১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

জার্মানিকে শিক্ষা দিতে ২০ হাজার হাতি পাঠাতে চায় বৎসোয়ানা!

- ছবি : সংগৃহীত

বৎসোয়ানা এবং জার্মানি- হাতি নিয়ে দু’দেশের মধ্যে বিরোধ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গত কয়েক দিন ধরে হাতিই মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে তাদের কাছে। এই বিরোধ নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করলেও হাতি নিয়ে সমস্যা কিন্তু দু’দেশের মধ্যে নতুন নয়।

নতুন করে বিরোধের সূত্রপাত বৎসোয়ানার প্রেসিডেন্ট মোকগোয়েতসি মাসিসির এক হুমকিকে কেন্দ্র করে। তিনি সম্প্রতি জানান, জার্মানিকে বৎসোয়ানা ২০ হাজার হাতি ‘উপহার’ দিতে চায়!

প্রশ্ন ওঠে উপহারে সমস্যা কোথায়? আসলে মাসিসি যতই উপহারের কথা বলুন না কেন তার কথার নেপথ্যে রয়েছে রাজনৈতিক বিরোধ।

হাতি শিকার নিয়ে জার্মানি নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর থেকেই বিরোধ শুরু হয় দু’দেশের মধ্যে। বৎসোয়ানা থেকে ‘হান্টিং ট্রফি’ আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে বার্লিন। যা শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করে মাসিসি সরকার।

‘হান্টিং ট্রফি’ কী?
কোনো বন্যপ্রাণীকে গুলি করে বা অন্য উপায়ে হত্যা করার পর সেই সব পশুর মাথা, চামড়াকে ‘ট্রফি’ বানিয়ে অনেকেই নিজের বাড়িতে সাজিয়ে রাখতে পছন্দ করেন। ‘হান্টিং ট্রফি’ হিসেবে হাতির মাথা এবং চামড়া বৎসোয়ানা থেকে আমদানি করত জার্মানি। পশু শিকারও চলত আফ্রিকার দেশটিতেই। কিন্তু সম্প্রতি সেই আমদানির ওপরই নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে বার্লিন।

এরপরই জার্মানিকে আক্রমণ করে বৎসোয়ানার প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বৎসোয়ানা হাতির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার জার্মানির হাতির সাথে বসবাস করার অভিজ্ঞতা পাওয়া উচিত।’

এখানেই থেমে থাকেননি বৎসোয়ানার প্রেসিডেন্ট। জার্মানির এক দৈনিক সংবাদপত্রে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে হাতির সংখ্যা যেভাবে বেড়ে চলেছে তা প্রতিরোধ করার একমাত্র উপায় শিকার। এভাবে হান্টিং ট্রফি আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে জার্মানি চাইছে আমাদের দেশের মানুষকে দরিদ্র করে দিতে। শুধু তাই নয়, হাতির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের মানুষ প্রভূত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। হাতিরা সম্পত্তির ক্ষতি করছে, ক্ষেতে ঢুকে তাণ্ডব চালাচ্ছে।’

মাসিসি বলেন, ‘বার্লিনে বসে অন্য দেশকে নিয়ে মন্তব্য করা খুবই সহজ। যতক্ষণ না কেউ সমস্যায় পড়ছেন, ততক্ষণ সেই সমস্যা নিয়ে কারো মাথাব্যথা হয় না। প্রাণী সংরক্ষণ নীতির কারণে আমাদের ভয়াবহ মূল্য দিতে হচ্ছে। এটা কোনো মজার বিষয় নয়।’

তারপরই বৎসোয়ানার প্রেসিডেন্ট জানান, তারা জার্মানিকে ২০ হাজার হাতি ‘উপহার’ দিতে চান। তিনি চান, জার্মানরাও হাতির সাথে বসবাস করার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করুক।

বৎসোয়ানার স্থানীয় সম্প্রদায়ের কাছে শিকারই রুটিরুজির অন্যতম পথ। শিকার করার পর প্রাণীদের মাথা, চামড়াসহ শরীরের অন্যান্য অংশ বিক্রি করে রোজগার করেন তারা।

২০১৪ সালে বৎসোয়ানাই ‘হান্টিং ট্রফি’ নিজেদের দেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। যদিও স্থানীয় সম্প্রদায়ের লাগাতার আন্দোলন এবং চাপের কারণে বাধ্য হয়ে ২০১৯ সালে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয় বৎসোয়ানা সরকার।

এখন পুরো দেশে নির্দিষ্ট সংখ্যক শিকারের অনুমতি দেয়া রয়েছে। প্রতিটি স্থানীয় সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে শিকারের জন্য লাইসেন্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে। লাইসেন্স প্রাপকরাই শুধুমাত্র শিকার করতে পারবেন। তবে অবশ্যই সরকারের বেঁধে দেয়া সংখ্যা পার করতে পারবেন না।

বিদেশ থেকে শিকারিরা এসে এই লাইসেন্সের মাধ্যমে হাতি বা অন্যান্য জন্তু মারেন। বদলে তাদের দিতে হয় মোটা টাকা। একটা হাতি মারলে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা দিতে হয়।

বৎসোয়ানায় ইতোমধ্যেই হাতির সংখ্যা এক লাখ ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে। এত হাতি নিয়ে চাপে পড়ে গেছে দেশটির সরকার। জার্মানি নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর হাতির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ মোকাবিলায় অন্য রাস্তা খুঁজছে মাসিসি সরকার। তারা প্রতিবেশী দেশ অ্যাঙ্গোলায় আট হাজার এবং মোজাম্বিকে ৫০০ হাতি পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে।

মাসিসি ‘উপহার’ পাঠানোর কথা বললেও জার্মানি এই নিয়ে চিন্তিত নয় বলেই জানান বার্লিনের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।

তিনি জানান, এখনই এই নিয়ে চিন্তা করতে নারাজ তার দেশের সরকার।

শুধু বৎসোয়ানা নয়। পশু হত্যা বন্ধ এবং সংরক্ষণ নীতির কারণে আফ্রিকার অনেক দেশেই সমস্যা দেখা দিয়েছে। এই সমস্যার জন্য পাশ্চাত্যের দেশগুলোর নেয়া নীতিকেই দায়ী করছে তারা।

জার্মানির মতো ব্রিটেনও হান্টিং ট্রফি আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আইনসভায় ‘দ্য হান্টিং ট্রফি (আমদানি নিষেধাজ্ঞা) বিল’ পাশ করে। এই বিল নিয়েও আপত্তি তোলে বৎসোয়ানা।

মাসখানেক আগে বৎসোয়ানার বেশ কিছু সম্প্রদায়ের মানুষ ব্রিটেনের রাস্তায় প্রতিবাদ জানান। তাদের দাবি, অবিলম্বে ব্রিটেনের আইনসভায় পাশ হওয়া বিলটি প্রত্যাহার করতে হবে।

বৎসোয়ানার বন্যপ্রাণী মন্ত্রী লন্ডনের হাইড পার্কে ১০ হাজার হাতি পাঠিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। শুধু ব্রিটেন, জার্মানি নয়, ইউরোপীয় অনেক দেশের বিরুদ্ধেই বৎসোয়ানার অভিযোগ একই।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা


আরো সংবাদ



premium cement
৪৭তম বিসিএসের আবেদনের নতুন সময় জানালো পিএসসি জুলাই বিপ্লবে আহতদের চিকিৎসা সহায়তার আশ্বাস সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার মানবসেবার জন্যই হাসপাতাল করেছি : জামায়াত আমির সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের আয়কর নথি জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত চট্টগ্রামে সাবেক এমপি মোতালেবসহ ২৪৮ জনের নামে মামলা চিন্ময়ের জামিন শুনানি জানুয়ারিতেই ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ, শুরু ১০ এপ্রিল ডেঙ্গুতে আরো ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৩৪৪ ধবলধোলাই এড়াতে ৩ পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ নববর্ষের প্রকাশনা ইসলামী শ্রমনীতির প্রচারে ভূমিকা রাখবে : শামসুল ইসলাম ‘শেখ হাসিনা দেশে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা তৈরি করতে চায়’

সকল