১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
পরশুরামে সীমান্তের কহুয়া নদীতে ভাঙন

২৫ হাজার মানুষের দুর্ভোগ

-

ফেনীর পরশুরামে সীমান্তবর্তী একটি বাঁধ ভেঙে চারটি গ্রামের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। প্রতি বছর বর্ষায় এ কারণে বন্যায় ফসলহানি ও ঘরবাড়ি প্লাবিত হচ্ছে। সীমান্তের মানুষের ওপর প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি দুই দেশের সম্পর্কও প্রভাব ফেলে। এটি দেশের ভেতরে নদীভাঙন হলে অনেক আগে সংস্কার হতো। ভাঙন এমন জায়গায় হয়েছে- উভয় দেশের সম্মতি ছাড়া এখানে সংস্কার সম্ভব নয়। বাংলাদেশের মানুষ বছরের পর বছর ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।
খবরে জানা যাচ্ছে, পরশুরামের ধুবলার চাঁদ ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় একটি স্লুইস গেট রয়েছে। এর পাশে কহুয়া নদীর শাখায় ২০০৭ সালে ভাঙন দেখা দেয়। পরশুরাম পৌরসভাসংলগ্ন চারটি গ্রামের ২৫ হাজার মানুষ ভুক্তভোগী। স্থানীয় কৃষকরা জানান, প্রতি বছর বর্ষায় বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি হলে পাহাড়ি ঢলে তাদের ক্ষেতখামার ভাসিয়ে নিচ্ছে। এতে মাঠের ফসল মাঠে পচে গলে বিনষ্ট হচ্ছে। কৃষির ওপর নির্ভরশীল এলাকার মানুষ এ অবস্থায় কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা জানান, বন্যায় ১৮০ হেক্টর জমি নিয়মিত প্লাবিত হয়। বন্যার পানি শুধু ফসল নষ্ট করছে না। প্রায়ই ঢুকছে বসতবাড়িতে এবং তাদের মূল্যবান আসবাবপত্র ডুবিয়ে দিচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরশুরাম পৌরসভার মধ্যে পড়েছে। এতে রয়েছে ১ নম্বর ওয়ার্ডের ধুবলার চাঁদ, খোন্দকিয়া, বাউরখুমা ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাউরপাথর গ্রাম।
বাংলাদেশে ব্যাপক রাস্তাঘাট ও বাঁধ নির্মাণ হয়েছে। বিগত এক যুগে গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনা নির্মাণ ও সংস্কার হয়েছে। এ অবস্থায় পৌরসভার একটি এলাকা এভাবে পানিতে তলিয়ে যাবে- কল্পনা করা যায় না। ভাঙনের জায়গাটি দেশের ভেতরে হলে বহু আগে সংস্কার হয়ে যেত। কিন্তু ভাঙনের অংশটি পড়েছে ভারতের ভেতর। এটি সংস্কারে প্রয়োজন ভারতের অনুমতি। দেখা যাচ্ছে বিগত ১৭ বছরেও ভারতের কাছে থেকে আমরা বাঁধটি সংস্কারে সাড়া পাইনি। স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে আন্তরিক প্রচেষ্টা নিয়েছে কি-না তা নিয়েও দ্বিধা রয়েছে।
পরশুরাম বিলোনিয়া সীমান্তে ভূমি নিয়ে ভারতের সাথে দ্বন্দ্ব রয়েছে। সীমান্ত নদীগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দিকে ভেঙে ভারতে চর পড়ছে। এ জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বেশ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশী ভূমি রক্ষায় উদ্যোগ নিলে অনেক সময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা বাধা দেয়। বিতর্কিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে বাংলাদেশী কর্মকাণ্ড থামিয়ে রাখার চেষ্টা আমরা দেখি।
ভারত সীমান্তবর্তী ধুবলার চাঁদে যে ভাঙন সেটি সংস্কার করা হলে ভারতের কোনো আর্থিক ক্ষতি নেই। এখানে নিরাপত্তাগত কোনো সমস্যাও থাকার কথা নয়। এতে করে ২৫ হাজার মানুষ প্রতি বছরের বন্যা থেকে রেহাই পাবেন। এ ধরনের একটি সংস্কার কাজে ভারত সাড়া না দিয়ে কিভাবে থাকতে পারে, আমরা জানি না। ভারতকে আমরা দেশের রাস্তা ব্যবহার করতে দিচ্ছি, বন্দর ব্যবহার করতে দিচ্ছি। দেশটি যা চেয়েছে এ সরকারের আমলে, সবই পেয়েছে।
এ ব্যাপারে সরকারকে শিগগির সক্রিয় হওয়া দরকার। ভারতের সাথে বন্ধুত্বের যে দাবি সরকার করে তার সুযোগ নিয়ে অচিরে এটি সংস্কার করতে হবে। বাঁচাতে হবে কয়েক হাজার মানুষকে বন্যা থেকে।


আরো সংবাদ



premium cement