বাংলাদেশ ও এর আশপাশের এলাকায় প্রায়ই ভূমিকম্প হচ্ছে। গত শুক্রবার ভোরে সারা দেশে ভূমিকম্প হয়। ৫ দশমিক ৮ মাত্রার এ ভূকম্পন ৪১ সেকেন্ড স্থায়ী হয়। এর আওতা ছিল ভারত ও মিয়ানমারের দীর্ঘ অঞ্চল। পরদিন বেলা ৩টা ৪৭ মিনিটে চট্টগ্রাম অঞ্চলে আবারো ভূকম্পন অনুভূত হয়। এটি ছিল ৪ দশমিক ২ মাত্রার এবং তা স্থায়ী হয় ১৬ সেকেন্ড। এটিও ভারত ও মিয়ানমারে অনুভূত হয়। গত এক বছরের মধ্যে এ অঞ্চলে আরো সাত দফা ভূমিকম্প হয়েছে। সবই ছিল মাঝারি ও মৃদু মাত্রার ভূমিকম্প। এতে ক্ষয়ক্ষতি কিছু হয়নি। তবে এগুলো আমাদের জন্য বড় ধরনের ভূমিকম্পের সতর্ক বার্তা। এ বার্তা গ্রহণ করে আমরা যথাসাধ্য সতর্কতা অবলম্বন করতে পারি।
বাংলাদেশ ও পাশের অঞ্চলে বিগত কয়েক শ’ বছরের মধ্যে ভয়াবহ ভূমিকম্পও হয়েছে একাধিক। বিগত দেড় শ’ বছরের মধ্যে রিখটার স্কেলে ৮ ও এর কাছাকাছি মাত্রার সাতটি ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছে। এর মধ্যে দু’টির কেন্দ্র ছিল বাংলাদেশের ভেতরে। পাঁচটি ভূমিকম্পের কেন্দ্র বর্তমান রাজধানী ঢাকার আড়াই শ’ কিলোমিটারের মধ্যে। ব্রহ্মপুত্র নদের গতিধারা পুরোটাই বদলে যাওয়ার কারণ বলা হচ্ছে ভূমিকম্প। ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের মতে, এ অঞ্চল আবার যেকোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার সাধ্য কারো নেই। তবে কিছু প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ রয়েছে। প্রতিবেশী ভারত ও নেপাল সম্ভাব্য ঝুঁকি বিবেচনায় প্রস্তুতি নিচ্ছে। সে তুলনায় বাংলাদেশে এখনো কোনো ধরনের সচেতনতাই লক্ষ করা যাচ্ছে না।
বড় মাত্রার ভূমিকম্প বেশি ঝুঁকিপূর্ণ শহরের জন্য, যেখানে গড়ে উঠেছে উঁচু দালানকোঠা। বসবাস করে বিপুলসংখ্যক মানুষ। এ ক্ষেত্রে ঢাকা এ অঞ্চলের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। এখানে গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিত বিশাল নগরী। সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির (সিডিএমপি) এক জরিপে বলা হয়, ঢাকার ৭৮ হাজার ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। তাদের হিসাবে, চট্টগ্রামে এক লাখ ৪২ হাজার ভবন ও সিলেটে ২৪ হাজার ভবন একই ধরনের ঝুঁঁকির মধ্যে রয়েছে। উঁচু এসব ভবন নির্মাণে ভূমিকম্প সহনীয়তার নিয়ম মানা হয়নি। এগুলোর কাঠামো এতটাই দুর্বল যে, বড় ভূমিকম্প হলে ধসে যেতে পারে। তার ওপর নেই রাস্তা। বড় ধরনের বিপর্যয় হলে বেশির ভাগ মানুষ ফাঁদে আটকা পড়ে মারা যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উদ্ধারতৎপরতা চালানোর সুযোগও থাকবে না। দেশে পরিকল্পিতভাবে নগরায়ন হয়নি। তাই বড় ভূমিকম্প হলে সব জায়গা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ার জোরালো আশঙ্কা রয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ এ দেশে সব সময়ই আছে। তাই দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু ভূমিকম্প মোকাবেলার অভিজ্ঞতা আমাদের নেই। বড় আকারের ধ্বংসস্তূপ থেকে মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় আমাদের উপায়-উপকরণের অভাব রয়েছে। তবে উপযুক্ত প্রস্তুতি ও সতর্কতা আমাদের কিছুটা হলেও উপকারে আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের উচিত এ ব্যাপারে ব্যাপক সচেতনতা গড়ে তোলা। তবে এখানে একটি গায়েবি ব্যাপারও রয়েছে। এ ব্যাপারটিকে আমরা খুব কমই নজর দিই। মানুষ যখন আল্লাহর প্রতি চরম অবাধ্য-অকৃতজ্ঞ হয়ে ওঠে, অন্যায়-অনাচারে গা ভাসিয়ে দেয় তখন স্রষ্টার পক্ষ থেকে মানুষকে শোধরানোর প্রয়োজন হয়। মানবসমাজে এ ধরনের বহু বিপর্যয় আগে দেখা গেছে। আমরা যদি নিজেদের সংশোধনের আত্মোপলব্ধির পথে হাঁটি তাহলে বড় বিপর্যয়ের শঙ্কাকে আমরা ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করব। খোদাদ্রেহিতার পথ থেকে সরে এসে নিজেদের শুধরে নেবো।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা