০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫
`


বিমুখ পাঠক ফেরাতে কী করছে পাবলিক লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষ?

- ছবি - বিবিসি

বাংলাদেশে গত এক দশকে পাবলিক লাইব্রেরিতে পাঠকের সংখ্যা অনেক কমেছে। ঢাকাসহ দেশের ৬৪ জেলাতেই তরুণদের পাঠাভ্যাসে যেমন ঘাটতি দেখা যাচ্ছে, তেমনি অনেক জায়গাতেই পাড়া-মহল্লার পুরনো ছোট লাইব্রেরিগুলো বন্ধ হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ গ্রন্থাগার অধিদফতরের অধীনে দেশে মোট ৭১টি পাবলিক লাইব্রেরি আছে। এর বাইরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাথে যুক্ত লাইব্রেরির সংখ্যা প্রায় এক হাজারের মত।

এছাড়া বিশেষ গ্রন্থাগার এবং ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা লাইব্রেরি আছে আরো প্রায় দেড় হাজারের মত। কিন্তু এইসব গ্রন্থাগারের বেশিরভাগই পাঠক আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হচ্ছে। যারা পড়তে যান তাদেরও বড় অংশ যান চাকরির পরীক্ষা বা বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে।

কী অবস্থা দেশের পাবলিক লাইব্রেরিগুলোর?

বাংলাদেশে গত এক দশকে পাবলিক লাইব্রেরিতে পাঠকের সংখ্যা অনেক কমেছে।

একদিকে গত এক দশকে পাঠক কমে যাওয়া এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বহু জেলাতেই পাবলিক লাইব্রেরিগুলোর অবস্থা ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়েছে, সেই সাথে অনেক জায়গাতেই পাড়া-মহল্লার পুরনো ছোট লাইব্রেরিগুলো বন্ধ হয়ে গেছে বলে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

এজন্য তরুণদের মধ্যে পাঠাভ্যাসে যেমন ঘাটতিকে যেমন দায়ী করা হয়, তেমনি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আর ইন্টারনেটের মাধ্যমে মানুষের জিজ্ঞাসা আর কৌতূহল মেটানোকেও কারণ বলে মনে করেন কেউ কেউ।

অন্যদিকে, পাবলিক লাইব্রেরিগুলোতে যথেষ্ট বই না পাওয়া এবং আধুনিকায়ন না হওয়া নিয়ে পাঠকদেরও অভিযোগ আছে বিস্তর।

বাংলাদেশের প্রধান পাবলিক লাইব্রেরী, শাহবাগের সুফিয়া কামাল গণগ্রন্থাগারটির চারটি রিডিং রুমের তিনটি-ই এই মুহূর্তে বন্ধ। বাকি একটি রিডিং রুমে পাঠক-সংখ্যা এখন অনেক কম।

কর্তৃপক্ষ বলছে, মহামারির সময় বেশ কয়েক মাস বন্ধ ছিল গ্রন্থাগার।

এরপর যখন খোলা হয়েছে তখনো স্বাস্থ্যবিধি মেনে আসন বিন্যাস করতে গিয়ে সেখানে পাঠকের আসা কমাতে হয়েছে।

কিন্তু কর্তৃপক্ষ স্বীকার করছে, সামগ্রিকভাবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আগের চেয়ে পাঠক সংখ্যা অনেক কমেছে।

সুফিয়া কামাল গণগ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে, ২০২০ সালের আগেও সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন হাজার পাঠক আসতেন। কিন্তু ২০২২ সালে সে সংখ্যা নেমে দাঁড়িয়েছে দৈনিক ১৪৮ জনে।

কেন পাঠক আকৃষ্ট করা যাচ্ছে না?

পাবলিক লাইব্রেরি যেখানে মূলত নানা বয়সের এবং আগ্রহের পাঠকের জন্য সাহিত্য, গবেষণা এবং বিষয়ভিত্তিক বই থাকে, সেই জায়গাটি যেন এখন তরুণ পাঠকের কাছে আর আগের মত আবেদন তৈরি করতে পারছে না।

পাঠক কমে যাওয়ার পেছনে কর্তৃপক্ষ বলে থাকেন পাঠাভ্যাস কমে যাওয়ার কথা। কিন্তু পাঠকদের অভিযোগ তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বই না পাওয়া, নতুন প্রকাশিত প্রয়োজনীয় গ্রন্থের অপ্রতুলতা এবং পুরনো পরিচালনা পদ্ধতির কারণে লাইব্রেরি আকর্ষণ হারাচ্ছে।

সামায়লা সাবিহা নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী বিবিসিকে বলেন, কোনো গবেষণাধর্মী কাজ করতে হলে পাবলিক লাইব্রেরিতে যান তিনি, তবে সব সময় প্রয়োজনীয় সাহায্য পান না।

‘ধরুন যে বইটা খুঁজছি, সেটা পাওয়া যায়। কিন্তু এখানে খোঁজার একটা ব্যাপার আছে। এখানে (পাবলিক লাইব্রেরি) বই খোঁজার নিয়ম হচ্ছে সার্চ (কম্পিউটারে) করে নিয়ে নিতে হয়। কিন্তু দেখা গেল হয়ত ওই সময় ইলেক্ট্রিসিটি থাকলো না, না হলে হয়ত ওখানে লোক থাকে না। তাছাড়া আমাদের এখনো লাইব্রেরি কার্ড করা হয়নি, ফলে বই নিয়ে (বাড়ি নিয়ে) পড়তে পারি না। এসব কারণে দেখা গেল অনেক সময়ই বই পাওয়া যায় না, কিছু কিছু সময় পাই,’ বলেন তিনি।

তিনি বলছিলেন, পাবলিক লাইব্রেরির চরিত্র আধুনিক হয়নি এখনো, যে সাহায্য খুঁজতে যান একজন পাঠক সেটুকু যেন নির্বিঘ্ন হয় সেটি নিশ্চিত করা জরুরি।

সাবিহার কয়েকজন সহপাঠীও বলছিলেন, অনেকেই এখন অ্যাকাডেমিক বা গবেষণার কাজে সরাসরি লাইব্রেরিতে আসতে চান না।

তার বড় কারণ ইন্টারনেটের কল্যাণে প্রয়োজনীয় তথ্যসূত্র অনেক সহজেই পেয়ে যাওয়া সম্ভব।

পাঠক ফেরাতে কী করছে কর্তৃপক্ষ?
গণগ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ বলছে, এখনো যেটুকু অভ্যাস আছে মানুষের সেটি আরো কিভাবে বাড়ানো যায়, সে চেষ্টা করা হচ্ছে।

গণগ্রন্থাগার অধিদফতরে মহাপরিচালক মোঃ আবুবকর সিদ্দিক বিবিসি বাংলাকে বলেন, পাঠকের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য নিজেদের সংগ্রহের বইকে ই-বুকে রূপান্তর এবং ভ্রাম্যমান লাইব্রেরির মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকাতেও বই পড়ার অভ্যাস তৈরি ও চালুর চেষ্টা করা করছেন তারা।

তিনি বলেছেন, সুফিয়া কামাল গণগ্রন্থাগারে এক লাখ ৭০ হাজারের মত বই আছে, এর মধ্যে ১৮ হাজার বইকে ইতিমধ্যে স্ক্যান করে বইগুলোকে ই-বুক করা হয়েছে। ‘বাকি বইগুলোও আস্তে আস্তে ই-বুক করা হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আরেকটা উদ্যোগ হচ্ছে, বইকে পাঠকের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়ার জন্য এক সময় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমান লাইব্রেরি একটা প্রকল্প ছিল, এখন সেটা আমরা (গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর) টেক-ওভার করেছি। ভ্যানে করে মানুষের কাছে প্রত্যন্ত এলাকায় বই নিয়ে যাচ্ছি।’

সুফিয়া কামাল গণগ্রন্থাগারটি সাময়িক সময়ের জন্য শাহবাগ থেকে সরে রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন ভবনে যাচ্ছে।

২০২৪ সাল নাগাদ নতুন আঙ্গিকে নতুন ভবনে ফিরে আসবে পাবলিক লাইব্রেরি।

কর্তৃপক্ষের আশা তখন হয়ত বিপুল পাঠককে একই সময় পড়তে দেয়ার স্থান সংকুলান হবে, আর বইয়ের সংখ্যাও বাড়বে বহুগুণ।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
বিএনপির হাতে শ্রমিকের রক্তের দাগ : ওবায়দুল কাদের নিপীড়িতরাই বিজয়ী হ‌বে : রিজভী ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থীদের ওপর ইসরাইলি সমর্থকদের হামলা অবিলম্বে ১০ম ওয়েজবোর্ড গঠন করুন : বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতারা হজ ব্যবস্থাপনায় অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে : ধর্মমন্ত্রী ই-মেইলে বোমার হুমকি : বন্ধ দেয়া হলো দিল্লির ১০০ স্কুল হাসপাতালের পৌঁছেছেন খালেদা জিয়া নির্বাচনের প্রস্তুতি ও প্রচারণা দেখতে আ'লীগকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বিজেপি হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হলেন খালেদা জিয়া বৃহস্পতিবার স্কুল-কলেজ খোলা না বন্ধ, সিদ্ধান্ত জানায়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে আকস্মিক বন্যার সতর্কতা জারি

সকল