১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
সারা বিশ্বে বিপুল খাদ্য অপচয়

অগণন মানুষ ক্ষুধার্ত

-

বিশ্বে চরম বৈষম্য বিরাজমান। শিক্ষা স্বাস্থ্য বাসস্থানের সুবিধায় মানুষের মধ্যে আকাশচুম্বী ব্যবধান। ন্যূনতম খাদ্য গ্রহণেও এটি প্রকট। বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাবে ১০ শতাংশ মানুষ অনাহারে ভুগছেন। ২০২৩ সালে আগের বছরের তুলনায় ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বিশ্বে ৪৬ লাখ বেড়েছে। রাতে পেটে ক্ষুধা নিয়ে ঘুমাতে যাওয়া মানুষের সংখ্যা ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ ৮২ কোটি ৮ লাখে দাঁড়িয়েছে। এ জন্য যুদ্ধ, সঙ্ঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন, মহামারীকে দায়ী করার চেষ্টা হলেও মূলত এর জন্য মানুষ প্রধানত দায়ী। খাদ্য নিয়ে মানুষের বিবেচনাহীন লালসার যে চিত্র পাওয়া যায় তাতে বিষয়টি স্পষ্ট।
জাতিসঙ্ঘ ‘ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স’ নামে একটি সূচক প্রকাশ করে। সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে ২০২২ সালের খাদ্য অপচয়ের পরিসংখ্যান দেয়া হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ওই বছর দিনে ১০০ কোটির বেশি মিল (একবেলার খাবার) অপচয় হয়েছে। জাতিসঙ্ঘ খাদ্য কর্মসূচির এক কর্মকর্তা হিসাব করে দেখিয়েছেন, এক বেলায় অপচয় হওয়া খাদ্য দিয়ে অনাহারে থাকা বিশ্বের সব মানুষকে খাওয়ানো সম্ভব। ২০২২ সালে অপচয় হওয়া খাবারের ২৮ শতাংশ রেস্তোরাঁ, ক্যান্টিন ও খাদ্য পরিষেবা ব্যবস্থাপনায়। কসাইখানা ও মুদি দোকানে হয়েছে ১২ শতাংশ। ধনী দেশগুলোতে কঠোরভাবে খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ব্যবসায়ীরা তাই মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার ফেলে দেন। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, এসব খাদ্য নিম্ন আয়ের দেশগুলোর মানুষ পেলে অনায়াসে তাদের ক্ষুন্নিœবৃত্তি করতে পারে। এমনকি দরিদ্র এলাকায় মানুষ নষ্ট হওয়া ও পচে যাওয়া খাবার খেয়েও জীবনধারণ করে। সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছেÑ ৬০ শতাংশ খাবার অপচয় হয় বাসাবাড়িতে। যেখানে চাহিদা অনুযায়ী খাবার প্রস্তুত করা কঠিন নয়। একটি পরিবারের যতটা প্রয়োজন ততটা খাবার তারা হাঁড়িতে চাপাবেন। দেখা যাচ্ছে, ধনীরা এ ব্যাপারে সীমাহীন বিলাসিতা দেখাচ্ছে। প্রয়োজনের চেয়ে বহু বেশি খাবার ডাইনিং টেবিলে হাজির করছে।

আমাদের দেশে করোনার পর দেখা যায়, ৩০ শতাংশ মানুষ খাদ্য ঘাটতিতে পড়েছে। ১৩ শতাংশ মানুষ ক্ষুধা পেটে ঘুমাতে যাচ্ছে। এই চরম একটি দরিদ্র দেশেও ধনীদের বাসায় খাদ্য অপচয় দেখা যায়। তারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত আয়োজন করে। আবার ডাইনিংয়ে খাবার রেখে হোটেলে গিয়ে খাওয়ার বিলাসিতা দেখায়। খাদ্য অপচয়ে এগিয়ে রয়েছে আমেরিকা, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশ। মুসলিম দেশে এ ধরনের অপচয় কোনোভাবে মানা যায় না, যেখানে দরিদ্রকে আহার জোটানোর আদেশ রয়েছে ইসলামে। এ ছাড়া আদেশে রয়েছে সংযম সাধনার। রমজানে সাওম পালনের আদেশ রয়েছে। সাওম সঠিকভাবে পালন করলে দেশগুলোতে অপচয় হওয়া দূরের কথা, বিপুল পরিমাণ খাদ্য বেঁচে যাওয়ার কথা, সে খাদ্য মুসলিম দেশগুলোতে সরবরাহ করতে পারত তারা। দরিদ্র দেশগুলোর বেশির ভাগ যেখানে মুসলিম। আমাদের দেশেও মুসলিমরা ইসলামের নীতি মেনে চলে না। ফলে রমজানে খাদ্য উদ্বৃত্ত হওয়ার বদলে ঘাটতি দেখা দেয়। প্রতিটি খাদ্যপণ্যের মূল্য এ সময় বেড়ে যায়।
২০২২ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ১০০ কোটি টনের বেশি খাদ্য অপচয় হয়েছে বিশ্বে। ক্ষুধার জ্বালায় বিশ্বে যখন বিপুলসংখ্যক মানুষ চরম পীড়ায় রয়েছে, তখন অপচয়কে ‘বৈশ্বিক ট্র্যাজেডি’ হিসেবে উল্লেখ করেছে জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে এ ধরনের অপচয়কে অনৈতিকও বলা হয়েছে। জানা যাচ্ছে, উড়োজাহাজ চলাচল থেকে নিঃসরিত কার্বন যতটা না বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়াচ্ছে, তার থেকে পাঁচগুণ উষ্ণতা বাড়াচ্ছে খাদ্যবর্জ্য। বৈশ্বিক নেতৃত্ব আজ ব্যস্ত আধিপত্য বিস্তারে। তারা খালি পেটে থাকা ৮২ কোটি মানুষকে দেখতে পায় না। তাই বৈশ্বিক নেতৃত্বের সংশোধন দরকার। বিশেষ করে ধনী দেশগুলো নিজ নিজ নাগরিকদের খাদ্য অপচয় রোধে উৎসাহ দেবে। বেঁচে যাওয়া খাদ্য দরিদ্র দেশগুলোতে বণ্টনের ব্যবস্থাপনা করবে। আশা করা যায়, এ নীতি কিছুটা সফল হলেও বিশ্বে অনাহারি মানুষ থাকবে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement
সিরিয়ার নতুন শাসকদের প্রতি হিজবুল্লাহপ্রধানের আহ্বান ইসরাইলের সাথে সঙ্ঘাতে আগ্রহী নন সিরিয়ার নতুন নেতা সাবেক ফুটবলার কাভেলাশভিলিই জর্জিয়ার প্রেসিডেন্ট ঘড়ির সময় বদলাতে চান না ট্রাম্প ভারতীয় মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াতে অস্ত্র বাংলাদেশ : ওয়েইসি সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র খেয়ালখুশিমতো খরচ হয়েছে জলবায়ু তহবিলের অর্থ গুমে শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা পেয়েছে কমিশন : র‌্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ আরাকানে সাড়ে ৪ শ’সেনা নিহত, জান্তার নিয়ন্ত্রণ শেষ বিপাকে রোহিঙ্গারা ভারতসহ সাত ‘অসহযোগী’ দেশের তালিকা ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের সিরীয়রা স্বাধীনতা উদযাপনের সময় দামেস্কে ইসরাইলের হামলা

সকল