১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
ফুটপাথের খাবারে জীবাণু

দেখার কেউ নেই

-


শহরে ফুটপাথের খাবার বিক্রি একটি জনপ্রিয় সংস্কৃতি। আমাদের শহরাঞ্চলে এ জনপ্রিয়তা তুমুল। বিশেষ করে ঢাকা শহরের সর্বত্র এর দেখা মেলে। এসব খাবার খেতে মজাদার হলেও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাবে স্বাস্থ্যসম্মত কিনা যথেষ্ট সংশয় থেকে যায়। বিক্রেতারা নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এসব খাবার তৈরি করে পরিবেশন করেন। ক্রেতারা ভিড় জমিয়ে ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে সাগ্রহে মুখরোচক এসব খাবার খান।
শহুরে মানুষ ফুটপাথের খাবার খেয়ে অসুস্থ হচ্ছেন। হাসপাতাল ও চিকিৎসকের চেম্বারে তাদের দেখা মেলে। প্রকাশ্যে জনপরিসরে এমন অনিরাপদ খাবার বেচাকেনা হলেও এতে কারো নজর নেই। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ফুটপাথে বিক্রি করা খাবারে উচ্চমাত্রার জীবাণু রয়েছে।

বিএফএসএ গত রোববার ‘স্ট্রিট ফুড ও এর ঝুঁকি’ শীর্ষক গবেষণার ফল প্রকাশ করে। রাস্তায় বিক্রি হওয়া এমন ছয়টি জনপ্রিয় খাবার গবেষণাগারে পরীক্ষা করা হয়। খাদ্যগুলো হচ্ছে চটপটি, ছোলা-মুড়ি, স্যান্ডউইচ, আখের রস, অ্যালোভেরা শরবত ও সালাদ। রাজধানীর ৩৭টি জায়গা থেকে ৪৫০টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। প্রতিটি খাবারে ই-কোলাই, সালমোনেলা এসপিপি ও ভিব্রিও এসপিপির জীবাণু পাওয়া গেছে। এগুলো সংক্রামক ব্যাধি ডায়রিয়া ও পেটের নানা পীড়া এবং দীর্ঘস্থায়ী অনেক রোগের কারণ। প্রতি প্লেট চটপটিতে সাত কোটি ২০ লাখ ই-কোলাই, সাড়ে ৭০০ সালমোনেলা ও সাড়ে ৭০০ ভিব্রিও ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। এই খাদ্যে জীবাণুর মিশ্রণ অতি উচ্চ মাত্রার। অন্যান্য খাদ্যগুলোতে এই জীবাণুগুলো বিভিন্ন মাত্রায় পাওয়া গেছে। ই-কোলাই মানুষের মলে থাকা একটা জীবাণু।

গবেষকরা বলছেন, দুই কারণে এসব খাদ্যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জীবাণু পাওয়া যাচ্ছে। প্রথমত আমাদের বিশুদ্ধ পানির উৎস নেই। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে খাদ্য বিক্রেতাদের স্বাস্থ্যবিধিসংক্রান্ত কোনো জ্ঞান না থাকা। ঢাকা শহরে খাওয়ার পানির প্রধান উৎস ওয়াসা। শহরের পানির পাইপ এবং পয়োনিষ্কাশনের লাইন বহু জায়গায় মিশে একাকার হয়েছে। এ কারণে ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ থাকে। রাসায়নিক ব্যবহার করেও একে পূর্ণমাত্রায় বিশুদ্ধ করা যায় না। ওয়াসার প্রধান নিজেই বলেছেন এই পানি ফুটিয়ে পান করার জন্য। ফুটপাথের বিক্রেতারা সরাসরি এই পানি ব্যবহার করে।
ফুটপাথের খাদ্য বিক্রেতারা নিজেদের বাসায় খাদ্য তৈরি করেন আবার সেটা একেবারে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পরিবেশন করেন। সাধারণত বস্তির ঘিঞ্জি অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্ন জায়গায় এই খাদ্য তৈরি করা হয়। নিরাপদ খাদ্যবিষয়ক কোনো জ্ঞান তাদের নেই। ফলে খাদ্যের পাত্র ডালা এগুলোকে জীবাণুমুক্ত রাখার নিয়ম তারা জানেন না। এ ব্যাপারে তারা অসচেতনও। পরিবেশনের জন্য ব্যবহৃত পাত্র, গামছা এমনকি তাদের হাতও পরিষ্কার থাকে না। এ কারণে মলের জীবাণুসহ আরো বিভিন্ন ক্ষতিকারক জীবাণু মানুষের খাদ্যে ঢুকে পড়ছে।

কলা পাকানো নিয়ে আরেকটি গবেষণার ফলাফল বিএফএসএ উপস্থাপন করে। গবেষকরা জানান, কলা পাকাতে ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে। একটি নির্দিষ্ট চেম্বারে তাপের মাধ্যমে কলা পাকানোর কথা। সেখানে কার্বোহাইড্রেটের মতো নিষিদ্ধ রাসায়নিক প্রয়োগ করে কলা পাকানো হচ্ছে। অনুষ্ঠানে একজন গবেষক জানান, এখন চালের মধ্যে ভারী ধাতু পাওয়া যাচ্ছে। তার মতে, দেশের পানি, মাটি, বাতাস- সবই দূষিত। ফলে যা-ই উৎপাদন হচ্ছে, তাতেই দূষিত কিছু থেকে যাচ্ছে।
একটি সুস্থ জাতির জন্য দরকার বিশুদ্ধ খাবার। আমাদের দেশে বিশুদ্ধ খাবার পাওয়া এখন প্রায় অসম্ভব। সব কিছুকে আমরা নিজেরা দূষিত করে ফেলছি। এরপর আমরা নিজেরাই খাদ্যে ভেজাল মিশাচ্ছি। এ অবস্থায় অরক্ষিত ফুটপাথে শুদ্ধ খাবার পাওয়া যাবে এমন চিন্তা করা বোকামি। তবে কর্তৃপক্ষ চাইলে নজরদারি করে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়তো সম্ভব।


আরো সংবাদ



premium cement