১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
সিলেটে টিলা ধসে প্রাণহানি

কিছু ব্যক্তির লোভের বলি

-

আবারো টিলাধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এবার সিলেট নগরীতে এর শিকার হয়েছে এক দম্পতি ও তাদের শিশুকন্যা। চট্টগ্রামসহ দেশের বেশ কিছু জায়গায় একই ধরনের মর্মান্তিক ধসের পুনরাবৃত্তি দেখা যায়। ক্ষমতাসীনদের একটি শ্রেণী নিজেদের লাভে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটাচ্ছেন। একদিকে টিলা কেটে মাটি সরিয়ে নিচ্ছেন, আবার এর ঢালে তৈরি করছেন বসতি। সেখানে ভাড়া দিয়ে অর্থ কামাচ্ছেন। এতে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটলেও লোভী গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সিলেটের ঘটনায় সরকারি দলের লোকদের দায়ী করছেন স্থানীয়রা।
গত সোমবার সকাল ৭টায় টিলা ধসে। এ সময় ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছিল। কেটে রাখা মাটি পাদদেশের তিনটি ঘরে ধসে পড়লে চারজন মাটিচাপা পড়েন। ঘটনার পরপর স্থানীয়রা একজনকে উদ্ধার করেন। বাকিদের উদ্ধারে যোগ দেয় ফায়ার ব্রিগেড। সরু রাস্তার কারণে সেখানে মাটি সরানোর কাজে এক্সকেভেটর প্রথমে পৌঁছাতে পারেনি। সিটি করপোরেশনের ৪০ কর্মী উদ্ধারে তাদের সাথে চেষ্টা চালান। শেষ পর্যন্ত উদ্ধারকাজে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নেয়া হয়। মৃত অবস্থায় ওই তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় বসতবাড়ি নির্মাণ বন্ধে ব্যবস্থা নেবেন, উল্টো তাদের একটি অংশ এ অবৈধ কর্মকাণ্ডের উদ্যোক্তা। সরকারের স্থানীয় প্রশাসনও এ নিয়ে তাদের ঠেকাতে ব্যর্থ। খবরে প্রকাশ, সিলেটে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হলে স্থানীয় প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় বসবাস না করতে মাইকিং করে জানিয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, শেষ মুহূর্তে এ ধরনের প্রচারণা কোনো কাজে আসে না। সতর্ক হয়ে কেউ ঘরবাড়ি ছাড়েন না। তবু স্থানীয় প্রশাসন নিজেদের দোষ এড়াতে এমনটি করে থাকে।
খবরে জানা যাচ্ছে, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও যুবলীগের এক নেতা চামেলিবাগের টিলাটি কাটাচ্ছিলেন। বড় একটি অংশ কেটে ঘর বানানো হয়। বৃষ্টিতে টিলার উপরের দিকে মাটি নরম হয়ে যায়। ভারী বৃষ্টিপাতের সময় তা ধসে ঘরের ওপর পড়ে। এই পাহাড় কেটে বেশ কিছু ঘর বানানো হয়। এতে শতাধিক মানুষ বসবাস করেন। স্থানীয় পরিবেশকর্মীদের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, সিলেটে বিভিন্ন জায়গায় ৩০টি স্থানে এভাবে টিলার পাশে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে ১০ হাজার পরিবার বসবাস করে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ বসতি প্রশাসনের চোখের সামনে রয়েছে। প্রশাসন আন্তরিক হলে এভাবে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় ঘর বানানোর কথা নয়।
দুর্ঘটনার পর জেলা প্রশাসক জানাচ্ছেন, পাহাড়ের নিচে যেখানে লোকজন বসবাস করছেন সেসব এলাকা চিহ্নিত করা হবে। প্রয়োজনে লাল ফ্ল্যাগ টাঙানো হবে। এ তৎপরতা সাময়িক, এরপর কয়েক দিন গেলে চারদিকে সুনসান নীরবতা নেমে আসবে। প্রশাসন আবার জেগে উঠবে যখন আরেকটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটবে।
টিলায় এভাবে ঘর বানিয়ে বসবাস অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সরকারি দলের স্থানীয় এসব নেতার এমন কাজে বাধা দেয়ার কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। সারা দেশে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ আবাসন তৈরি করে তারা অবাধে বাণিজ্য করে যাচ্ছেন। গত এক দশকে টিলা ধসে শুধু সিলেটে ৪০ জন মারা গেছেন। চট্টগ্রাম শহরে বিগত কয়েক বছর একই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ভাগ্য হলো, কোনোভাবে তারা সতর্ক হয়নি। সম্ভবত ভবিষ্যতেও আমাদের এ ধরনের আরো দুর্ঘটনা দেখতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement