১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
দেশে বায়ুদূষণ উদ্বেগজনক

বেশি ঝুঁকিতে শিশুরা

-

সম্প্রতি দেশে নির্মল বায়ু পাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠছে। সারা দেশে, বিশেষ করে ঢাকায় বায়ুদূষণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। রাজধানীর পরিস্থিতি এত ভয়াবহ যে, বৈশ্বিক সূচকে বায়ুদূষণের তালিকায় ঢাকার শীর্ষে অবস্থান এখন অহরহ ঘটছে। এতে আমাদের জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে। তবু বায়ুদূষণ রোধে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়ার কোনো গরজ সরকারের আছে বলে মনে হয় না; বরং অপরিকল্পিত উন্নয়নে দিন দিন পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। অবস্থা এমন যে, ঢাকা এখনই বসবাসের উপযোগিতা হারিয়েছে।
হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউটের (এইচইআই) প্রতিবেদনের বরাতে নয়া দিগন্তের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, শুধু ২০২১ সালে বাংলাদেশে দুই লাখ ৩৫ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর কারণ ছিল বায়ুদূষণ। মৃতদের মধ্যে ১৯ হাজারেরও বেশি ছিল শিশু। দেশে লোয়ার রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা নিম্ন শ্বাসনালীর সংক্রমণে পাঁচ বছরের কম বয়সী যত শিশুর মৃত্যু হয়, তার ৪০ শতাংশের জন্যই দায়ী বায়ুদূষণ। এছাড়া দেশে ব্যাপক হারে ওজোন গ্যাসের উপস্থিতি রয়েছে, যা বায়ুদূষণজনিত রোগের অন্যতম কারণ। দেশে হৃদরোগের লক্ষণাক্রান্ত হওয়া রোগীদের ৪০ শতাংশেরও বেশি ক্ষেত্রে মূলত দায়ী বায়ুদূষণ। ২০২১ সালে আমাদের দেশে বায়ুতে ওজোন গ্যাস থাকার কারণে সৃষ্ট ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিসঅর্ডারে (সিওপিডি) মৃত্যু হয়েছে ১৫ হাজার লোকের।

বায়ুদূষণে বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ, বিশেষ করে শিশুরা চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায়ই শিশুর ওপর বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব শুরু হয়ে সারা জীবন স্থায়ী হতে পারে। শ্বাস নেয়ার সময় প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুরা তাদের শরীরের ওজনের অনুপাতে বেশি বাতাস গ্রহণ করে। দূষিত বায়ুর সাথে দূষিত সব উপাদানও তাদের শরীরে ঢোকে। এর মারাত্মক প্রভাব পড়ে তাদের বিকাশমান ফুসফুস, শরীর ও মস্তিষ্কে। বায়ুদূষণজনিত রোগের প্রভাবে অপরিণত অবস্থায় ও কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ, হাঁপানি ও ফুসফুসের রোগসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয় শিশুর।
স্টেট অব গ্লোবাল এয়ারের (এসওজিএ) ২০২৪ সালের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়াসহ পূর্ব-পশ্চিম, মধ্য এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকার দেশগুলোতে বায়ুদূষণজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি।
বায়ুদূষণে দেশের মানুষের স্বাস্থ্যে, বিশেষ করে শিশুদের ওপর যে ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে, তা রোধে বায়ুর গুণগত মান উন্নয়নে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। কিন্তু সরকারের কোনো হেলদোল নেই। বায়ুদূষণের স্বাস্থ্যগত প্রভাব এবং স্বাস্থ্যসঙ্কট মোকাবেলায় সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তা থাকলেও জনস্বাস্থ্যবিষয়ক নীতিমালা উন্নত করতে নীতিনির্ধারকরা বড় উদাসীন।
আসলে আমরা নিজস্ব জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বায়ুদূষণ মোকাবেলায় একটি বড় চ্যালেঞ্জে পড়ে গেছি, এই সত্য অনুধাবন করার মতো লোক সরকারে রয়েছে কিনা তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ। অথচ শুধু আজকে আমাদের শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও বাতাসের গুণগত মান উন্নত করতে টেকসই সমাধান খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অবস্থা দেখে মনে হয়, জনস্বাস্থ্যের মতো বিষয়ে মনোযোগ দেয়ার সময় কারো নেই। তাতে সমস্যাও নেই। কাউকে তো জবাবদিহি করতে হয় না।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement