১৭ জুন ২০২৪
`
জালে মাছ ওঠেনি শেষ সময়েও

মৎস্যজীবীরা হতাশ কেন?

-

একটি সহযোগী দৈনিকের রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, রাঙ্গাবালী উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় নদী ও সাগরে বছরের শুরু থেকেই মাছের দেখা নেই। ইলিশের জন্য হাহাকার চলছে। মার্চ-এপ্রিল মাসে তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশ অভয়াশ্রমের নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেদের আশা ছিল ইলিশের দেখা মিলবে। কাক্সিক্ষত ইলিশের দেখা না পেয়ে হতাশ তারা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, বৃষ্টি না হওয়া এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে পানি গরম হওয়ায় ইলিশসহ মাছ ধরা পড়ছে কম। জেলেদের এমন দুঃসময়ের মধ্যে সোমবার ২০ মে থেকে শুরু হয়েছে সাগরে সব ধরনের মাছ ধরার ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা। এই সময়ে সংসারের খরচ, দাদন ও ঋণের টাকার জোগান হবে কোথা থেকে, দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।
দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন মৎস্য ঘাটে জেলেদের তেমন তৎপরতা নেই। আগুনমুখা নদীর তীরে জাল সেলাই করছেন একদল জেলে। দুই সপ্তাহ ধরে জাল মেরামত করছেন।
ট্রলারের মাঝি ছোট বাইশদিয়া ইউনিয়নের কোড়ালিয়া গ্রামের ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘সাগরে মাছ মিলছেই না; বরং জালে আটক পড়ছে ছোট কাঁকড়া। এতে ছেঁড়া পড়ছে জাল। দুরবস্থায় পড়েছেন অনেক জেলেই। তাই তীরে ফিরে এসেছি।’ কোড়ালিয়া গ্রামের জেলে মান্নান চৌকিদার বলেন, তেঁতুলিয়া নদীতে দুই মাসের অবরোধ গেছে। ভাবছি অবরোধের পর মাছ পামু। মাছের জন্য অপেক্ষা করতে ৬৫ দিনের অবরোধ আইয়া পড়ছে। জাইল্ল্যাগো গ্রাম ছাইড়া ঢাকা যাওয়া ছাড়া উপায় নাই।’ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, ‘ইলিশের প্রজনন নিশ্চিত করতে এবং উৎপাদন বাড়াতে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সাগরে সব ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা। নিষেধাজ্ঞাকালীন নিবন্ধিত জেলেকে দুই ধাপে ৮৬ কেজি করে চাল দেয়া হবে।’
রাঙ্গাবালী উপজেলায় ১৬ হাজার ৮০৯ জন নিবন্ধিত জেলে। জেলেদের দাবি, নিবন্ধনের বাইরেও অসংখ্য জেলে রয়েছে, যারা নিষেধাজ্ঞাকালীন সরকারি খাদ্য সহায়তা থেকে সবসময় বঞ্চিত।
আগুনমুখা নদীর পাড়ে ট্রলার মেরামতের কাজে ব্যস্ত জেলে মামুন হাওলাদার বলেন, ‘জাইল্যারা চাল পায় না। সরকার তো আমাগো লাইগা দেয়। কিন্তু আমরা পাই না। আমাগো চাল পায় খাইয়া যারা ভালো আছে তারা। এহন ৬৫ দিনের অবরোধ আইছে, আমরা এহন কী করুম কন? একটু খাইয়া লইয়া যে সময় পার করমু, মাছও তো পাই নাই। সঞ্চয় দূরের কথা, সংসার আর দাদন ঋণের টাকা দিমু ক্যামনে হেইডাই ভাবতাছি।’
উপজেলার কোড়ালিয়া মৎস্য সমিতির সভাপতি জহির হাওলাদার বলেন, ‘৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা মেনে দেশের জেলেরা যখন মাছ ধরা থেকে বিরত থাকবে তখন এক মাসের বেশি সময় ভারতের জেলেরা গভীর সাগরে মাছ ধরতে আসে। তাই দুই দেশের একই সময় নিষেধাজ্ঞা হলে সরকারের উদ্দেশ্য সফল হবে।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমাদের দেশের উপকূলীয় অভয়াশ্রমের জেলেরা বেশি সঙ্কটে। ইলিশের জন্য অক্টোবরে ২২ দিনের অবরোধ, নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত ৮ মাস জাটকা ধরা নিষেধ, মার্চ-এপ্রিল দুই মাস অভয়াশ্রমে মাছ ধরা নিষেধ এবং ৬৫ দিনের অবরোধ আছেই। এখন এই ৬৫ দিনের অবরোধটাই ভারতে ৬০ দিন, ১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত। আমাদের দেশে ২৩ জুলাই পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা থাকায় এক মাসের বেশি সময় জেলেরা বিরত থাকলেও ভারতের জেলেরা ঠিকই মাছ ধরতে পারছে। ফলে আমাদের দেশের জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দুই দেশের নিষেধাজ্ঞা সমান হওয়া আন্তঃদেশীয় একটি ব্যবস্থাপনা দরকার।


আরো সংবাদ



premium cement