১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
অবৈধ বিদেশী শ্রমিক বিষয়ে রুল

নিষ্ক্রিয়তার অবসান হোক

-

বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে বিপুলসংখ্যক বিদেশী কর্মী বৈধ ও অবৈধভাবে কাজ করছেন। প্রায় দেড় দশক ধরে চললেও অবৈধদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সরকার বা কোনো সংস্থা। এমনকি বিদেশী কত নাগরিক এ দেশে কাজ করেন ওই হিসাবও দিতে পারে না সংস্থাগুলো। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পরিসংখ্যান ব্যুরো ও বিভিন্ন খাতের প্রতিনিধিত্বশীল সূত্রগুলো বিভিন্ন তথ্য দেয়, যার সাথে বাস্তবতার মিল নেই। দেশে বেকারত্ব বেড়ে এযাবৎকালের সর্বোচ্চ ১২ শতাংশে পৌঁছেছে। শিক্ষিত তরুণরা কর্মসংস্থানে মরিয়া হয়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। প্রায়ই তারা সাগরে ডুবে প্রাণ হারান। নানাভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন ও মৃত্যুর মুখোমুখি হন। ঠিক সে সময় তাদের স্বদেশে কর্মসংস্থানের বিরাট অংশ বিদেশীরা অবৈধভাবে দখল করেছেন। সরকার তা দেখে না, ব্যবস্থা নেয় না। এটি শুধু অনাকাক্সিক্ষতই নয়, অস্বাভাবিকও বটে। কিন্তু এটি-ই বাস্তবতা। দেশের সংবাদমাধ্যম, সামাজিক, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং অধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে বারবার দাবি তোলার পরও সরকারের নিষ্ক্রিয়তার অবসান ঘটেনি। বিভিন্ন সূত্রে দাবি করা হয়, বাংলাদেশে ১০ লাখের মতো বিদেশী নাগরিক অবৈধভাবে কাজ করছেন। তারা বছরে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ অবৈধ পথে নিজের দেশে পাঠাচ্ছেন। অবৈধ হওয়ায় তারা ট্যাক্স ও ভ্যাট না দিয়ে বাংলাদেশের টাকা পাচার করছেন। এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি দুর্বল হচ্ছে আর মানবাধিকার ও জাতীয় নিরাপত্তা পড়ছে হুমকির মুখে।
বিদেশী শ্রমিকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভারতীয়। কিন্তু এ বিষয়ে সরকারি দফতরগুলোর পরিসংখ্যান বিভ্রান্তিকর। ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় বাংলাদেশ থেকে। বাংলাদেশ সরকারের হিসাব ঠিক হলে এটি সম্ভব হতো না।
বাংলাদেশের যেসব খাতে বিদেশী শ্রমিক কর্মরত; তার মধ্যে প্রধান হলো- তৈরী পোশাক, টেক্সটাইল, বায়িং হাউজ, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎকেন্দ্র, মোবাইলফোন অপারেটর কোম্পানি, তথ্যপ্রযুক্তি, চামড়া শিল্প, চিকিৎসাসেবা, কার্গোসেবা, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিং, আন্তর্জাতিক এনজিও, বিজ্ঞাপনী সংস্থা, হোটেল ও রেস্তোরাঁ, প্রকৌশল, ফ্যাশন ডিজাইন, খাদ্য উৎপাদন ও বিপণন, পোলট্রি খাদ্য উৎপাদন এবং আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। শুধু পোশাক কারখানাগুলোতে এক লক্ষাধিক ভারতীয় কর্মরত বলে জানা যায়। ধারণা করা হয়, বায়িং হাউজে এ সংখ্যা আরো অনেক বেশি।
এখন বাংলাদেশে অবৈধভাবে কর্মরত বিদেশী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আগামী তিন মাসের মধ্যে কর্মরত বৈধ ও অবৈধ বিদেশী শ্রমিকের তালিকা এবং বিদেশী কর্মীরা কিভাবে এবং কোন চ্যানেলে বাংলাদেশ থেকে অর্থ বাইরে নিয়ে যান সে বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বর্তমানে বাংলাদেশ হলো লুটপাট ও অর্থপাচারের এক স্বর্গরাজ্য। ব্যাংক থেকে পাচার হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ রক্ষা করতে পারিনি আমরা। সে ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশ খানিকটা আশা জাগায়। সরকার বিদেশী শক্তির ওপর অনেকভাবে নির্ভরশীল- এটি কোনো গোপন বিষয় নয়। সুতরাং অবৈধ বিদেশী শ্রমিকদের ব্যাপারে তারা তাৎপর্যপূর্ণ কিছু করবে এমন আশা হবে বাতুলতামাত্র। তবে আদালতের নির্দেশ পরিপালিত হলে অন্তত প্রকৃত চিত্র জাতির সামনে আসতে পারে। আমরা জানতে পারব- কেন, কাদের কারণে, কিভাবে আমাদের ছেলেমেয়েরা সুন্দর জীবনযাপনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মৃতের লাশ পাওয়াও স্বজনের কাছে বড় প্রাপ্তি নয় কি!


আরো সংবাদ



premium cement