১৭ জুন ২০২৪
`
জাতিসঙ্ঘ শান্তি মিশন নিয়ে শঙ্কা

মানবাধিকারকে গুরুত্ব দিন

-


বাংলাদেশে গণতন্ত্র কোন অবস্থায় আছে দেশের ভোটের অবস্থার দিকে দৃষ্টি দিলে তা সহজে অনুমেয়। এখন সারা দেশে উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে। ‘নির্বাচন’ বলা হলেও কার্যত এটি ক্ষমতাসীনদের পছন্দের প্রার্থী বাছাইয়ের আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। বিরোধী দলের প্রার্থীদের প্রতিযোগিতায় আসার অবস্থা নেই। এমনকি সুযোগ নেই ক্ষমতাসীন দলের কারো স্বতন্ত্রপ্রার্থী হওয়ারও। এর আগে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনেও ভোটারদের সাড়া ছিল না। তারা ভোট দিতে যাননি। এখন দেশে মতপ্রকাশ ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার স্বাধীনতা পুরোপুুরি সরকারের ইচ্ছাধীন। মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশে-বিদেশে বিতর্কের শেষ নেই। গুমের শিকার হয়েছেন অনেকে। তাদের বিষয়ে তদন্ত করতে সরকার নারাজ। এ অবস্থায় জাতিসঙ্ঘের শান্তি মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজটি যারা করবেন তারা নিষ্কলুষ হবেন এটিই প্রত্যাশিত। কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশ জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষী মিশনে সুনামের সাথে কাজ করে আসছিল। এ জন্য মূলত আমাদের উচ্চ প্রশিক্ষিত ও পেশাদার সেনাবাহিনী কৃতিত্বের দাবিদার। তাই অল্প সময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রধান শান্তিরক্ষী জোগানদার হয়েছে। মিশনে তাদের কর্মকাণ্ডের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সরকারের স্বেচ্ছাচারমূলক কিছু কর্মকাণ্ডে সেনাসদস্যদের শান্তি মিশনে অংশ নেয়ার বিষয়টি হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে।
সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ শুরু থেকেই। সরকার এ অভিযোগ আগাগোড়া নাকচ করে এসেছে। এর পরিণতি কত সুদূরপ্রসারী হতে পারে, তারা তা উপলব্ধি করেনি। এখন শান্তি মিশনে যাওয়া কিছু সদস্যকে বাদ দেয়ার কথা উঠেছে। সম্প্রতি ডয়েচে ভেলে একটি প্রামাণ্যচিত্রে দেখিয়েছে, কিভাবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীরা শান্তি মিশনে নিয়োগ পেয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে অংশ নেয়া র্যাব সদস্যদের মানবাধিবার লঙ্ঘন বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ উপস্থাপন করেছে সংবাদমাধ্যমটি।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে এর আগে ২০২১ সালে র্যাব এবং এর শীর্ষস্থানীয় ছয় সদস্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়। গুম হওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধারে জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো জোরালো চাপ সৃষ্টি করে। তাতেও সরকার কর্ণপাত করেনি। র্যাব নিয়ে এর আগেও ডয়েচে ভেলে ডকুমেন্টারি করে। সেখানেও গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে একই অভিযোগ এনে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যানরা জাতিসঙ্ঘ থেকে প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেন। সর্বশেষ পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে তাতে জাতিসঙ্ঘ মিশনে বড় আকারে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
শান্তিরক্ষী মিশনে সদস্য নির্বাচনে কয়েক দফায় বাছাই হয়। কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণ হলে আমাদের সুনাম ক্ষুণœ হবে। মিশনে বাংলাদেশী সদস্য গ্রহণে সৃষ্টি হবে অনাস্থা। অচিরে মিশনে যাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারি আমরা। সেটি কারো জন্যই শুভ হবে না। এ ধরনের শঙ্কাজনক অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার একটিই পথ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করা। তাতে করে মিশনে যেতে ইচ্ছুক সদস্যদের নিষ্কলুষ প্রমাণ করা সম্ভব হবে। তাই শান্তি মিশন নিয়ে দুর্নাম ঘোচাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত। অভিযোগ নাকচ করার নীতি আর কাজ করবে বলে মনে হয় না।

 


আরো সংবাদ



premium cement