১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
ঢাকার বাসযোগ্যতা তলানিতে

শুধু অবকাঠামোয় মনোযোগ

-


আমাদের দেশ ক্রমশ মনুষ্য বসবাসের উপযোগিতা হারাচ্ছে। বিশেষ করে শহরাঞ্চল। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকার অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে; তাহলে অদূর ভবিষ্যতে ঢাকা পরিত্যক্ত নগরীতে পরিণত হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। বিস্ময়কর হলো, এই যে ঢাকা সামগ্রিকভাবে বাসোপযোগিতা হারাচ্ছে, এ নিয়ে নীতিনির্ধারকদের কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। বরং তারা ব্যতিব্যস্ত রাজধানীকেন্দ্রিক অবকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে ।
এই উন্নয়ন যে প্রকৃত উন্নয়ন নয়, তার প্রমাণ- বিশ্বে বাসযোগ্য শহরের তালিকায় আবারো পিছিয়েছে ঢাকা। এর পরিবেশ স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিবেচনায় ১৭৩টি শহরের মধ্যে বাসযোগ্যতায় ঢাকা গত বছরের চেয়ে দুই ধাপ পিছিয়ে ১৬৮তম স্থানে রয়েছে। তালিকায় নিচের দিক থেকে ষষ্ঠ স্থানে আছে ঢাকা নগরী।
বাসযোগ্যতার তালিকা তৈরির সময় পাঁচটি মাপকাঠি বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছে স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা, সংস্কৃতি, পরিবেশ, শিক্ষা ও অবকাঠামো।

যুক্তরাজ্যের ইকোনমিস্ট গ্রুপের গ্লোবাল লিভেবিলিটি ইনডেক্স ২০২৪ বাসযোগ্যতার দিক থেকে শহরগুলোর এই তালিকা গত বুধবার প্রকাশ করেছে। তালিকায় গত বছর ঢাকার অবস্থান ছিল ১৬৬তম। এ বছর দুই ধাপ পিছিয়ে পাকিস্তানের প্রধান শহর করাচির ঠিক ওপরে স্থান পেয়েছে ঢাকা। প্রকাশিত তালিকায় সবার শেষে আছে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক। নিচ থেকে শীর্ষ থাকা অন্য শহরগুলো হলো ত্রিপোলি, আলজিয়ার্স ও লাগোস।
এমন বাস্তবতায় সরকারি বয়ানে উন্নয়নের যত কথা বলা হোক না কেন, প্রকৃতপক্ষে ঢাকা দিন দিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। এর কারণ, এ শহরের চারপাশের নদীগুলো দখল ও দূষণে মৃতপ্রায়। বায়ুদূষণে প্রতিনিয়ত বৈশ্বিক সূচকে এক নম্বর শহরের তালিকায় থাকছে। অবস্থা এত খারাপ যে, গত নভেম্বর থেকে মে পর্যন্ত রাজধানীবাসীকে অস্বাস্থ্যকর বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে হয়েছে। কখনো কখনো এর বাতাস খুব অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে পৌঁছেছে। তীব্র যানজটের ভোগান্তি ঢাকাবাসীর নিত্যসঙ্গী। নগরীর খালগুলো ময়লার ভাগাড় হওয়ায় মশার প্রজননকেন্দ্র। এতে করে মশার উপদ্রবে সারা বছর অতিষ্ঠ থাকতে হয় নগরবাসীকে। তাছাড়া ডেঙ্গুও এখন মহামারী রূপ নিয়ে হাজির হচ্ছে। অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়িতে রাস্তা-ঘাটের বেহাল দশা। গ্যাস নেই, বিদ্যুৎ নেই। ওয়াসার পানিতে ময়লা; যা ফুটিয়েও পানযোগ্য করা দুষ্কর। পাশাপাশি হাসপাতালগুলোতে সেবা নেই।

বাসযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকার পেছানোর কারণ ঢাকা শহরের যানজট, পরিবেশদূষণ, আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনার তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। এখানে সব মনোযোগ অবকাঠামো ও উঁচু উঁচু ভবন নির্মাণের দিকে। এ শহরে যেটুকু খালি জায়গা ছিল, সেখানে এখন ভবন নির্মাণের প্রতিযোগিতা চলছে।
যোগাযোগের ক্ষেত্রে সরকার মেট্রোরেলে মনোযোগ দিলেও ঢাকার গণপরিবহন পরিষেবার উন্নয়ন হয়নি। সাম্প্রতিক সময়েও নগর পরিবহনসেবা ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। যদিও পরিকল্পনাসংশ্লিষ্ট নগর সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীন উদ্যোগে বিভিন্ন প্রকল্পের পেছনে অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। কিন্তু সেবার মান বাড়ছে না।
এর কারণ, সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান ঢাকা থেকে অর্থনৈতিক ও অন্যান্য সুবিধা নিলেও নগরীর বাসযোগ্যতা নিশ্চিতের দায়বদ্ধতা তাদের নেই।

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল