`আধুনিক জাহেলিয়াত থেকে তরুণ প্রজন্মকে বাঁচাতে ইসলামী শিক্ষার বিকল্প নেই'
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৫ মে ২০২৪, ১৯:৩৭
‘আধুনিক জাহেলিয়াত থেকে তরুণ প্রজন্মকে বাঁচাতে ইসলামী শিক্ষার বিকল্প নেই’ এমন দাবি করেছেন দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা।
তারা বলেন, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ইসলাম ধর্মের শিক্ষাকে বাদ দিতে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র চলছে। তাদের লক্ষ্য এদেশের মুসলমানদের পারিবারিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে দেয়া। তরুণ প্রজন্মকে নৈতিকতাহীন ও মেধাহীন হিসেবে গড়ে তোলা। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় আমাদের নতুন প্রজন্মকে ধর্মহীন করে ফেলছে। বর্তমান ধর্মহীন শিক্ষা ব্যবস্থা নতুন প্রজন্মকে মাদক ও যৌনসহ বিভিন্ন আসক্তিতে আক্রান্ত করছে। আধুনিক জাহিলিয়াত থেকে তরুণ প্রজন্মকে বাঁচাতে ইসলামী শিক্ষার বিকল্প নেই। ইসলামি শিক্ষার প্রতিপাদ্য বিষয় হলো বিশ্বভ্রাতৃত্ব, নৈতিকতা, মানবিক মূল্যবোধ, মানবকল্যাণ, ত্যাগ ও বিনয়। সমাজে শান্তি, শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন তরুণ প্রজন্ম তৈরি করাই ইসলামি শিক্ষার উদ্দেশ্য। তাই মুসলমানদের শিক্ষা কারিকুলামে এমন উপাদান থাকা চাই, যা শিক্ষার্থীকে দুনিয়া ও আখিরাতে সফলকাম করবে এবং সমাজের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের উপযোগী করবে।
শনিবার (২৫ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের আকরাম খাঁ হলে শিক্ষা গবেষণা সংসদ ঢাকার উদ্যোগে আয়োজিত শিক্ষা ব্যবস্থার অতীত ও সাম্প্রতিক শিক্ষাক্রম পরিবর্তন-জাতির প্রত্যাশা শীর্ষক সেমিনারে বক্তরা এসব কথা বলেন।
দৈনিক নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ও বিসিএসআইআর সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান। প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ইসলামি ইউনিভার্সিটির সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম. কোরবান আলী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক এবিএম ফজলুল করীম।
সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এটিএম ফজলুল হক, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম, অধ্যাপক ড. সাজ্জাদুর রহমান, বাংলাদেশ আদর্শ কলেজ শিক্ষক পরিষদের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ ড. ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া প্রমুখ।
প্রফেসর ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান বলেন, ইসলামের শিক্ষার অভাবেই মুসলিম জাতি আজ সমগ্র বিশ্বে বিপর্যস্ত ও পদদলিত। তাই হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেতে প্রয়োজন নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের আলোকে শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা। পাঠ্যবইয়ে বিদায় হজের ভাষণ বাদ দেয়া হয়েছে অথচ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণ বিদায় হজের ভাষণ। আজ ফিলিস্তিনে মুসলমানদের ওপরে গণহত্যা চালানো হচ্ছে। মানবতা আজ প্রশ্নবিদ্ধ বর্বর ইহুদিদের হত্যাকাণ্ড দেখে। তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের উমর ফারুক কবিতাটি পড়ে শুনান এবং আফসোস করেন বলেন যে মুসলমানদের এই দেশে পাঠ্যবই থেকে এই কবিতাটি বাদ দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, দেশের ৯০ শতাংশ নাগরিক মুসলমান। ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি নার্সারি থেকে সর্বস্তরে আবশ্যিক করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ ওহির জ্ঞান শিক্ষা করা ছাড়া কোনো মানুষের পক্ষে নিজের প্রকৃত পরিচয় লাভ করা সক্ষম নয়।
তিনি বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়ে মুসলমানদের পারিবারিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে দেয়া হচ্ছে। মুসলমানরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে অবদান রেখেছেন, কিন্তু অস্ত্র ও পারমাণবিক বোমা বানায়নি। মুসলমানরা ইনসাফ ও ন্যায় বিচার দিয়ে শাসন করেছে। নতুন প্রজন্মকে আধুনিক জাহিলিয়াত থেকে বাঁচাতে ইসলামী শিক্ষামুখী করতে হবে।
প্রফেসর ড. এম. কোরবান আলী বলেন, ইসলাম একটি যুক্তিবান্ধব, বাস্তব ও পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। মানবজীবনের প্রতিটি বিষয়ের বিধান ইসলামে অত্যন্ত চমৎকারভাবে বর্ণিত হয়েছে। অথচ এদেশে ৯০ শতাংশ মুসলিমদের সন্তানরা ইসলাম ধর্মের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে না। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষা নীতির বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র চলছে। তারা ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্ত রুখে দিতে হবে। শিক্ষার সর্বস্তরে ইসলাম ধর্মের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
অধ্যাপক এ বি এম ফজলুল করিম প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে বলেন,‘আজ প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার কুফল দেখে আতঙ্কিত হতে হয়। আজ দেশে নীতি-নৈতিকতার বড় অভাব। ফলে জনগণ ভয়ভীতি ও অসহায় অবস্থায় এমনভাবে সম্মুখীন হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ঘুষ, দুর্নীতি, ছিনতাই, ধর্ষণ, কালোবাজারির মতো গুরুতর সব অপরাধ এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে গেছে। অফিসের বড় কর্তা থেকে শুরু করে বয়-বেয়ারা পর্যন্ত প্রায় সর্বস্তরের কর্মচারী দুর্নীতিগ্রস্ত। স্বামীর সামনেই স্ত্রীকে ধর্ষণ, বাবার লাশের জন্য বসে থাকা মেয়েকে ধর্ষণ, প্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণ, হত্যার মতো নৃশংস ও মর্মান্তিক খবর প্রতিনিয়তই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। নৈতিকতার এ বিপর্যয় জাতীয়ভাবে আমাদের অসহায়ভাবে সবাইকে অবলোকন করতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, এ বিপর্যয় থেকে উদ্ধারের উপায় সম্পর্কে একটু নিরপেক্ষ মন নিয়ে ভেবে দেখলে সবাই এ কথা স্বীকার করবেন যে, ধর্মীয় শিক্ষা মানুষকে নৈতিকতা শিক্ষা দেয়। আর নৈতিকতা মানুষকে অপরাধ থেকে দূরে রাখে। ইসলামের মূলনীতি শিক্ষার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা উন্নত চরিত্রের অধিকারী সৎ ও নিষ্ঠাবান নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।
সভাপতির বক্তব্যে আলমগীর মহিউদ্দিন বলেন, মুসলমানরা আজ ঐক্যবদ্ধ নয়। আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকে হবে এবং আল্লাহ পথে থাকতে হবে। মালয়েশিয়া ও ইরানসহ অনেক দেশে উচ্চ মাধ্যমিক স্নাতক স্তর পর্যন্ত সব মুসলিম শিক্ষার্থীর জন্য ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি বাধ্যতামূলক চালু আছে। আমাদের দেশেও বর্তমানে ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি নার্সারি থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করার দাবি উঠেছে। বিশ্ব মানবতার শান্তি প্রতিষ্ঠায় নৈতিক গুণাবলিসমৃদ্ধ জাতি গড়ে তোলার একমাত্র পথ হলো সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার নির্দেশিত পথে চলা। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন,‘নিশ্চয়ই ইসলাম আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য একমাত্র জীবনাদর্শ।
সেমিনারে অন্যান্য বক্তারা বলেন, আদর্শ শিক্ষা দেয়ার সর্বোত্তম সময় হলো স্কুল-কলেজের শিক্ষাজীবন। কেননা আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনের নীতিনির্ধারক। কাজেই পূর্ণাঙ্গ আদর্শ মানুষ হওয়ার প্রধান ও একমাত্র শর্ত হলো নৈতিক ও মূল্যবোধের জ্ঞানার্জন এবং জ্ঞানে সমৃদ্ধ হওয়ার লক্ষ্যে সর্বদা জ্ঞানান্বেষণ করা। সে অনুযায়ী নিজেকে পেশ করা এবং সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় উপনীত হওয়া।কিন্তু বর্তমান শিক্ষাক্রম অনুসারে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি থাকলেও সে বিষয়ে পাবলিক পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে না। ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা ইসলামী শিক্ষা অধ্যয়নে মনোযোগী হচ্ছে না। প্রকৃতপক্ষে ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি পড়লেও প্রকৃত ইসলামী জ্ঞানার্জনে তারা উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে। তাছাড়া বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীরা ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান লাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা