১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
দুর্নীতির বাড়-বাড়ন্ত

বন্ধের উপায় কী

-

নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের অঙ্গীকার ঘোষণা করে ক্ষমতায় এসেছে বর্তমান সরকার। দলটি গত সাড়ে ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। কিন্তু কমা দূরের কথা, দুর্নীতি এখন পুরো দেশ-সমাজকে গ্রাস করেছে। কোনোরকম রাখঢাক ছাড়া দুর্নীতি চলছে সমাজের সর্বত্র। জিরো টলারেন্সের ঘোষণা ইশতেহারের পৃষ্ঠা থেকে বাইরে বেরুতে পারছে না। দুর্নীতির যেকোনো খবর সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের যেন গা-সওয়া হয়ে গেছে। স্পষ্ট হয়েছে, আমরা সব দেশের চেয়ে আলাদা। এখানে সবকিছু ভিন্নভাবে চলবে।
উন্নয়নের প্রতিটি মেগাপ্রকল্পে সময় ও ব্যয় উপর্যুপরি বৃদ্ধির প্রবণতা থেকে স্পষ্ট ছিল যে, এসবের পেছনে সংশ্লিষ্টদের স্বার্থ জড়িত। পরে শুধু মেগা প্রকল্প নয়, সরকারের প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পের একই পরিণতি ঘটছে। অনেক প্রকল্প নেয়া হয় সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়া। নির্বাচনী হলফনামায় প্রার্থীদের কারো কারো সম্পদ পাঁচ বা ১০ বছরে হাজার গুণ বেড়ে যাওয়ার মতো স্বীকৃত তথ্য জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ পেয়েছে। কেউ প্রশ্ন তুলছেন না, এত স্বল্প সময়ে কিভাবে এত সম্পদ অর্জন করলেন তারা।
দুর্নীতি দমন কমিশন সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন। তবে সংস্থাটি কেন শুধু ক্ষমতাসীনরা যাকে চায় তার দুর্নীতি খুঁজে বেড়ায়, ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা বড় বড় দুর্নীতিবাজের একজনকেও ধরে না, এর কোনো ব্যাখ্যা নেই। দেশে এমন একটি পরিবেশ পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে, সাবেক পুলিশপ্রধানের দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণ হাতে পেয়েও প্রকাশের সাহস করেননি জাতীয় দৈনিকের স্বনামধন্য এক সম্পাদক। অন্যদের অবস্থা সহজে বোধগম্য।
সবার যখন মুখ বন্ধ তখন দুর্নীতি পরিণত হয় জাতীয় নীতিতে। পরিস্থিতির এতটাই অবনতি ঘটে যে, দুর্নীতি করলে শাস্তি পেতে হয় ওই কথাটিও ভুলতে বসেছি আমরা। সম্প্রতি সাবেক সেনাপ্রধান, পুলিশপ্রধানের অনিয়ম-দুর্নীতির খবর প্রকাশের পর থেকে আরো কিছু শীর্ষ আমলার দুর্নীতির খবর এসেছে। ছাগলকাণ্ডে ধরা পড়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য। তাদের এ অবিশ্বাস্য বিত্ত-বৈভবের মালিক হওয়ার বিষয়টি অনেকে মধ্যপ্রাচ্যের শেখদের সম্পদের সাথে তুলনা করছেন। এ নিয়ে জাতীয় সংসদে আলোচনাও হয়েছে, সরকারি দলের এমপিরাও দুর্নীতির সমালোচনা করলেন। তবে তারা কেবল আমলাদের দুর্নীতি দেখেছেন। রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, শিল্পপতিসহ সমাজের অন্য সব খাতে যারা বড় বড় দুর্নীতির সাথে জড়িত তাদের নাম মুখে নেননি।
এসব ঘটনায় একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে, মাত্রাতিরিক্ত হলে শুধু বস্তু পাত্র উপচে পড়ে না, দুর্নীতির মতো অবস্তুক জিনিসও ভুঁইফুঁড়ে বেরিয়ে আসে। দুর্গন্ধ এমনভাবে ছড়াতে শুরু করে যে, আর ঢাকা দেয়া যায় না। আমাদের দেশের অবস্থা হয়েছে ঠিক তেমনি।
সবশেষে উঠে এসেছে এনবিআরের প্রথম সচিব ও তার পরিবারের অঢেল সম্পদের তথ্য। প্রশ্ন উঠেছে, দুর্নীতির এ রাহুর গ্রাস থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় কী। কেউ বলছেন, আমলাদের জমা দেয়া সম্পদের হিসাববিবরণী প্রকাশ এবং অসাধুদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করলে দুর্নীতি কমবে। আমরা কেবল আমলা নয়, সবার দুর্নীতির মূলোৎপাটন চাই। এ জন্য সর্বপ্রথম যে সদিচ্ছা দরকার সেটি বর্তমান সরকারের কতটুকু রয়েছে তাই হলো বড় প্রশ্ন।


আরো সংবাদ



premium cement