩৩ বছয় বয়সী ফরাসি মুসলিম এএফপিকে বলেন, তিনি অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কোনো ‘শান্তিপূর্ণ সমাজে’ চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। তিনি বলেন, তিনি ফ্রান্সের খাবার ও বেকারির সামনে লাইনে দাঁড়ানো মিস করবেন। কিন্তু ফ্রান্সে আমাদের দম বন্ধ হয়ে আসছে। বিজনেস স্কুল থেকে পাস করা ওই ব্যক্তি মাসে ১০ হাজার ইউরোর বেশি বেতন পান।
তিনি জানান, প্যারিসে একটি ফ্ল্যাটে দুই বছর থাকার পরও তাকে এখনো প্রশ্ন করা হয়, ফ্ল্যাটের ভেতর তিনি কী করেন। এটা খুবই অপমানজনক। আমার জন্য নিয়মিতভাবে এমন অপমান আরো বেশি হতাশাজনক। কারণ, আমি ভালো বেতন পাওয়ায় অনেক বেশি কর দিয়ে থাকি।
ফ্রান্সের ‘দ্য অবজারভেটরি ফর ইনইকুয়ালিটিস’ বলছে, দেশটিতে বর্ণবাদ কমছে। তবে এখনো ফরাসি নামের একজন চাকরিপ্রার্থীর উত্তর আফ্রিকার নামের একজন চাকরিপ্রার্থীর চেয়ে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাক পাওয়ার সুযোগ ৫০ শতাংশ বেশি।
৩০ বছর বয়সি আরেক ফ্রাঙ্কো-আলজেরিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার এএফপিকে বলেছেন, তিনি জুনে চাকরি করতে ফ্রান্স ছাড়ছেন, কারণ ফ্রান্স ‘জটিল’ হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ফ্রান্সের রাজনীতিও একটু ডানে সরে এসেছে। মুসলমানেরা এখান স্পষ্টতই দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। সূত্র : ডয়চে ভেলে