বারবার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার সাতক্ষীরার চিংড়িশিল্প তথা সংশ্লিষ্ট চাষিরা। বিপর্যয় বা দুর্যোগ একের পর এক লেগেই আছে। ফলে চিংড়িচাষিরা হয়ে যাচ্ছেন সর্বস্বান্ত। কর্তৃপক্ষ বারবার আশ্বাস দিলেও হতাশ চিংড়িজীবীরা চোখে-মুখে দেখছেন অন্ধকার। তারা চাচ্ছেন আর্থিক প্রণোদনা; যেন চিংড়ি চাষের কাজটা সহজ হতে পারে। প্রশাসনিক পরিসংখ্যানে কেবল সাতক্ষীরা জেলাতেই বর্তমানে বড় ও ছোট চিংড়িঘেরের সংখ্যা ৫৫ হাজার। তারা ৬৭ হাজার হেক্টর আয়তনজুড়ে তৎপর আছেন। এ জেলায় চলতি বছর চিংড়ি উৎপাদনের টার্গেট ৩২ হাজার টন। একটি জাতীয় দৈনিকের সচিত্র প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
সম্প্রতি জোয়ারজনিত জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। এতে চিংড়ি মাছের ক্ষতির পরিমাণ ১৬ কোটি টাকা। সাইক্লোন ‘ইয়াস’ঘটিত অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এ জোয়ার প্রবল আঘাত হানে। সাতক্ষীরা জেলায় সর্বপ্রধান অর্থকরী পণ্য হলো ‘সাদা সোনা’ বাগদা চিংড়ি। স্মর্তব্য, ২০১৯ সালের ১২ মে ‘ফণী’ নামের ঘূর্ণিঝড় বাঁধ ভেঙে ফেলায় চিংড়ির ক্ষতি হয় শতাধিক কোটি টাকা। চাষিরা এরপর আবার কোনোক্রমে চিংড়ি উৎপাদনে আত্মনিয়োগ করলে গত বছর আমফানের ধাক্কায় ঘেরগুলো ভেসে যায়। তখন ক্ষতি হয়েছিল ১৭৬ কোটি টাকার। এর জের থাকতেই এবার ‘ইয়াস’-এর হানায় তলিয়ে যায় বিস্তীর্ণ এলাকার চিংড়িঘের। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট চাষিরা আর ‘সোজা হয়ে দাঁড়াতে সক্ষম হচ্ছেন না’। ফলে তাদের অনেকে পেশা বদলিয়ে এমনকি দিনমজুরি করতেও বাধ্য হচ্ছেন।
শ্যামনগর উপজেলার একজন চাষি বলেছেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে সম্প্রতি এলাকার সব ঘের ভেসে গেলেও আমফান-পরবর্তী ১০ মাসেও বাঁধ দেয়া হয়নি নদীতীরে। আমরা স্ব-উদ্যোগে চিংড়িঘের আবার চালু করার পদক্ষেপ নিতে চাচ্ছি। কিন্তু উত্তাপে বহু মাছ প্রাণ হারায়। বাকিগুলো শেষ হয়ে গেছে সাম্প্রতিক ঝড়ে। এখন মজুর হওয়া ছাড়া আমাদের উপায় নেই।’ একই এলাকার আরেকজন বললেন, আমরা নির্ভরশীল চিংড়িঘেরের ওপর। আমরা আজো সরকারি সাহায্য-সহায়তা পাইনি। আশাশুনির একজন হাজী সাহেব বলেন, ‘৭০০ টাকা কেজি দরে ১০০ কেজি মাছ বেচার পরপরই ইয়াস ঝড়ে ঘের ভেসে গেছে। ফলে আমার ক্ষতি হয়েছে অন্তত ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা।’ অন্য একজনের বক্তব্য, আমফান ঘূর্ণিঝড় আমার সাত বিঘা পরিমাণ চিংড়িঘেরও ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা এখন উপার্জনহীন। তারা প্রণোদনার কথা শুনলেও এটা পাননি।
সাতক্ষীরার চিংড়িচাষিদের দাবি, টেকসই বেড়িবাঁধ এবং শতকরা ৪ ভাগ সুদে ঋণ। অন্যথায়, চিংড়ি চাষ বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে তাদের ভয়। এ জেলার কমপক্ষে চারটি উপজেলা ঝড়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। সরকারি হিসাব মোতাবেক, ক্ষতির কবলে পড়েছে সাত হাজার ৪০০ চিংড়িঘের এবং এগুলোর মোট পরিসর সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর। ক্ষতি হয়েছে মোট ১৬ কোটি টাকার। জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্র জানায়, ৪ শতাংশ সুদে চিংড়িজীবীদের ঋণ প্রদানের লক্ষ্যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরার ‘সাদা সোনা’ শিল্প যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, সেজন্য স্থায়ী বাঁধ এবং সহজ ঋণসমেত প্রণোদনা নিশ্চিত করতে আর বিলম্ব করা হবে না বলে আমরা আশা করি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা