১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
আসছে নতুন বাজেট

অর্থনীতি বেসামাল

-

নতুন বাজেট আসছে শিগগির। এমন সময় এই বাজেট দেয়া হচ্ছে যখন অর্থনীতির পুরো বেহাল অবস্থা। সব সূচক ক্রমাগত নিম্নমুখী। এর কারণ হিসেবে সরকারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতার কথা ক্রমে স্পষ্টভাবে উচ্চারিত হচ্ছে সংশ্লিষ্ট নানা মহল থেকে। অর্থনীতির বিশ্লেষক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং বিশেষজ্ঞরা মুখ খুলতে শুরু করেছেন। বলা হচ্ছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি রোধে সরকারের ব্যর্থতার কথা। বাজার ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব প্রশাসনে বড় রকমের সংস্কারের কথা আসছে। সরকারের লাগামহীন খরচের ব্যাপারে আরো সাশ্রয়ী হওয়ার প্রয়োজনীয়তা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের কথা তুলছেন অনেকে। কিন্তু মোটা দাগে একটি কথা বলার আছে। সেটি হলো- সুশাসন। সুশাসনের অভাবেই যে অর্থনীতিসহ সার্বিকভাবে রাষ্ট্র ও সমাজের পশ্চাৎমুখী যাত্রার কারণ তা সবার কাছে স্পষ্ট। তাই বিশ্লেষকরা মনে করেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা না গেলে অর্থনীতির কোনো লক্ষ্যই অর্জন করা সম্ভব হবে না।
গত রোববার গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির সংবাদ ব্রিফিংয়ে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা সরকারের বড় ব্যর্থতা। বর্তমানে দেশের মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশে পৌঁছেছে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এটি শ্রীলঙ্কার চেয়েও বেশি। বেড়েছে ধনী ও গরিবের বৈষম্য। সরকার নিত্যপণ্যের শুল্ক কমালেও এর সুফল জনগণ পাচ্ছেন না। পাচ্ছেন এক ধরনের ব্যবসায়ী।
‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২৩-২৪ : তৃতীয় অন্তর্র্বর্তীকালীন পর্যালোচনা’ শিরোনামে সিপিডির ব্রিফিংয়ে গত পাঁচ বছরে মোটা চালের দাম বৃদ্ধির দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে বলা হয়, গরিব ও মধ্যবিত্তদের পণ্যে মুনাফাখোররা বেশি লাভ করছে।
অর্থনীতির এ বেহাল অবস্থার মধ্যে এবারের বাজেট আসছে। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে যতটা জানা যাচ্ছে, তাতে সরকারের সুশাসন প্রতিষ্ঠার কোনো সদিচ্ছার প্রতিফলন ভবিষ্যতেও দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা কম। নয়া দিগন্তের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, বরাবরের মতো এবারো বাজেটের প্রথমাংশে সরকারের উন্নয়নের ‘ফিরিস্তি’ তুলে ধরা হবে। থাকবে মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কথাও। তবে এর দায় চাপানো হবে সেই ‘রাশিয়া-ইউক্রেন’ যুদ্ধের ওপর। বলার চেষ্টা করা হবে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে রিজার্ভ বাড়বে এবং কমবে মূল্যস্ফীতি। তবে বাজেট বক্তৃতায় ব্যাংক খাতে বিপর্যস্ত অবস্থা ও শেয়ারবাজারের ধসের বিষয়ে কিছু থাকছে না। অর্থাৎ, সরকার ব্যর্থতার দায় নেবে না, কারণগুলোও খতিয়ে দেখবে না। কিন্তু রিজার্ভ পরিস্থিতি যারা অনুসরণ করেন তাদের কাছে এটি স্পষ্ট, বৈদেশিক ঋণ পাওয়ার বাইরে কোনোভাবে রিজার্ভ বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই। না রেমিট্যান্স থেকে, না রফতানি আয় বাড়িয়ে।
নানামুখী সঙ্কটে দেশের পুরো শিল্প খাতের দুর্দশার কথা কারো অজানা নেই। ডলার সঙ্কটে আমদানি হ্রাস করায় শিল্পের কাঁচামাল থেকে শুরু করে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমছে। পাশাপাশি গ্যাস ও বিদ্যুৎ সঙ্কটে স্থবির হয়ে পড়েছে অনেক শিল্পকারখানা। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। বাড়ছে না পণ্য রফতানি। বাড়ছে না তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ। ফলে শিল্পকারখানার উৎপাদন কমছে। বেসরকারি খাতে নতুন বিনিয়োগ ও বিকাশ মন্দাক্রান্ত। এ পরিস্থিতিতে বেসরকারি খাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সম্ভাবনা সামান্যই। তাই সামনে একটি ঘোলাটে অবস্থা দৃশ্যমান হবে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement