১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

সঙ্গীতজ্ঞদের নিয়ে বিটিভিতে ‘অংশীজন সভা’

-


বাংলা সঙ্গীতের মানোন্নয়ন ও বিকাশের লক্ষ্যে সম্মিলিত উদ্যোগ আর দেখা যায় না। এ বিষয়ে যার যেটুকু ভাবনা, তার সবটুকুই যেন ব্যক্তিগত পর্যায়ে থমকে থাকে। তেমনি এক থমথমে পরিবেশে গানের জন্য কিছু ভাবার ও করার প্রয়াস নিয়েছে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশন।
২৭ এপ্রিল সঙ্গীত-সংশ্লিষ্ট প্রায় সব স্তরের শিল্পী-কুশলী ও গবেষকদের ডেকে এক টেবিলে বসানো হয় ঢাকা কেন্দ্রের সভাকক্ষে। হয় সঙ্গীত নিয়ে বিস্তর আলোচনা। উঠে আসে অনেক অভিমত, পরিকল্পনা আর বাস্তবায়নের তাড়না।
এ সভায় আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল- ‘বাংলাদেশের সঙ্গীত : ঐতিহ্য ও সমকালীন চর্চা’। অংশীজন সভায় অংশ নিয়েছিলেন দেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পীদের পাশাপাশি, সঙ্গীত পরিচালক, গীতিকবি ও সুরকাররা। আরো উপস্থিত ছিলেন বিটিভির মহাপরিচালক ড. জাহাঙ্গীর আলম, সংসদ সদস্য অণিমা মুক্তি গোমেজ, ঢাকা কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার মাহফুজা আক্তারসহ বিটিভির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। উপস্থিত সঙ্গীত ব্যক্তিত্বদের তালিকায় ছিলেন খুরশিদ আলম, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, ফরিদা পারভীন, কিরণ চন্দ্র রায়, চন্দনা মজুমদার, শেলু বড়–য়া, সালমা আকবর, ফকির শাহাবুদ্দিন, মকসুদ জামিল মিন্টু, নাছির আহমেদ, হাসান মতিউর রহমান, আবু বকর সিদ্দিকী, আনিসুর রহমান তনু, ইউসুফ, চম্পা বণিকসহ আরো অনেকে। আলোচনা অনুষ্ঠানের এক ফাঁকে সঙ্গীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার ‘পদ্মশ্রী’ পদক প্রাপ্তিতে ফুল ও ক্রেস্ট প্রদান করে তাকে অভিনন্দন জানানো হয়। অংশীজন সভার শুরুতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক ও লোকসংস্কৃতি গবেষক সাইমন জাকারিয়া।

বিটিভির মহাপরিচালক তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গীতের ভবিষ্যৎ কি ক্ষয়িষ্ণু, এটি কি ক্রমেই ধূসর হতে যাচ্ছে- বর্তমান সময়ে এ প্রশ্নটি অনেক কষ্টদায়কভাবে আমাদের মধ্যে কাজ করছে। বাংলাদেশের সঙ্গীতের ঐহিত্য, বর্তমান ও ভবিষ্যত- এটিকে ঠিক করার জন্য করণীয় কী? আমরা কেন বাংলা গানের ঐতিহ্যকে হারিয়ে ফেলছি, লোকজ গান কেন হারিয়ে যাচ্ছে? এখানে শিল্পী, রাষ্ট্র ও বিটিভির কী করণীয়- এ ব্যাপারে আপনাদের পরামর্শ দিন; আপনারাই পলিসি মেকার হিসেবে কাজ করুন। আপনাদের মতামত ও পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দিতে বিটিভি মুখপাত্র হিসেবে কাজ করবে।’ এ ছাড়াও মহাপরিচালক তার বক্তব্যে, রেকর্ডিং স্টুডিওতে উন্নত টেকনোলিজর ব্যবহার ও প্রখ্যাত সঙ্গীতব্যক্তিত্বদের সৃষ্টিগুলোকে আর্কাইভ করে রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সংসদ সদস্য ও লোকসঙ্গীত শিল্পী অনিমা মুক্তি গোমেজ তার বক্তব্যে বলেন, ‘আজকের আলোচনার যে বিষয়বস্তু সেটি সময়োপযোগী একটি বিষয়। সঙ্গীতের সমকালীন অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সমস্ত শিল্পীদের একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে।’ নিয়মিতভাবে এমন মতবিনিময় সভা করা জরুরি বলেও তিনি মনে করেন।

সঙ্গীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশ টেলিভিশনের মধ্যে শিল্প সৃষ্টির পাগালামিটা থাকতে হবে, অভিনব চিন্তাধারা থাকতে হবে। সস্তা জনপ্রিয়তার দিকে ছুটলে চলবে না। বিটিভির অনুষ্ঠানের ধরন ও মনন সবই হবে পরিশিলিত। গবেষণামূলক কাজ থাকতে হবে, নতুন ভাবনার প্রতিফলন থাকতে হবে। এখানকার কর্মীদের শুধু টেলিভিশনে চাকরি করলে হবে না, টেলিভিশনটিকে ভালোও বাসতে হবে।’
সঙ্গীতশিল্পী কিরণ চন্দ্র রায় তার বক্তব্যে বলেন, ঐতিহ্য সমকালীন চর্চা দিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হলে তখন ঐহিত্য আর ঐহিত্য থাকে না। সঙ্গীত সাধনার ক্ষেত্রেও এ ব্যাপারটি মাথায় রাখা জরুরি।
ফরিদা পারভীন বলেন, বাংলা গান আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতি, এটিকে বয়ে নিয়ে যেতে হবে। বাংলা গানের শুদ্ধতা বজায় রাখতে হবে এবং এ প্রজন্মের মধ্যে তা ছড়িয়ে দিতে হবে। আমি লালনের গানের একজন সাধক হিসেবে চাইব- রবীন্দ্র ও নজরুল চর্চা যেমন ঘটা করে হয়, লালনের গানের চর্চাটিও যেন তেমন হয়।


আরো সংবাদ



premium cement