বাজেট পাস হলেও অর্থনীতির সঙ্কট মেটার দিশা কোথায়!
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ৩০ জুন ২০২৪, ২২:০২, আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪, ২২:০৫
সমালোচনার পরও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রেখেই বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস হয়েছে। রোববার বিকেলে সংসদ সদস্যদের কণ্ঠ ভোটে বাজেটটি পাস হয়।
আগামী ১ জুলাই (সোমবার) থেকে নতুন বাজেট কার্যকর হবে।
এর আগে, গত ৬ জুন ‘টেঁকসই উন্নয়নের পরিক্রমায় স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা’ শিরোনামে সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রায় আট লাখ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
এতে ছয় দশমিক ৭৫ শতাংশ জিডিপি এবং প্রায় ছয় শতাংশ বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে।
পাসের আগে প্রস্তাবিত বাজেটে অল্প কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
বাড়তি রাজস্ব আদায়ের জন্য অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বাজেট প্রস্তাবে ধনীদের ওপর করহার বাড়ালেও শেষ পর্যন্ত সেই অবস্থানে অটল থাকতে পারেননি।
বাজেটে প্রস্তাবিত সর্বোচ্চ আয়কর ৩০ শতাংশ থেকে নামিয়ে আগের মতোই ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।
বছরে যাদের মোট আয় সাড়ে ৩৮ লাখ টাকার বেশি, তাদেরকে ২৫ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হবে।
তবে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়নি।
ফলে সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি বাৎসরিক আয় থাকলেই নতুন বাজেটে ব্যক্তিকে পাঁচ থেকে ২৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।
আরো যা যা পরিবর্তন
প্রস্তাবিত বাজেটে সংসদ সদস্যের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা বাতিল করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু শেষমেশ প্রস্তাবটি পাস হয়নি। ফলে সংসদ সদস্যরা আগের মতোই শুল্কমুক্ত সুবিধায় দেশে গাড়ি আমদানি করার সুযোগ পাচ্ছেন।
এছাড়া কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নিয়ে নানান সমালোচনা হওয়ার পরও সেই সুবিধা রেখেই বাজেট পাস করা হয়েছে।
একজন করদাতা ১৫ শতাংশ হারে কর দিয়ে তার অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করতে পারবেন। আবার ফ্ল্যাট-প্লট কিনেও অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ থাকছে এবারের বাজেটে।
তবে মোবাইল ফোনে বাড়তি কর বসানোর প্রস্তাব নিয়ে তীব্র সমালোচনার পরও চূড়ান্ত বাজেটে সেটি কমানো হয়নি।
গত ৬ জুন প্রস্তাবিত বাজেটে শহর-গ্রাম নির্বিশেষে দেশের যেকোনো স্থানে কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করলে আয়কর বিবরণী জমা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করেছিলেন অর্থমন্ত্রী।
তবে অর্থ বিল পাসের সময় এই প্রস্তাবে সংশোধনী আনা হয়েছে।
ফলে এখন থেকে শুধু সিটি করপোরেশন এলাকায় কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করতে গেলে আয়কর বিবরণী জমার স্লিপ দিতে হবে।
এ বছর এমন একটি সময় আওয়ামী লীগ সরকার বাজেট পাস করল যখন উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সঙ্কট, ব্যাংকিংখাতের অস্থিরতাসহ বাংলাদেশের অর্থনীতি নানান সঙ্কটের মুখে রয়েছে।
নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বলে সংসদে জানান অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
কিন্তু চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কট সমাধানে এই বাজেট কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে?
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ
বাংলাদেশের অর্থনীতির চলমান সঙ্কটগুলোর অন্যতম হচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। দেশটির মূল্যস্ফীতি বাড়তে বাড়তে প্রায় ১০ শতাংশে পৌঁছে গেছে।
এ অবস্থায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
ফলে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ছয় শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য পর্যাপ্ত পদক্ষেপ এবারের বাজেটে নেয়া হয়নি।’
অর্থনীতিবিদ ফাহমিদ খাতুন বলেন, দেশে এখন যে অর্থনৈতিক সঙ্কট চলছে, সেই প্রেক্ষাপটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ও কর সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ কমিয়ে জনজীবনে স্বস্তি আনার পদক্ষেপ নেয়ার দরকার ছিল।
কিন্তু নতুন বাজেটে সে বিষয়ে দৃষ্টি দেয়া হয়নি। ফলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি অর্জনের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি ‘বাস্তবসম্মত নয়’ বলে মনে করছেন অনেক অর্থনীতিবিদ।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকনোমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘কারণ মূল্যস্ফীতির সমস্যা সমাধানের জন্য মুদ্রানীতি, রাজস্বনীতি, অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থাপনাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর মধ্যে একটি সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো দিক-নির্দেশনা এবং পদক্ষেপ বাজেটে দেখা যাচ্ছে না।’
ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সমস্যা থেকেই যাবে বলে ধারণা করছেন এই অর্থনীতিবিদরা।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ
গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমেই কমতে দেখা যাচ্ছে। ২০২১ সালের আগস্টে দেশটির রিজার্ভ যেখানে প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল, চলতি জুন মাসের শুরুতে সেটি নামতে নামতে প্রকৃত রিজার্ভ ১৩ বিলিয়ন ডলারের নিচে আসে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে দেখা যাচ্ছে।
এমন কী, ঋণের অর্থ পাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পক্ষ থেকে বৈদেশিক মুদ্রার প্রকৃত রিজার্ভ প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার রাখার যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেয়া হয়েছিল, গত কয়েক মাস ধরে চার ত্রৈমাসিকে তা পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।
এমন পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহে আইএমএফের কাছ থেকে আগের ঋণ চুক্তি অনুযায়ী, ১১৫ কোটি মার্কিন ডলার ছাড় পাওয়ার পর রিজার্ভ কিছুটা বেড়ে সাড়ে ১৫ বিলিয়ন ডলারের উঠেছে।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘এটি আপাতত স্বস্তি দিলেও দীর্ঘমেয়াদে রিজার্ভের সঙ্কট সমাধানে কাজে দেবে না।’
দীর্ঘমেয়াদে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে হলে রফতানি আয়ের বহুমুখীকরণ, আনুষ্ঠানিক উৎসের মাধ্যমে দেশে প্রবাসী আয় আনার পরিমাণ বৃদ্ধি, অর্থ পাচার রোধ এবং বড় ধরনের বিদেশী বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
সেলিম রায়হান বলেন, ‘কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এবারের বাজেটে এসব বিষয়ে আশা জাগানোর মতো তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না।’
বাজেটে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কটের কথা উল্লেখ করা হলেও সমস্যা সমাধানের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা দেয়া হয়নি বলেও জানাচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘এবারের বাজেটে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে সেটি ৩০ বিলিয়নে নেয়া হবে। কিন্তু এই লক্ষ্যমাত্রা কিভাবে অর্জিত হবে বা বাড়ানোর জন্য কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে, সে ব্যাপারে পরিষ্কার কোনো দিকনির্দেশনা বাজেটে নেই।’
ব্যাংকিং খাতের সঙ্কট
দেশের ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে তারল্য সঙ্কট-সহ নানান অস্থিরতা চলছে।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘অথচ দুঃখজনক হলেও সত্যি যে এবারের বাজেটে ব্যাংকিং খাত নিয়ে তেমন কিছুই বলা হয়নি।’
তিনি আরো বলেন, ‘এ খাতের সমস্যার বিষয়টি তারা বাজেটে কিছুটা ছুঁয়ে গেছেন। কিন্তু সমস্যা সমাধানের বিষয়গুলো বলা চলে অনেকটা এড়িয়ে গেছেন।’
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের সমস্যা সমাধানের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই একটি স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন গঠনের পরামর্শ দিয়ে আসছেন অর্থনীতিবিদরা।
সেলিম রায়হান বলেন, ‘কিন্তু এ বিষয়ে রাজনৈতিক অঙ্গীকার বা সদিচ্ছা আমরা এবারের বাজেটে দেখছি না।’
বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ
বাংলাদেশে গত দেড় দশকে বৈদেশিক ঋণের টাকায় একাধিক মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই সে সব প্রকল্পের ঋণের অর্থ পরিশোধ শুরু হয়েছে, যা আগামীতে আরো বাড়বে বলে জানাচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা।
সেলিম রায়হান বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে ঋণের কিস্তি পরিশোধ নিঃসন্দেহেই অর্থনীতিতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে।’
মূলত এমন একটি সময়ে বাংলাদেশ ঋণের টাকা পরিশোধ করতে যাচ্ছে, যখন দেশটিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সঙ্কট চলছে।
সেলিম রায়হান বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য রফতানি বহুমুখীকরণ, প্রবাসী আয় বৃদ্ধি এবং বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা জরুরি।’
কিন্তু বাজেটে এসব বিষয়ে পরিষ্কারভাবে কিছু বলা হয়নি। ফলে সামনের দিনগুলোতে ঋণের অর্থ পরিশোধ করাটাই দেশটির জন্য নতুন এক সঙ্কট হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা।
সেলিম রায়হান বলেন, ‘যে হারে আমাদের বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভ কমছে, সেটি কিন্তু একটা সিগনাল আমাদেরকে দিচ্ছে। সেটি হচ্ছে, সামনে রিজার্ভের অঙ্কে বড় উন্নয়ন না ঘটলে বিদেশী ঋণ পরিশোধের চাপ আমাদের ওপর আরো বেশি জেঁকে বসবে।’
আইএমএফের শর্তপূরণ
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণের অনুমোদন দেয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
তিন কিস্তিতে ইতোমধ্যেই সেই ঋণের ২৩১ কোটি ডলার ছাড় পেয়েছে বাংলাদেশ।
তবে ঋণের টাকা পাওয়ার জন্য দেশটির আর্থিক খাতে বেশ কিছু সংস্কারের শর্ত বেঁধে দিয়েছে আইএমএফ।
শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতের ভর্তুকি কমানো, টাকার বিনিময় ব্যবস্থা বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া, রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার, কর আদায়ে সক্ষমতা বৃদ্ধি, ব্যাংকিং খাতের সংস্কার, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, আধুনিক মুদ্রানীতি তৈরি করা, আর্থিক খাতের দুর্বলতা দূর করা এবং নজরদারি বাড়ানো ইত্যাদি।
সরকার ইতোমধ্যেই ডলারের দাম নির্ধারণে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি অনুসরণ, বিনিময় হার নির্ধারণ-সহ কিছু সংস্কার এবং সুদ হার পূর্ণ উদারীকরণের মতো কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, ‘কিন্তু তারপরও আর্থিক খাত, ব্যাংকিং খাত, কর ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ে সংস্কার আনার জন্য যে ধরনের রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার, সেক্ষেত্রে আমরা বেশ পিছিয়ে রয়েছি।’
অনেক অর্থনীতিবিদের মতে, অর্থনীতির জন্য এসব সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি হলেও প্রভাবশালী একটি পক্ষের কারণে দেশে এতদিন সেটি সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, ‘এখন চাপে পড়ে সরকার কিছু কিছু সংস্কার উদ্যোগ নিচ্ছে। কিন্তু সেগুলোতে একটা সমস্যা হলো স্বেচ্ছায় না করে চাপে পড়ে কাজ করলে সেটি খুব একটা অর্থবহ হয় না।’
ফলে আইএমএফের শর্তের বাইরেও সরকারি উদ্যোগে আর্থিক খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি
ব্যাংকিং খাতের মতো দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতেও এখন নানামুখী সঙ্কট চলছে।
সেলিম রায়হান বলেন, ‘অপরিকল্পিতভাবে আগে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। এরপর সেগুলোর অর্ধেকেরও বেশি এখন ব্যবহার করা যাচ্ছে না। অথচ ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়ে যেতে হচ্ছে।’
মূলত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশে তেল, গ্যাস ও কয়লার মতো জ্বালানি আমদানি কমে গেছে।
এর প্রভাব পড়েছে বিদ্যুৎ খাতের ওপরে।
তিনি বলেন, ‘দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত আমদানি নির্ভর হওয়ার কারণেই এটি ঘটেছে।’
এই খাতে আমদানি নির্ভরতা কমানোর জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে নিয়ে যাওয়া জরুরি বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘এনার্জি পলিসিতে সরকার নিজেও সেটি স্বীকার করে নিয়েছে। কিন্তু এবারের বাজেটে এ বিষয়ে খুবই গতানুগতিক কথাবার্তা বলা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি।’
আয়-ব্যয়ে সমন্বয় ও মেগাপ্রকল্প
রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য দীর্ঘদিন ধরেই করনীতিতে সংস্কার আনার পরামর্শ দিয়ে আসছে দাতা সংস্থাগুলো।
সেলিম রায়হান বলেন, ‘কিন্তু এবারের বাজেটে দেখা যাচ্ছে কর সংস্কারে সেভাবে উদ্যোগ নেই, বরং কালো টাকা সাদা করার মতো বিতর্কিত বিষয় রাখা হয়েছে।’
সব মিলিয়ে এবারের বাজেটকে ‘চ্যালেঞ্জিং সময়ের একটি সাধারণ বাজেট’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন অর্থনীতিবিদরা।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘এতে উচ্চাকাঙ্ক্ষী কথাবার্তা বলা হলেও সামষ্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা নেই।’
একই সাথে, কালো টাকা আবারো সাদা করার সুযোগ দিয়ে সৎ করদাতাদের ‘তিরস্কার’ করা হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
অন্য দিকে, অর্থনীতিবিদ সেলিম রায়হান মনে করেন, আয়-ব্যয়ের হিসেব বিবেচনায় এবারের বাজেট খুব একটা বাস্তবসম্মত নয়।
তিনি বলেন, ‘এতে যে হারে প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা বলা হয়েছে, সেটি বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্জন করা সম্ভব না।’
ফলে অন্যান্য বছরের মতো এবারো সরকারের আয়ের নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন তিনি।
এ অবস্থায় বাজেটে ঘাটতি মেটাতে ফের বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভর করতে হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা।
সেলিম রায়হান মনে করেন, ‘দীর্ঘমেয়াদে যা সঙ্কটকে আরো বাড়াতে পারে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমানের অস্বাভাবিক অর্থনৈতিক সঙ্কটের সময়ে একটি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং সঠিক পদক্ষেপ নেয়ার মতো বাজেট থাকবে বলে আমরা আশা করেছিলাম। কিন্তু আমাদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।’
অর্থনীতির এখন যে অবস্থা, তাতে এখন নতুন করে ঋণ নিয়ে বড় প্রকল্প হাতে না নেয়াই ভালো বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘অর্থনীতি একটা স্থিতিশীল অবস্থায় না যাওয়া পর্যন্ত আগামী অন্তত দুই থেকে তিন বছর নতুন মেগা প্রকল্প নেয়া ঠিক হবে না।’
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা