২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইউক্রেন কেন পশ্চিমাদের কাছে আধুনিক ট্যাঙ্ক চাইছে!

- ছবি : সংগৃহীত

ইউক্রেনের যেসব অঞ্চল রাশিয়া দখল করেছে, সেগুলো পুনরুদ্ধারের জন্য কিয়েভ পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে কয়েক শ’ আধুনিক ট্যাঙ্ক চাইছে ইউক্রেন। ইতোমধ্যে ব্রিটেন এ ধরনের ১৪টি ট্যাঙ্ক দেয়ার কথা ঘোষণা করেছে। আর কোনো দেশের পক্ষ থেকে এখনো কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়নি।

ইউক্রেনের প্রধান যুদ্ধ ট্যাঙ্কের নাম টি-৭২। এসব ট্যাঙ্ক তৈরি হয়েছে ৩০ বছরেরও বেশি সময় আগে। ইতোমধ্যেই এগুলো পুরনো হয়ে গেছে।

কিংস কলেজ লন্ডনের প্রতিরক্ষা গবেষক ড. মারিনা মিরন বলেন, ‘ইউক্রেনের অনেক ট্যাঙ্কই সম্ভবত আর ব্যবহারযোগ্য নয়। কারণ রাশিয়ার আক্রমণ শুরু হওয়ার আগে এগুলোকে যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি।’

এ কারণে ইউক্রেন পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে ৩০০টির মতো আধুনিক ট্যাঙ্ক চেয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, রাশিয়া ইতোমধ্যে যেসব এলাকা দখল করে নিয়েছে, সেগুলো পুনর্দখল করার জন্য ইউক্রেন আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পশ্চিমা দেশের এসব আধুনিক ট্যাঙ্ক ব্যবহার করতে পারে।

প্রতিরক্ষাবিষয়ক গবেষণা সংস্থা রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইন্সটিটিউটের সিনিয়র গবেষক ড. জ্যাক ওয়াটলিং বলেন, ‘রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যূহ ভেঙে দেয়ার জন্য ইউক্রেনীয় সৈন্যদের আধুনিক ট্যাঙ্ক প্রয়োজন। কারণ, রাশিয়ার রয়েছে ভারী ভারী কামান।’

পশ্চিমারা ইউক্রেনকে কী কী ট্যাঙ্ক দিতে পারে
যুদ্ধের শুরুতে পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে যেসব অস্ত্র সরবরাহ করেছে, তার মধ্যে রয়েছে শুধুমাত্র ট্যাঙ্ক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। তাদের আশঙ্কা হচ্ছে, ট্যাঙ্কের মতো যেসব অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ চালানো যায়, ইউক্রেনকে সেসব অস্ত্র দেয়া হলে রাশিয়া ক্ষুব্ধ হবে। এর ফলে যুদ্ধ আরো বেশি ছড়িয়ে পড়তে পারে।

পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া এবং চেক প্রজাতন্ত্র গত বছর ইউক্রেনকে যে ট্যাঙ্ক দিয়েছে, সেটি হচ্ছে টি-৭২। এর সংখ্যা প্রায় ২০০।

এখন পর্যন্ত ব্রিটেনই একমাত্র দেশ যারা ইউক্রেনকে আধুনিক ট্যাঙ্ক দেয়ার কথা বলেছে। তারা কিয়েভকে ১৪টি চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাঙ্ক দেয়ার অঙ্গীকার করেছে। এই ট্যাঙ্কে এমন কামান রয়েছে, যার সাহায্যে নিখুঁতভাবে আক্রমণ চালানো সম্ভব।

তবে চ্যালেঞ্জার-২ ট্যাঙ্কে, নেটো জোটের সদস্য দেশগুলোর ব্যবহৃত অন্য ট্যাঙ্কের চেয়ে ভিন্ন ধরনের গোলাবারুদ ব্যবহার করা হয়। এর ফলে ইউক্রেনে ব্রিটিশ এই যুদ্ধট্যাঙ্ক ব্যবহার করা অনেক বেশি জটিল হতে পারে।

ড. মারিনা মিরন বলেন, চ্যালেঞ্জার ট্যাঙ্কের গোলাবারুদের জন্য ইউক্রেনকে নতুন একটি সরবরাহ লাইন গড়ে তুলতে হবে, যা অন্য ট্যাঙ্কের গোলাবারুদের সরবরাহ লাইনের চেয়ে আলাদা হবে।

তবে ইউক্রেন জার্মানির তৈরি লেপার্ড-২ ট্যাঙ্ক পেতে অনেক বেশি আগ্রহী। এই ট্যাঙ্ক তুলনামূলকভাবে হালকা এবং দ্রুত গতির। এগুলোতে প্রচলিত মানের গোলাবারুদ ব্যবহার করা হয়। জার্মানি ছাড়াও আরো কয়েকটি দেশ তাদের সামরিক বহর থেকে এই ট্যাঙ্ক সরবরাহ করতে পারবে।

পোল্যান্ড ও ফিনল্যান্ড জার্মানির কাছ থেকে লেপার্ড-২ ট্যাঙ্ক কিনেছে। এই দু’টি দেশ বলছে যে তারা ইউক্রেনকে মোট ২৫টি লেপার্ড ট্যাঙ্ক দিতে চায়। তবে ইউক্রেনকে এই ট্যাঙ্ক দিতে হলে জার্মানির অনুমতি প্রয়োজন। কারণ, তারা এই ট্যাঙ্ক তৈরি করেছে।

