১৫ মে ২০২৪, ০১ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলকদ ১৪৪৫
`


ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে আলোচনা

সবার আগে চাই সুশাসন

-

কিছু দিন ধরে ব্যাংক খাত সংস্কারের বিষয় নিয়ে জোরেশোরে আলোচনা হচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সাথে বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর দুর্বল ব্যাংকগুলো সবল ব্যাংকের সাথে একীভূত করার কথা জানিয়েছেন। এ নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দু’টি প্রক্রিয়ায় একীভূতকরণ হতে পারে। প্রথমত, ব্যাংকগুলো নিজেরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত আরোপ করা হবে। যেভাবে হোক, বিষয়টি শিগগির ঘটবে না। এক-দেড় বছরের মতো সময় লাগবে।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে ব্যাংক একীভূত করার সফল দৃষ্টান্ত আছে। কিন্তু বাংলাদেশে ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে ৪০টি দুর্বল। এর অর্থ হলো- ব্যাংক খাত রীতিমতো বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলেন, ব্যাংক খাতে কোনো দুর্বল প্রতিষ্ঠান থাকলে পুরো খাত ঝুঁঁকিতে থাকে। এ ঝুঁঁকি এড়ানোর একটি উপায় হলো একীভূতকরণ। তবে জরুরি অবস্থা বিবেচনায় ত্বরিত ব্যবস্থা নেয়াই দরকার ছিল।
এর আগে পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়ক নিয়োগ করা হয় ১৫টি দুর্বল ব্যাংকে। এ সংখ্যা দেশের মোট ব্যাংকের এক-চতুর্থাংশ। তারা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম সরাসরি ও সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন। এরপরও বেশির ভাগ ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার অবনতি ঘটেছে। ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাহিদামতো তারল্য জমা রাখতে পারছে না, এদের ঋণদান কার্যক্রমে অনিয়মও বন্ধ হয়নি। জানা যায়, জুলাই ২০২২ থেকে জুন ২০২৩ পর্যন্ত সময়ে এসব ব্যাংকের ১২টিতে খেলাপি ঋণ বেড়েছিল। তদারকির আওতাধীন ব্যাংকের মালিক ও গ্রাহকদের বেশির ভাগ সরকারঘনিষ্ঠ। তাদের রাজনৈতিক প্রভাবের কাছে পর্যবেক্ষক বা সমন্বয়কারীরা অসহায়। আমানতকারীদের স্বার্থে তারা কোনো ভূমিকা রাখতে পারেন না। কোনো নিয়ম-নীতি বলবৎ করতে পারেন না।
এ কারণে, অনিয়ম-দুর্নীতিতে সঙ্কটে পড়া তিনটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক ও কিছু বেসরকারি ব্যাংক বিশেষ তদারকির আওতায় নেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে এসব ব্যাংক কোন উপায়ে সঠিক পথে ফিরবে, তা বলা কারো পক্ষে সম্ভব নয়।
ব্যাংক একীভূত হলে আমানতকারীদের ক্ষতির সম্ভাবনা নেই বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে সঙ্কটে পড়বেন দুর্বল ব্যাংকের কর্মীরা। হয়তো গণছাঁটাইয়ের মুখে পড়বেন তারা। কারণ, কোনো ভালো ব্যাংক অযোগ্য ও অদক্ষ কর্মী রাখার ঝুঁকি নেবে না।
আইএমএফের ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার একটি তাগিদ সরকারের দিকে রয়েছে। পর্যবেক্ষক-সমন্বয়ক বসিয়ে সেটি করা সম্ভব হয়নি। ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া কতটা সফল হবে তা সময়ই বলে দেবে। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত, যত ব্যবস্থা নেয়া হোক, কঠোর রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়া তা সফলতার মুখ দেখবে না। রাজনৈতিক নেতৃত্বের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত আসতে হবে ব্যাংক খাতসহ সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিয়ম-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার। যাকে বলা হয় সুশাসন। দীর্ঘদিন ধরে সুশাসনের অভাবে ব্যাংক খাতসহ সর্বত্র ধস নেমেছে।
সত্যিকার অর্থে দেশের মঙ্গল চাইলে সর্বস্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা বা নিয়মনীতি পরিপালন বাধ্যতামূলক করা একমাত্র উপায়। বর্তমান রাজনৈতিক নেতৃত্বের ১৫ বছরের কর্মকাণ্ড দেখার পর এ বিষয়ে আশাবাদী হওয়ার সুযোগ কম।


আরো সংবাদ



premium cement