১৫ মে ২০২৪, ০১ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলকদ ১৪৪৫
`


ইউক্রেনের বুচা শহরে হাত-বাঁধা লাশের ছড়াছড়ি, সংঘাতে ব্যাপক প্রাণহানি

বুচা শহরের রাস্তায় রুশ সামরিক যানের ধ্বংসাবশেষের সামনে রুটি ও খাবার হাতে এক ইউক্রেনীয় - ছবি : সংগৃহীত

কিয়েভকে অবরুদ্ধ করে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সরকারকে উৎখাতের যে স্বপ্ন রাশিয়া দেখছিল তার প্রথম কবর রচিত হয়েছে ইউক্রেনের শহর বুচার একটি সরু রাস্তায়।

ওই সময়টি আসে গত ২৪শে ফেব্রুয়ারি। ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে কিয়েভের কাছে বুচা নামের ওই শহরে পৌঁছে গিয়েছিল রুশ বাহিনী। সেখানে রাশিয়ার একটি ট্যাংক ও সাঁজোয়া বহর ইউক্রেনীয় বাহিনীর অ্যামবুশে পড়ে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়। পাঁচ সপ্তাহ তুমুল লড়াইয়ের পর ওই এলাকা থেকে সরে যায় রুশ বাহিনী।

রুশ সৈন্যদের শেষ দলটি গত শুক্রবার বুচা থেকে সরে যাওয়ার পর বিবিসির সাংবাদিকদের একটি দল সেখানে যায়। কিন্তু, আগ্রাসন শুরুর দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে রুশ বাহিনী কেন গতি হারিয়েছিল, তার একটা ধারণা পাওয়া যায় ওই শহরের রাস্তার পরিস্থিতি দেখে।

প্রমাণ বা নির্ভরযোগ্য কোন তথ্য ছাড়াই রাশিয়া বলেছিল, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধের দিকে মনোযোগ বাড়ানোর জন্যই তারা কিয়েভ থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করেছে।

মস্কোর সরকার বলছে, মধ্য ইউক্রেনে তাদের বাহিনীর যে লক্ষ্য ছিল, তা ইতোমধ্যে পূরণ হয়েছে। আসলে কিয়েভ দখলের কোনো পরিকল্পনাই তাদের ছিল না।

কিন্তু আসল সত্যটা হলো, ইউক্রেনীয় বাহিনীর অপ্রত্যাশিত প্রবল ও সুসংগঠিত প্রতিরোধই রুশ বাহিনীকে কিয়েভের বাইরে ঠেকিয়ে দিয়েছে। বুচার রাস্তায় আগুনে পোড়া ও গলে যাওয়া দীর্ঘ সামরিক বহরই তার প্রমাণ।

যুদ্ধের দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে রুশ বাহিনীর দম বেরিয়ে গেয়েছিল। বিমানে চড়িয়ে আনা যায় এমন হালকা সাঁজোয়া যানে চেপে রুশ এলিট ছত্রীসেনারা বুচায় ঢুকেছিল।

তারা এসেছিল কয়েক মাইল দূরের বিমানবন্দর হস্টোমেল থেকে। আগ্রাসনের শুরুর দিকেই হেলিকপ্টারে নামা রুশ ছত্রীসেনারা ওই বিমানবন্দরটিকে দখল করেছিল। কিন্তু তারপর থেকেই তাদেরকে প্রতিনিয়ত ইউক্রেনীয় বাহিনীর তীব্র প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে হয়েছে।

কিয়েভের পথে রুশ সামরিক বহরটি বুচার দিকে অগ্রসর হওয়ার পরই কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হয়। শহরটিতে ঢোকার রাস্তাটি ছিল সোজা ও সরু - অ্যামুবশ করার জন্য যা ছিল উপযুক্ত।

রুশ বহরের ওপর ইউক্রেনীয় বাহিনী তুরস্ক থেকে আনা বায়রাখতার অ্যাটাক ড্রোন দিয়ে হামলা চালায় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। ইউক্রেনের স্বেচ্ছাসেবক প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরাও এ সময় ওই এলাকায় তৎপর ছিল।

তারা যেটা করেছিল তা হলো রুশ বহরের সামনের এবং পেছনের যানগুলোকে ধ্বংস করে তারা বহরটিকে দু'দিক থেকে আটকে দিয়েছিল।

বুচার স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ইউক্রেনীয় প্রতিরোধ বাহিনীর হামলায় রুশ বহরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়, অনেককে আটকও করা হয়।

রুশ সৈন্যরা কিন্তু বুচা ছেড়ে যাওয়ার সময় মোটেও মায়া-দয়া দেখায়নি। ইউক্রেনীয় বাহিনীর সৈন্যরা যখন শহরটিতে প্রবেশ করে তখন সেখানকার সড়কে অন্তত ২০ জনের মৃতদেহ পড়ে ছিল। অনেক লাশের হাত ছিল পেছন দিকে বাঁধা। শহরটির মেয়র জানান, তারা ২৮০ জনের লাশ জড়ো করে গণকবর দিয়েছেন।

রুশ বাহিনী আসার পরও যে অল্প কিছু বেসামরিক মানুষ শহরটিতে ছিলেন - তারা রুশ সৈন্যদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছেন। ক্রুশ্চেভ আমলের তৈরি ফ্ল্যাটের বাইরে বসে তারা কাঠ পুড়িয়ে রান্না করতেন। কারণ তাদের গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির লাইন কেটে দেয়া হয়েছিল।

স্বেচ্ছাসেবকরা এখন পশ্চিম ইউক্রেনের লাভিভ ও অন্যান্য জায়গা থেকে খাবারসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে আসছে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement