আসন্ন বাজেটে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে খুশি করতে চান অর্থমন্ত্রী
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৪ জুন ২০২৪, ২০:৪৩
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য আগামী বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে ৮ লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পেশ করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
কিন্তু রাজস্ব আদায় কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে না হওয়ায় বাজেট ঘাটতি পূরণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী জানান, বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে তার প্রথম বাজেটে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে খুশি করার চেষ্টা করবেন তিনি।
এই আশ্বাসের পরও বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান সরকারি ঋণ ও ডলার সংকটের মধ্যে মূল্যবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশী-বিদেশী উৎস থেকে ২ লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেবে সরকার। এর মধ্যে ব্যাংকসহ অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ১ লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকা এবং বাকি ১ লাখ কোটি টাকা বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নেয়া হবে।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ ১০ মাসের মধ্যে শেষ হয়েছে। গত এক দশকে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ১০৮ শতাংশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে, যা আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আরো বাড়ানো হবে।
বাজেটে অর্থায়নের জন্য সরকারকে এখন আগের চেয়ে বেশি ঋণ নিতে হচ্ছে। ফলে ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। এ ছাড়া ডলার সঙ্কট ও ডলারের উচ্চমূল্য ঋণ পরিশোধে সরকারের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, পাঁচ বছরে অভ্যন্তরীণ ঋণ দ্বিগুণ হয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ প্রথমবারের মতো ১০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। এটি চ্যালেঞ্জিং ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিচ্ছে, কেন না বৈদেশিক মুদ্রা ঘাটতি বেড়েই চলেছে। বৈদেশিক ঋণের মধ্যে সরকারি খাতের ৭৯ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার এবং বাকিটা বেসরকারি খাতের। এর মধ্যে ৮৫ শতাংশ ঋণ দীর্ঘমেয়াদি এবং বাকিগুলো স্বল্পমেয়াদি।
এ বিষয়ে আইএমএফের সাবেক অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, এখন থেকে বৈদেশিক ঋণে প্রকল্প গ্রহণে আরো সতর্ক হতে হবে। এসব ঋণের শর্তাবলী, মেয়াদ ও সুদের হার দেশের অর্থনীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিশ্লেষণ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আর্থিক সংকট কাটিয়ে ওঠা পর্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রকল্পের ব্যয় কমিয়ে আনার পাশাপাশি বিলাসবহুল প্রকল্পে বাজেট বরাদ্দ কমাতে হবে।
এছাড়া চলমান ডলার সঙ্কটের কারণে বেশ কিছু বিদেশি কোম্পানি বিনিয়োগ এবং পণ্য ও সেবা বিক্রয় থেকে মুনাফা তুলতে সমস্যায় পড়ছে। আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের জন্য এক ধরনের দায়।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত এক-দুই বছর ধরে দেশী-বিদেশী ঋণ পরিস্থিতি নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।
তাই কোনো খাতে কী পরিমাণ ঋণ আছে, ঋণের উৎস কী, ঋণ পরিশোধের পরিকল্পনা কী- এসব বিষয়ে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিদেশী বিনিয়োগকারীরা একটি দেশের ঋণ পরিস্থিতি, ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা, দেশটিতে বিনিয়োগ থেকে মুনাফা নিতে পারে কিনা তা দেখে বিনিয়োগ করে। বর্তমানে বেশ কিছু বিদেশি কোম্পানি মুনাফা আনতে ডলার-সঙ্কটসহ নানা বাধার সম্মুখীন হচ্ছে বলে জানান আহসান এইচ মনসুর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, সরকারের দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের বিষয়টি সাধারণত বেশি আলোচিত হয়।
কিন্তু বাজেটের অর্থায়নের জন্য সরকার ব্যাংক, সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য উৎস থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নেয়। এই ঋণের পরিমাণও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। গত পাঁচ বছরে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ গ্রহণের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে। অভ্যন্তরীণ ঋণ এর আগে কখনো এত দ্রুত বাড়েনি বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ড. সেলিম।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার ৭৮ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। এরপর প্রতি বছরই ঋণের পরিমাণ শুধু বাড়ছে। চলতি অর্থবছরে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত (মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত) ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে ৭০ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুনে বাজেটের অর্থায়নে বিভিন্ন ধরনের ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে আরও ৬২ হাজার কোটি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ ছাড়া নন-ব্যাংকিং খাত অর্থাৎ মূলত সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে এ বছর ২৩ হাজার কোটি টাকা নেয়ার কথা রয়েছে। এ পর্যন্ত বন্ড থেকে ১১ হাজার ২০৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার।
মূলত অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায় না হওয়ায় বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকারকে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি ২৬ হাজার কোটি টাকার বেশি।
সূত্র : ইউএনবি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা