২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩০, ২০ মহররম ১৪৪৬
`
সবুজ জলবায়ু তহবিল নিয়ে প্রশ্ন

সরকারকে কুশলী হতে হবে

-

সবুজ জলবায়ু তহবিল বা গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড-জিসিএফের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গবেষণায় যেসব তথ্য উঠে এসেছে তা বাংলাদেশ ও একই রকমভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য উদ্বেগজনক। গবেষণায় তহবিলের হতাশাজনক ভূমিকার বিভিন্ন দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বলা হয়েছে, তহবিলটির অনাকাক্সিক্ষত ভূমিকায় জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশের ওপর ঋণের বোঝা বাড়ছে।
‘সবুজ জলবায়ু তহবিলে বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশের অভিগম্যতা : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’-শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জিসিএফে জবাবদিহি করার মতো অবকাঠামো নেই। নিজস্ব নীতিমালা লঙ্ঘন ও বৈষম্যমূলক আচরণ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া আছে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগও। বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর স্বীকৃতিপ্রাপ্ত জাতীয় প্রতিষ্ঠানে অর্থায়নকে অগ্রাধিকার দেয়া জিসিএফের মূলনীতি হলেও তা অগ্রাহ্য করে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে অর্থায়ন করা হচ্ছে।
সুশাসনের বিভিন্ন মানদণ্ডে ঘাটতি, প্রক্রিয়াগত ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় জিসিএফ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অর্থ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। জিসিএফ শুরু থেকে এমন শর্ত দিয়ে রেখেছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর তহবিল পাওয়া প্রায় নিষিদ্ধ করার পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এ তহবিলের সুফল যাদের পাওয়ার কথা, সেসব ক্ষতিগ্রস্ত দেশের কাছে পর্যাপ্ত এবং প্রত্যাশিত মাত্রায় সহায়তা পৌঁছায়নি।
অথচ এ তহবিল হলো জলবায়ুু অর্থায়নের জাতিসঙ্ঘের কাঠামোর আওতায় প্রতিষ্ঠিত একটি সংস্থা, যার মূল কাজ জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে অভিযোজন এবং প্রশমনের কাজে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করা।
টিআইবির গবেষণা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়া এবং এর ক্ষতি প্রশমনে বাংলাদেশের যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন, জিসিএফের মাধ্যমে তার বেশির ভাগ আসার কথা। কিন্তু এ তহবিলের কোনো সুফল বাংলাদেশসহ জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো পাচ্ছে না; বরং জিসিএফ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে বেশি অর্থ দিচ্ছে। গবেষণায় বলা হয়, জাতিসঙ্ঘের সবুজ জলবায়ু তহবিল (জিসিএফ) দুর্নীতিগ্রস্ত এবং তা লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ।
এ বিষয়ে জিসিএফের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদের সরকারের অবশ্য করণীয় আছে। সত্য যে, বাংলাদেশ প্রয়োজনের খুব সামান্য অর্থ পেয়েছে জিসিএফ থেকে। অনুদানের পরিবর্তে ঋণ নিতে বাধ্য হয়েছে বেশি। সরকারি পর্যায়ে প্রায়ই অনুদান দেয়ার দাবি তোলা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের তহবিল না পাওয়ার অন্যতম কারণ দুর্নীতি। মন্ত্রীরা মুখে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বললেও বাস্তবতা বিপরীত; বরং কিভাবে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে দুর্নীতির আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে তার বহু দৃষ্টান্ত আছে।
এ অবস্থায় জলবায়ু তহবিল ছাড় না করার জন্য জিসিএফকে দায়ী করে খুব বেশি ফায়দা হবে বলে মনে হয় না; বরং বাংলাদেশ যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে তাহলে অভ্যন্তরীণভাবে নিজস্ব ফান্ড তৈরি করা সম্ভব। গত ১৫ বছরে অবৈধ পথে কত লাখ কোটি টাকা শুধু বিদেশে পাচার হয়েছে সে তথ্য সবার জানা। তবে সরকার কুশলী হলে টিআইবির গবেষণার তথ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেনদরবার করতে পারে, যাতে জিসিএফ অনুদান দিতে বাধ্য হয়।


আরো সংবাদ



premium cement