১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
স্কুলের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা

ভয়াবহ আর্থিক সঙ্কটের চিত্র

-


মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর। নজিরবিহীন এ নির্দেশনা নিয়ে তোলপাড় চলছে মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে। অস্থিরতা দেখা দিয়েছে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে। কারণ, বেসরকারি স্কুলগুলো এ ভর্তির টাকা দিয়ে সারা বছর স্কুলের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। শিক্ষাবর্ষের প্রায় পাঁচ মাস পার হওয়ায় ভর্তির টাকার অর্ধেক খরচ হয়ে গেছে এসব প্রতিষ্ঠানে। এমন অবস্থায় সরকারি কোষাগারে টাকা জমা দেয়ার নির্দেশনা পেয়ে স্কুল সংশ্লিষ্টরা হতবাক। এর আগে কোনো সরকার এ ধরনের নির্দেশনা দেয়নি। সমালোচনার মুখে মাউশি চিঠির বিষয়ে সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। ঠিক কী কারণে ওই চিঠিটি দেয়া হয় তা কেউ স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না। গণমাধ্যমের রিপোর্টে বলা হয়েছে, চিঠিটি প্রত্যাহার করে নতুন নির্দেশনা দেয়া হতে পারে। তবে নতুন নির্দেশনায় কী থাকছে; তা নিশ্চিত নয়। তবে এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর- মাউশির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে টেলিফোনে দেয়া নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এমন নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ঘুরেফিরে বিষয়টি নির্দেশ করছে অর্থনৈতিক সঙ্কটের দিকে।

স্কুল-সংশ্লিষ্টদের মধ্যে এমন আলোচনার জন্ম দিয়েছে যে, দেশের চলমান আর্থিক সঙ্কটের সাথে এমন নির্দেশনার যোগসূত্র থাকতে পারে। এ মুহূর্তে দেশের অর্থনীতির অবস্থা যে গুরুতর নানাভাবে তা স্পষ্ট। বছরের পর বছর ধরে সুশাসনের অভাবে ব্যাংক খাত ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ব্যাংকগুলোতে নগদ অর্থের সঙ্কট চরমে। আমানতকারীদের মধ্যে গচ্ছিত টাকা ফিরে পাওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। টাকার বিপুল অবমূল্যায়ন, নজিরবিহীন মূল্যস্ফীতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কট অর্থনীতিতে সার্বিকভাবে মন্দাবস্থা তৈরি করেছে। রফতানি আয় এবং প্রবাসী আয় ক্রমাগত কমছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ বিপজ্জনক পর্যায়ে নেমে এসেছে।

অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, সরকারি কোষাগার প্রায় শূন্য। ব্যাংক খাত থেকে টাকা ধার নেয়ার মতো অবস্থা আর সম্ভবত নেই। এমনকি কাগজের নোট ছাপিয়ে কাজ চালানোর উপায়ও সম্ভবত নেই।
স্বাভাবিকভাবে সরকারের হাত পড়ছে ভিন্ন দিকে। মাত্র কয়েক মাস আগে সরকার অবসর ও কল্যাণ তহবিলের কথা বলে নতুন শিক্ষার্থীদের ভর্তির টাকা থেকে ১০০ টাকা করে নিয়েছে। এর আগে স্কুলগুলোর তহবিলে রক্ষিত প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে বলা হয়। তারও আগে সরকারি করপোরেশনগুলোর তহবিল নিয়ে একই ধরনের নির্দেশ জারি করে সরকার। এগুলো কিসের ইঙ্গিত তা না বোঝার কোনো কারণ নেই।
প্রশ্ন হলো, স্কুল তহবিলের অর্থ সরকার এভাবে চাইতে পারে কি না। এমনকি সরকারি স্কুল হলেও। সরকারের দায়িত্ব স্কুল ও শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রয়োজনীয় অর্থ ও উপায়-উপকরণের জোগান দেয়া। অতীতে সব সরকার তা করে এসেছে। বর্তমান সরকার শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে শুরু থেকে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে; যার কোনোটি গণমুখী বলে বিবেচিত হয়নি। এমন নেতিবাচক প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে স্কুলের অর্থ নেয়ার অধিকার কি সরকারের আছে?


আরো সংবাদ



premium cement