১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
৪০ বছর পর নিজের ঘরে

বাংলার জন্য কত যে দরদ!

-

একটি সহযোগী দৈনিকের পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, ষাট বছর বয়সী বীর বাহাদুর রায়, নেপালি নাগরিক ঘরে ফিরেছেন। কিন্তু এর আগে বাংলাদেশে কেটেছে জীবনের ৪০টি বছর। দীর্ঘ সময় বাংলাদেশে থাকায় বাংলা ভাষায় অনবদ্য কথা বলেছিলেন তিনি। এতটাই রপ্ত করেন যে, নেপালি ভাষায় কথা বলতে পারছিলেন না। নেপাল থেকে স্বজনরা তাকে নিতে এলে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। বীর বাহাদুরের ঘরে পৌঁছার খবর পাওয়া গেছে। এর আগে বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশনে আইনি প্রক্রিয়া শেষে সন্ধ্যার আগে বাংলাবান্ধা ও ভারতের ফুলবাড়ি সীমান্তে তাকে নিয়ে আসা হয়। এ সময় ভাতিজা রাজন চাচাকে পেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরেন। দীর্ঘদিন পরে স্বজনদের কাছে পেয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন বীর বাহাদুর। ভাতিজা রাজন চাচাকে উত্তরীয় ও টুপি পরিয়ে দিয়ে কদমবুসি করেন। এরপর রাজন বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার বাসিন্দা ফরেন, অলকসহ কয়েকজনের গলায়ও উত্তরীয় পরিয়ে দেন।
বীর বাহাদুরকে তার ভাতিজা রাজনের হাতে তুলে দেয়া হয়। নেপালের উপ-রাষ্ট্রদূত ললিতা সিলওয়াল, সেকেন্ড সেক্রেটারি ইউয়েজানা বামজাম, নেপাল রাষ্ট্রদূতের সচিব রিয়া ছেত্রী, তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি, বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুজয় কুমার চৌধুরী, পঞ্চগড় চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহসভাপতি মেহেদী হাসান খানসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ভারতীয় ইমিগ্রেশন পর্যন্ত বীর বাহাদুরকে এগিয়ে দেন নেপাল এম্বাসির সেকেন্ড সেক্রেটারি ইউয়েজানা বামজাম। কিছুটা প্রতিবন্ধকতা থাকায় বীর বাহাদুর ছোটবেলা থেকে স্থির থাকতেন না। ১৫ বছর বয়সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। ঘুরতে ঘুরতে অজান্তেই নেপাল থেকে ঢুকে পড়েন ভারতে। সেখান থেকে সীমান্ত দিয়ে কখন বাংলাদেশে প্রবেশ করেন, মনে নেই। এরই মাঝে তার ১০ বছর কাটে লালমনিরহাটসহ উত্তরের কয়েকটি জেলায়। তিনি দিনমজুর। হোটেল শ্রমিকের কাজ করেছেন। ঘুরতে ঘুরতে বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া উপজেলার মাস্টারপাড়া এলাকায় চলে যান। সেখানেই তার জীবনের কাটে ৩০টি বছর। সেখানে তিনি অলক বসাক নামে এক ব্যক্তির চাতালে শ্রমিকের কাজ করেন। কাজের বিনিময়ে পেটপুরে খাবার চাইতেন। নিতেন না টাকা পয়সা। তবে তার মধ্যে দেশে ফেরার টান ছিল। এক পর্যায়ে স্থানীয়রা তার কাছে বাড়ির ঠিকানা জানতে চাইলে ‘গোখরে বান্দিনা’ বললেও বিস্তারিত বলতে পারেননি। অনেকে বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের বাসিন্দা মনে করতেন। নেপালি ভাষা লিখতে দিলে স্বচ্ছন্দে লিখে ফেলেন। এরপর দুপচাঁচিয়া মাস্টারপাড়ার বাসিন্দা মেহেদী হাসান ফরেন বীর বাহাদুরের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে তার ঠিকানা জানতে চান। একটি গণমাধ্যমেও তাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে প্রশাসনিকভাবে বীর বাহাদুরের ঠিকানা খুঁজতে নেপাল এম্বাসিতে ছবি দেয়া হয়। দীর্ঘ সময় পরে গোরখে বান্দিনাতে তার পরিবারের কাছে ছবি দেখানো হলে বড় ভাবী বীর বাহাদুরকে চিনতে পারেন। দেশে পাঠাতে শুরু হয় আইনি প্রক্রিয়া। ছয় মাস পরে তাকে দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া পৌরসভার বাসিন্দা পলক কুমার বসাক বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে আমাদের মিল চাতালে কাজ করেছেন। কাজের বিনিময়ে শুধু খাবার খেয়েছেন, কোনো পারিশ্রমিক নেননি। আজকে তার পরিবারের হাতে তুলে দিতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। তাকে বিদায় দিতে বুক ভেসে যাচ্ছে। তার পরিবারের সদস্যরা আমাদের আমন্ত্রণ করেছেন দেশে যেতে। নেপাল রাষ্ট্রদূতের সচিব রিয়া ছেত্রী বলেন, ফেসবুকে নেপালি নাগরিকের দেশে ফেরার আকুতি জানানোর ভিডিও দেখে তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হই। ভাতিজা রাজনের হাতে বীর বাহাদুরকে তুলে দিয়েছি। আমরা চাই, তার জীবনের বাকি সময়টুকু কাটুক পরিবারের স্বজনদের সাথে।


আরো সংবাদ



premium cement