২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনায় আর্থিক সঙ্কটে লক্ষাধিক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক পরিবার

করোনায় আর্থিক সঙ্কটে লক্ষাধিক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক পরিবার - ছবি : নয়া দিগন্ত

চাকরি শেষে অবসর ভাতা পেতে পদে পদে ভোগান্তিতে পড়ছেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকরা। বেসরকারি স্কুল কিংবা কলেজ থেকে অবসর নেয়ার পর নির্ধারিত অবসর ভাতার অর্থ পেতে দীর্ঘ দিন ধরেই নানা জটিলতাও পোহাতে হয় শিক্ষকদের। শিক্ষক নেতৃবৃন্দের দাবি করোনাকালে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের এই দুর্ভোগ কমাতে সরকারি একটি নির্দেশ এবং প্রয়োজনীয় তহবিল (ফান্ড) বাড়ানোর মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। আর এর জন্য দরকার শুধু সরকারের সদিচ্ছা আর উদ্যোগ। 


অসবরপ্রাপ্ত অনেক শিক্ষক জানান, একে তো আমাদের এখন চাকরি নেই। এরপরে আবার করোনার প্রভাবে ঘরবন্দী সবাই। অনেক শিক্ষকের অন্য কোনো আয় নেই। সরকার যদি দেশের লক্ষাধিক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের আর্থিক দৈন্য আর অসুবিধার কথা বিবেচনা করে তহবিলের অর্থ সংস্থানের মাধ্যমে অবসর ভাতার টাকা এককালীন দিয়ে দেয়ার আদেশ জারি করে তাহলে এই শিক্ষক পরিবারের দুর্ভোগ ও অর্থকষ্ট কিছুটা হলেও কমবে। আর এ জন্য অতিরিক্ত বাজেট বা অর্থেরও কোনো প্রয়োজন হবে না। শুধু একটি আদেশ জারি করে অবসর ভাতার এই টাকা দিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিলেই হবে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বেসরকারি স্কুল এবং কলেজের শিক্ষকদের অবসর ভাতা দেয়ার জন্য সরকারিভাবেই গঠন করা হয়েছে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড। বেসরকারি কোনো স্কুল বা কলেজ থেকে একজন শিক্ষক অবসর নেয়ার পর তার সর্বশেষ চাকরির গ্রেড অনুযায়ী মূল বেতনের (বেসিক বেতন) ৭৫ মাসের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ তিনি অবসর ভাতা হিসেবে প্রাপ্ত হবে। আর ২৫ মাসের সমপরিমাণ অর্থ কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে প্রাপ্ত হবেন। আগে শিক্ষকরা অবসর ভাতা এবং কল্যাণ ভাতার অর্থ পেতে দীর্ঘ পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হতো। পরে শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই সময় কমিয়ে এখন তিন বছর করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে নানা জটিলতার কারণে নির্ধারিত এই তিন বছরেও অনেক শিক্ষক তার অবসর ভাতা পান না। শিক্ষককে তার পাওনার অর্থ পেতে পদে পদে ভোগান্তি আর দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়। 

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির পর থেকে বিশ^ব্যাপী করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে বর্ণনাতীত আর্থিক কষ্টে রয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অবসরপ্রাপ্ত অনেক শিক্ষক পরিবার। শিক্ষকরা তাদের অবসর ভাতা পাওয়ার জন্য যোগাযোগ করেও সফল হচ্ছেন না। করোনার এই সঙ্কটের সময়ে দেশের বেসরকারি বিভিন্ন স্কুল কলেজের প্রায় লক্ষাধিক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দ্রুততম সময়ে তাদের অবসর ভাতার দাবি করেছেন। 

বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির (বাকশিস) মহাসম্পাদক ড. এ কে এম আব্দুল্লাহ নয়া দিগন্তকে জানান, আগে শিক্ষকদের অবসর ভাতা পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতো। যদিও সেই সময় এখন অনেকটাই কমে এসেছে। তবে করোনার এই সময়ে সরকার শুধু একটি নির্দেশ দিলেই আমরা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকরা দ্রুত অবসর ভাতা পেতে পারি। আমরা আশা করব সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। অবসরে যাওয়া কয়েকজন শিক্ষক এই প্রতিবেদককে জানান, তিন বছরের আগে কোনো শিক্ষকই তাদের ভাতার টাকা পাচ্ছেন না। আবেদন জমা দিয়ে আমাদের অপেক্ষায় থাকতে হয়। ফান্ড সঙ্কটের কারণে আমাদেরকে বছরের পর বছর ঘুরতে হয়। শিক্ষকতার বাইরে যাদের আয় উপার্জনের অন্য কোনো মাধ্যম নেই তারা বেশি দুর্ভোগে পড়েন। অথচ সময় মতো অবসর ভাতা পেলে শিক্ষকরা তাদের পরিবার নিয়ে শেষ বয়সে একটু স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারেন।

 
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের সচিব অধ্যক্ষ শরীফ আহমদ সাদী গতকাল মঙ্গলবার নয়া দিগন্তকে জানান, অবসর সুবিধা তহবিল (ফান্ড) সঙ্কটের কারণে আমরা সব শিক্ষককে আবেদন সময়মতো নিষ্পত্তি করতে পারছি না। প্রতি মাসে আমাদের বোর্ডে কমবেশি ৭০০ আবেদন জমা পড়ে। আর এই আবেদন নিষ্পত্তি করতে আমাদের প্রতি মাসে প্রয়োজন হবে ৭২ কোটি টাকা। কিন্তু আমরা এখন প্রতি মাসে পাচ্ছি মাত্র ৫৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ একটি বড় অঙ্কের টাকা প্রতি মাসেই ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। আর ৫৬ কোটি টাকায় আমরা মাত্র ৫০০ শিক্ষকের আবেদন নিষ্পত্তি করতে পারি। অর্থাৎ এভাবে প্রতি মাসেই ২০০ এর বেশি আবেদন পরের মাসে গিয়ে যুক্ত হয়। ফলে ইচ্ছা থাকার পরেও আমরা অবসরপ্রাপ্ত সব শিক্ষকের আবেদন যথাসময়ে নিষ্পত্তি করতে পারি না। তবে তহবিল সঙ্কটের এই সমস্যা কেটে গেলে প্রত্যেক শিক্ষক চাহিদামাত্রই তাদের অবসর সুবিধার অর্থ পাবেন।


আরো সংবাদ



premium cement