১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
দুই পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতন

বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ দেখুন

-

১৯৯৬ ও ২০১০ সালে দেশের পুঁজিবাজার বা শেয়ার মার্কেটে দু’বার বড় ধরনের কারসাজি করে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় একটি চক্র। তখন লাখ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী সমুদয় পুঁজি হারিয়ে পথে বসেন। ২০১০ সালে পুঁজি হারিয়ে কেউ কেউ আত্মহননের পথ বেছে নেন। তদন্তে পুঁজিবাজারের ওই দু’টি কেলেঙ্কারির সাথে যাদের নাম উঠে আসে তাদের কারো শাস্তি হয়নি। সরকার-ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তারা পার পেয়ে যান।
সেই যে দেশের পুঁজিবাজার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা হারিয়েছে, তা আর পুরোপুরি পুনরুদ্ধার হয়নি। এখন আবারো পুঁজিবাজারে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। এর বড় প্রমাণ- ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গত বুধবার সূচকের বড় ধস। ধারাবাহিক সূচকের পতনে ডিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক ডিএসইএক্স পাঁচ হাজার ৮০০ পয়েন্টের নিচে নেমে এসেছে, যা প্রায় তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এতে অনেক বিনিয়োগকারীর মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তলানিতে নেমে এসেছে বাজার। আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগে সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছেন লাখো বিনিয়োগকারী। স্মরণযোগ্য যে, গত ১৮ জানুয়ারি ফ্লোর প্রাইস পদ্ধতি তুলে নেয়ার পর থেকে প্রধান সূচকটি ৫৭২ পয়েন্ট হারিয়েছে। বাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছে এক লাখ আট হাজার ৭০৭ কোটি টাকা।
অব্যাহত দরপতনে প্রতিনিয়ত পুঁজি হারাচ্ছেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। পতনের প্রকৃত কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না কেউ। ফলে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি হারানোর আর্তনাদও থামছে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এমনিতে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক অবস্থা বিরাজ করছে। এর মধ্যে ব্যাংক আমানতের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে শেয়ারবাজারের টাকা ব্যাংকে যাচ্ছে। শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ব্যাংক খাতে সুদহার বেড়েছে। বর্তমানে আমানতের সুদহার সাড়ে ১১ শতাংশ। এ কারণে শেয়ারবাজার থেকে টাকা ব্যাংকে যাচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ফোর্সড সেল করছে। এসব কিছুর চাপ পড়েছে বাজারে। এতে বাজারের সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ডিএসইতে বুধবার সব ধরনের সূচক নেমেছে। প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৭১.৭০ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে পাঁচ হাজার ৭৬২.৬৮ পয়েন্টে। যা প্রায় বিগত ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। এর আগে ২০২১ সালের ১২ মে ডিএসইর সূচক দাঁড়িয়েছিল পাঁচ হাজার ৭৫০.৪৯ পয়েন্টে। আর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সিএসসিএক্স ৭২.১৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৯ হাজার ৯৫৬ পয়েন্টে।
গণমাধ্যমকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা জানান, ফ্লোর প্রাইস আরোপের সময় তাদের লস ১০-১৩ শতাংশে ঘোরাফেরা করছিল। কিন্তু ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়ার পর বর্তমানে ওই লোকসান ৩১ শতাংশে পৌঁছেছে। অনেকে পুঁজির ১৮ শতাংশ হারিয়েছেন। বাজার সামনে কোন দিকে যায় সে চিন্তায় তারা দিশেহারা।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের মতে, শেয়ারবাজার মন্দার অনেক কারণ থাকতে পারে। এর একটি কারণ- বাজারের প্রতি অনাস্থা। তাদের মতে, বাজার সুস্থ ধারায় আনতে হলে সুশাসন ফেরাতে হবে, স্বচ্ছতা আনতে হবে। সুশাসন ও স্বচ্ছতা ফিরলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরবে। তবে সবার চাওয়া, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির এ মন্দা সময়ে আবার কেউ যেন পুঁজিবাজারে কারসাজি করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সর্বনাশ না করতে পারে। সেদিকে সরকার অর্থাৎ নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে তীক্ষè নজর রাখতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement