২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গরমে চাপের মুখে ফ্রান্সের পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো

গরমে চাপের মুখে ফ্রান্সের পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো - ছবি : সংগৃহীত

ফ্রান্সের জ্বালানি চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ আসে পরমাণু বিদ্যুৎ থেকে। বিশ্বের আর কোনো দেশ পরমাণু বিদ্যুতের ওপর এতটা নির্ভরশীল নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের টানা গরম পরমাণু চুল্লিগুলোর ওপর চাপ তৈরি করছে।

ফ্রান্সে মোট ৫৬টি পরমাণু চুল্লি আছে। এসব চুল্লি ঠাণ্ডা করতে সাধারণত নদীর পানি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তা করতে গিয়ে নদীর পানির তাপমাত্রা যেন নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম না করে, সে বিষয়ে আইন রয়েছে। তবে অন্তত আগামী ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেই আইন প্রয়োগ স্থগিত করেছে সরকার।

ফলে নদীর পানির তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। যেমন দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গলফ্যাশ এলাকার গ্যারন নদীর পানির তাপমাত্রা প্রায় ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে বলে জানান স্থানীয় পরিবেশকর্মী জ্য-পিয়ের ডেলফু।

তিনি বলেন, ফ্রান্সে গত কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠছে। সে কারণে গ্যারন নদীর পানি অনেক কমে গেছে। এই অবস্থায় পরিস্থিতি আরো খারাপ করছে গলফ্যাশের পরমাণু চুল্লি। কারণ চুল্লি ঠাণ্ডা করতে আট ঘনমিটার পানি দরকার। কিন্তু শীতলীকরণ প্রক্রিয়া শেষে মাত্র ছয় ঘনমিটার পানি নদীতে ছাড়া হচ্ছে। বাকিটা বাষ্প হয়ে উড়ে যাচ্ছে।

ডেলফু বলেন, পানির তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় খাদ্যচক্রের ওপর প্রভাব পড়ছে। উষ্ণ পানি মাইক্রো-অ্যালজি ধ্বংস করে দেয়। এই অ্যালজিগুলো ছোট মাছের খাবার। আবার ছোট মাছ হচ্ছে বড় মাছের খাবার। এছাড়া উষ্ণ পানিতে বেশি ব্যাকটেরিয়া থাকে। ফলে এই পানিকে পানযোগ্য করতে বেশি রাসায়নিক ব্যবহার করতে হয়।

দক্ষিণ ফ্রান্সের বিস্তৃত এলাকা জ্বলছে। দাবানল গ্রাস করছে বনভূমি, ঘরবাড়ি, মাঠ। বোর্ডো শহর গত ছয় দিন ধরে দাবানলের কবলে। ১৪ হাজার মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয়া হয়েছে। অনেকে এখানে ছুটি কাটাতে এসেছিলেন। দাবানলের গ্রাসে জ্বলছে ইউরোপ, জ্বলছে ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগাল। দক্ষিণ ফ্রান্সের বিস্তৃত এলাকা জ্বলছে। দাবানল গ্রাস করছে বনভূমি, ঘরবাড়ি, মাঠ। বোর্ডো শহর গত ছয় দিন ধরে দাবানলের কবলে। ১৪ হাজার মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয়া হয়েছে। অনেকে এখানে ছুটি কাটাতে এসেছিলেন।

এ ব্যাপারে ফ্রান্সের সব পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনাকারী সংস্থা ইডিএফ-এর যোগাযোগ করা হলে সংস্থার মুখপাত্র ইমেলে জানান, এখন পর্যন্ত চালানো তদন্তে পরমাণু চুল্লির কারণে আশেপাশের জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

প্যারিস ইউনিভার্সিটি ডোফার ক্লাইমেট ইকোনমি ডাইরেক্টর আনা ক্রেটি জানান, বর্তমান পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সংস্কার ও নতুন পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ফ্রান্স ১৫০ বিলিয়ন ইউরো বা ১৪ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য এমন বরাদ্দ না করলেও এই খাতের উন্নয়নে লাল ফিতার দৌরাত্ম কমাতে নতুন আইন করছে ফ্রান্স।

ইউরোপের মধ্যে ফ্রান্সই একমাত্র দেশ যারা ২০২০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা ইইউ ঠিক করেছিল সেটিতে পৌঁছতে পারেনি। ২০২০ সালের মধ্যে একটি দেশের জ্বালানি চাহিদার ২৩ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে মেটানোর লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করছিল ইইউ। ফ্রান্স করেছে মাত্র ১৯ শতাংশ।

সূত্র : ডয়চে ভেলে

 


আরো সংবাদ



premium cement