১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
চিকিৎসকের কাছে রোগীর সময় না পাওয়া

নৈতিক বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত

-

ডাক্তার ও রোগীর সম্পর্ক নিয়ে দেশে তীব্র বিতর্ক রয়েছে। রোগীদের প্রধান অভিযোগ, ডাক্তাররা তাদের প্রয়োজনীয় সময় দেন না। রোগের বিস্তারিত বিবরণ শুনতে আগ্রহী নন। ডাক্তারের কাছে রোগীরা কতটুকু সময় পান; এ নিয়ে সহযোগী একটি দৈনিক সীমিত পর্যায়ে মাঠ জরিপ করে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ডাক্তাররা রোগীপ্রতি তিন মিনিট সময় দিচ্ছেন। একজন মানুষের সুস্থ হয়ে উঠতে প্রথমে দরকার রোগ শনাক্ত হওয়া। এতে রোগের লক্ষণ বুঝতে চিকিৎসকের সরাসরি যাচাইয়ের প্রয়োজন পড়ে। এত অল্প সময়ে একজন ডাক্তারের পক্ষে তা করা আদৌ সম্ভব কিনা সে প্রশ্ন রয়েছে। এ অবস্থায় ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্রে অনেকে শঙ্কায় থাকেন, নিরাময় লাভের চেয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগেন।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ১০ রোগীকে ৩০ মিনিটের কম সময়ে ডাক্তার ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন। প্রতিবেদকের কাছে রোগীরা তাদের অসন্তোষের কথা জানান। তারা জানান, সমস্যার কথা খুলে বলার আগে ডাক্তার লিখতে শুরু করেন। রোগী দেখার কিছুটা ভিন্ন কৌশল প্রাইভেট চেম্বারে। সেখানে একাধিক রোগীকে রুমে ডাকেন। দু’জন মিলে পাঁচ থেকে ছয় মিনিট সময় পান কথা বলার জন্য। সব জায়গায় চিকিৎসার ধরন একই। কিছু বলে ওঠার আগে ডাক্তার ওষুধ লিখতে শুরু করেন। এরপর পাশে লেখেন পরীক্ষা-নিরীক্ষার একটি তালিকা। কয়েক দিন পর পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে দেখা করতে বলেন। সাধারণ রোগের চিকিৎসা পরামর্শ এক দুই মিনিটে দেয়া যায়। কিন্তু রোগ জটিল হলে তখন এত অল্প সময়ে ব্যবস্থাপত্র দেয়া কিভাবে সম্ভব? বহু রোগী আছেন তারা চিকিৎসকের চেম্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সন্তোষজনক চিকিৎসার জন্য।
অসুখ সারাতে ওষুধের মতো চিকিৎসকের ওপর ‘আস্থা’ রাখা গুরুত্বপূর্ণ। রোগী যদি কথা বলে সন্তুষ্ট হয়; যদি মনে করেন তার জটিলতা ডাক্তারকে বলতে পেরেছেন, তখন ডাক্তারের প্রতি বিশ্বাস জন্মে। চিকিৎসকের প্রতি আস্থাশীল হলেই সঠিক ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন মনে করেন রোগীরা। এতে এক ধরনের মানসিক প্রশান্তি আসে। আরোগ্য লাভে এটি গুরুত্বপূর্ণ।
সাশ্রয়ী হওয়ায় সরকারি হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশি থাকে। বিপরীতে পর্যাপ্ত ডাক্তার নেই বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির কথা সরকার জোর গলায় দাবি করে। তাহলে সরকারি হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ডাক্তার নিয়োগ দিতে অসুবিধা কোথায়, তা বুঝে আসে না। প্রাইভেট চিকিৎসায়ও রোগীরা কম সময় পাওয়ার হেতু কী? এখানে মানুষ উচ্চমূল্য পরিশোধ করে চিকিৎসা নিতে আসেন। চিকিৎসাসেবার পরিবর্তে ডাক্তাররা কি তাহলে তাদের আয়কে বাড়িয়ে নিতে চাচ্ছেন? চারদিকে লোভ লালসার যে সীমাহীন বিস্তার, তার কি প্রভাব পড়েছে চিকিৎসকদের ওপর? এমন হয়ে চিকিৎসা বাণিজ্যে রূপ নেয়। যদিও এ ধরনের অভিযোগ ঢালাওভাবে দেয়ার অবকাশ নেই। কিছু ডাক্তার এবং হাসপাতাল রয়েছে যেখানে মানুষ এখনো চিকিৎসা পান।
চিকিৎসক একজন রোগীকে কতক্ষণ সময় দেবেন এর ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। তবে রোগীকে এতটুকু সময় অন্তত দেয়া উচিত যাতে অসুবিধার বিষয়টি খুলে বলতে পারেন। এ ধরনের একটি নৈতিক বাধ্যবাধকতা চিকিৎসকদের থাকা জরুরি। বিষয়টি সরকার একটি নিয়মের অধীনে আনতে পারে। ডাক্তারদের আচরণের ওপর ভিত্তি করে তাদের জন্য বিশেষ পুরস্কারের ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। থাকতে পারে তিরস্কারের ব্যবস্থা।


আরো সংবাদ



premium cement