কিন্তু জার্মানি এখনো অনুমতি দেয়নি। পশ্চিমা দেশগুলো এই অনুমতির জন্য জার্মানির ওপর প্রচণ্ড চাপ তৈরি করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও তাদের তৈরি কিছু এম-১ অ্যাব্রামস ট্যাঙ্ক চেয়েছে ইউক্রেন। কারো কারো মতে এটি বিশ্বের সর্বাধুনিক ট্যাঙ্ক। ইউক্রেনকে এই ট্যাঙ্ক সরবরাহ করতে ওয়াশিংটন এখনো রাজি হয়নি।

জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র কেন ইউক্রেনকে ট্যাঙ্ক দিচ্ছে না?
ড. মারিনা মিরন বলেন, অন্য পশ্চিমা দেশ যেহেতু কিয়েভকে ট্যাঙ্কের মতো অস্ত্র দিচ্ছে না, ওই কারণে জার্মানি ইউক্রেনের কাছে ট্যাঙ্ক সরবরাহ করার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন।

তিনি আরো বলেন, ’তারা উদ্বিগ্ন এ কারণে যে এর ফলে রাশিয়া তখন জার্মানিকে এককভাবে চিহ্নিত করে বলতে পারে, তোমরা সীমা অতিক্রম করেছে, এখন আমরা তোমাকে শাস্তি দেব।’

ড. ওয়াটলিং মনে করেন, বাস্তবিক কিছু কারণে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অ্যাব্রামস ট্যাঙ্ক দিচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, এই ট্যাঙ্কের প্রচুর জ্বালানি প্রয়োজন এবং ইউক্রেনের জ্বালানির অভাব রয়েছে। এছাড়াও অ্যাব্রামস ট্যাঙ্ক সচল রাখতে হলে এর প্রচুর রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন।

ড. মিরন বলেন, ’তবে এমনও হতে পারে যে এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে বার্তা দেয়া হচ্ছে, আমাদের নিজেদের ট্যাঙ্ক দেয়ার আগে আমরা দেখতে চাই যে তোমরা চ্যালেঞ্জার্স এবং লেপার্ড ট্যাঙ্ক দিয়ে কেমন করছো।’

পশ্চিমা ট্যাঙ্ক ইউক্রেনকে কতটুকু সাহায্য করবে?
ড. ওয়াটলিং বলেন, পশ্চিমা ট্যাঙ্কগুলো রাশিয়ার ট্যাঙ্কের চেয়ে ভারী। এর ফলে এগুলোর ব্যবহার সীমিত হবে।

তিনি আরো বলেন, এসব ট্যাঙ্ক এত ভারী যে এগুলো ইউক্রেনের সেতুর ওপর দিয়ে চলতে পারবে না। ফলে এসব ট্যাঙ্কের সাথে এমন যানবাহনও থাকতে হবে যেগুলো সাহায্যে ট্যাঙ্ক চলাচলের জন্য বিশেষ ধরনের সেতু তৈরি করা যায়। এর অর্থ হচ্ছে ইউক্রেন এসব ট্যাঙ্ক শুধুমাত্র সীমিত সংখ্যক কিছু জায়গায় ব্যবহার করতে পারবে। ইউক্রেনের যেসব অংশে নদীনালা কম, শুধুমাত্র সেরকম কিছু জায়গাতেই এসব ট্যাঙ্ক ব্যবহার করা যাবে। এছাড়াও যেসব এলাকা খুব বেশি কর্দমাক্ত নয়, সেসব জায়গাতেই এগুলো ব্যবহার করতে পারবে। কারণ এগুলো নিশ্চিতভাবেই মাটিতে বসে যাবে।

তিনি বলেন, ইউক্রেনে যেসব পশ্চিমা ট্যাঙ্ক পাঠানো হবে, সেগুলো তাৎক্ষণিকভাবেই রাশিয়ার আক্রমণে লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠবে। এগুলোকে খুঁজে বের করে ধ্বংস করার জন্য রাশিয়া তৎপর হয়ে উঠবে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
মুজিবনগরে ২ চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ, আহত ১৩ বাগেরহাটের রামপালে ট্রাকের চাপায় নিহত ৩ ফিলিস্তিনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব বিশ্ববিদ্যালয় বিক্ষোভে উত্তাল পূর্ব আফ্রিকায় প্রবল বৃষ্টি ও বন্যা, কমপক্ষে ১৫৫ জনের প্রাণহানি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রশ্নবিদ্ধ তথ্য প্রচারের নিন্দা ডিআরইউর ভয়াবহ দুর্ঘটনা, অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন উগ্র ইসরাইলি মন্ত্রী শেরে বাংলার সমাধিতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন হাত কাটা বন্দীর নেতানিয়াহুর সমালোচনা ইসরাইলের আলটিমেটাম, যা বলল হামাস রাশিয়ার প্রতি চীনের সমর্থনের বিরুদ্ধে ব্লিংকেনের হুঁশিয়ারি ইতিহাস গড়া জয় পেল পাঞ্জাব

সকল