১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
১৮টি মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন দিয়ে ৪০টি ট্রেন

এভাবে রেল থাকবে না

-

একটি জাতীয় দৈনিকের লালমনিরহাট সংবাদদাতা জানান, ১৯৬১ সালে আমেরিকা, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, হাঙ্গেরি ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ২২০০ থেকে ২৯০০ সিরিজের ৩৩টি ইঞ্জিন রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগের জন্য আনা হয়েছিল। ১৯৮১ সালের পরে ইঞ্জিন কেনা হয়নি এ বিভাগে। ২০১৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য আনা ২৯০০ সিরিজের (এমইআই-১৫) একটি ইঞ্জিন লালমনিরহাটকে দেয়া হয়। এসব ইঞ্জিনের ইকোনমিক আয়ুষ্কাল ২০ বছর হলেও আয়ুষ্কাল উত্তীর্ণ হয়ে গেছে আজ থেকে ৩৪ বছর থেকে ৪৬ বছর আগেই।
রেলওয়ের লালমনিরহাট দফতর জানায়, এই বিভাগের সেকশন ছয়টি, স্টেশন ৭৩টি, ট্রেন ৬৬টি, যার মধ্যে ২৬টি ট্রেনই বন্ধ। এর মধ্যে আন্তঃনগর ১৮টি এবং মেইল কমিউটার ২৯টি। কমিউটারের মধ্যে চলমান ২১টি এবং বন্ধ আটটি। লোকাল ট্রেন ২৪টির মধ্যে চলমান ছয়টি এবং বন্ধ বাকি ১৮টি। ইঞ্জিন প্রয়োজন ৬২টি, কিন্তু আছে মাত্র ৩২টি। তার মধ্যে ৪৬টি বছর পুরোনো। মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন এর ৩১টিই।
এসব ট্রেনের ইঞ্জিন ১৯৬১ সালে আমেরিকা থেকে ২২০০ সিরিজের (এমইজি-৯) ১১টি, ১৯৬৯ সালে কানাডা থেকে ২৩০০ সিরিজের (এমইএম-১৪) আটটি, কানাডা থেকে ১৯৭৮ সালে ২৪০০ সিরিজের (এমইএম-১৪) ৯টি এবং ১৯৮১ সালে হাঙ্গেরির ৩৩০০ সিরিজের (এমএইচজেড-৮) তিনটি ইঞ্জিন রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগে আনা হয়েছিল। এরপর ইঞ্জিন কেনাই হয়নি। ২০১৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগের জন্য আনা ২৯০০ সিরিজের (এমইআই-১৫) একটি ইঞ্জিন লালমনিরহাট বিভাগকে দেয়া হয়। এসব ইঞ্জিনের আয়ুষ্কাল ২০ বছর নির্ধারিত। আমেরিকা থেকে আনা ১১টি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে ৩৪ বছর আগেই। কানাডা থেকে আনা ১৮টির আয়ুষ্কাল ২৬ বছর আগেই শেষ। দ্বিতীয় ধাপে, কানাডা থেকে আনা ৯টির আয়ু ১৭ বছর আগেই শেষ হয়ে গেছে। হাঙ্গেরি থেকে আনা তিনটি ইঞ্জিনের আয়ুষ্কাল ৩৪ বছর পার হয়েছে। ইঞ্জিন তিনটির মেয়াদ ফুরিয়েছে ১৪ বছর আগেই।
লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগ জানায়, আয়ুষ্কাল উত্তীর্ণ ইঞ্জিন দিয়েই ছয়টি সেকশনে ৪০টি ট্রেন চালনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ইঞ্জিন ও ট্রেন চালক তথা ক্রু সঙ্কটে ২৬টি ট্রেন বন্ধ। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের এই ডিভিশনে মাত্র একটি ইঞ্জিন ছাড়া বাকি ৩১টি ইঞ্জিনই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এগুলোরই ১৮টি দিয়ে ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে এবং ছয়টি ইঞ্জিন কেন্দ্রীয় মেরামত কারখানায় (কেলোকা) পড়ে আছে। এছাড়া, যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চালনায় অনুপযোগী বাকি আটটি দিয়ে শান্টিং করা হচ্ছে। সব ক’টি ট্রেন পরিচালনায় ৬২টি ইঞ্জিনের প্রয়োজন। লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ের আছে ৩২টি ইঞ্জিন। এর মধ্যে ছয়টি মেরামত অযোগ্য হওয়ায় ‘কেলোকা’য় পড়ে আছে। ট্রেন পরিচালনায় অনুপযোগী আটটি ইঞ্জিনে শান্টিং কাজ করা হচ্ছে। ১৮টি মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন দিয়ে ৪০টি ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় সহকারী যন্ত্র প্রকৌশলী জানান, ক্রু স্বল্পতায় ট্রেন পরিচালনার জন্য অপরিহার্য ক্রু লিঙ্ক বজায় রাখা হচ্ছে না। দুর্ঘটনা কিংবা রিলিফ ট্রেন পাঠানোর প্রয়োজন হলে অন্য ট্রেন বাতিল কিংবা অস্বাভাবিক বিলম্ব করাতে হচ্ছে। তাছাড়া ক্রু অসুস্থ হয়ে পড়লে কিংবা ছুটিতে গেলেও ট্রেন বাতিল করার উপক্রম হয়।
দ্রুত ‘ক্রু’ নিয়োগ এবং ইঞ্জিন সংযোজন করা না গেলে চলতি বছর টাইম টেবিল ৫০ নম্বর অনুযায়ী ট্রেন পরিচালনা করা অসম্ভব। এসব সমস্যা সমাধানে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের (রাজশাহী) প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলীকে একাধিকবার চিঠি দেয়া হয়েছে। লাভ হয়নি কিছুই। কিন্তু এভাবে রেলওয়ে বাঁচবে না।


আরো সংবাদ



premium cement