১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
শ্রমজীবীদের জীবন দুর্বিষহ

তীব্র গরমে আয় অর্ধেক

-

রাজশাহী, যশোর, খুলনা, চুয়াডাঙ্গাসহ সারা দেশে চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। রাজধানী ঢাকায়ও বইছে মাঝারি মাত্রার তাপপ্রবাহ। গত কয়েক দিনের টানা তাপদাহে ঢাকাসহ দেশের সব অঞ্চলে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। সহসা গরমের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে আসবে এমন আভাস নেই; বরং তীব্র গরমের কারণে দফায় দফায় বিশেষ সতর্কতা জারি করতে হচ্ছে আবহাওয়া বিভাগকে।
গরমে মৌসুমি রোগের প্রকোপ বেড়েছে। অতি গরমে বমি, ডায়রিয়া ও জ্বরে ভুগছেন অনেকে। গত কয়েক দিনে হিটস্ট্রোকে কয়েক জনের মৃত্যুর খবর ছাপা হয়েছে গণমাধ্যমে। এ ছাড়া জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, তাপপ্রবাহে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। মানুষ ক্লান্ত বেশি থাকছে। শরীর থেকে ঘাম বেরিয়ে পানিশূন্যতা তৈরি হচ্ছে, হিটস্ট্রোকে আক্রান্তের শঙ্কা বাড়ছে। বিশেষ করে বৃদ্ধ, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুদের স্বাভাবিক জীবনযাপন কঠিন হয়ে উঠেছে। এমনিতে বৃদ্ধদের মধ্যে হিটস্ট্রোকের প্রবণতা বেশি থাকে, সেটি বেড়েছে।
এই গরমে ঘরের বাইরে এলে খরতাপে শরীর ঝলসে যাওয়ার মতো যন্ত্রণা অনুভূত হচ্ছে, ঘাম ঝরতে থাকে প্রচুর। তৃষ্ণা বাড়ে। সব মিলিয়ে ভীষণ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। শ্রমজীবী মানুষ এবং যারা খোলা জায়গায় রোদে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের কষ্ট মাত্রাছাড়া। অসহনীয় তাপমাত্রায় পুরো দিন পরিশ্রম করতে না পারায় তাদের আয় কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে।
এমন গরমে কাজ করতে কার ইচ্ছা করে? কিন্তু শ্রমজীবীদের উপায় নেই। দিন শেষে তাদের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হয়। আছে সংসারের খরচ, নিজের খরচ আছে। কষ্ট হলেও কাজ করতে হচ্ছে তাদের।
জীবিকার তাগিদে এসব শ্রমজীবী ঘরের বাইরে বেরুতে বাধ্য হচ্ছেন, তবে তাদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গত কয়েক দিনের অসহনীয় গরমে ওষ্ঠাগত প্রাণ। কাঠফাটা রোদ আর ভ্যাপসা গরমে সীমাহীন দুর্ভোগ নিয়ে চলছে জীবন। কেউ বা গাছের ছায়ায় জিরিয়ে, আবার কেউ বা মুখে, মাথায় পানি ঢেলে একটু স্বস্তি পেতে চেষ্টা করছেন। কিন্তু তাপপ্রবাহের পাশাপাশি তীব্র গরমে তাতে কাজ হচ্ছে না। সকালে সূর্যের আলো ফুটতে না ফুটতে গরম শুরু হয়। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে তীব্র্রতা বাড়তে থাকে। সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত অসহ্য গরম থাকে। সন্ধ্যার পর তৈরি হয় অস্বস্তিকর গুমোট পরিবেশ। রাতে ভ্যাপসা গরম।
তীব্র গরমে যারা পণ্য বহনে নিয়োজিত তারা দিনে তিন-চারবারের বেশি মালামাল বহন করতে পারছেন না। রিকশা-ভ্যানচালক তাদের অবস্থাও করুণ। উপার্জন নেমে এসেছে অর্ধেকের কম। শরীর একটু ঠাণ্ডা না হলে আবার কাজে নামতে পারছেন না। বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীদের আয়রোজগার কমে গেছে। তীব্র রোদ মাথায় নিয়ে পণ্য সাজিয়ে বসে থাকলেও ক্রেতা খুব একটা নেই। বেহাল অবস্থা সড়কে চলা পরিবহন শ্রমিকদের। বিশেষ করে বাসশ্রমিকদের। বিরূপ আবহাওয়া উপেক্ষা করে প্রতিদিন কাজে নামতে হচ্ছে তাদের।
সব মিলিয়ে তাপপ্রবাহ সাধারণের জীবনযাত্রায় তীব্র প্রভাব ফেলছে। শুধু স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নয়, তীব্র গরমে শ্রম অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।


আরো সংবাদ



premium cement