আলোচনায় ৩৮১ কোটি টাকার গাড়ি
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৫ মে ২০২৪, ২২:৫৩
জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) জন্য ৩৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৬১টি গাড়ি কেনার প্রস্তাব নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
দেশের খারাপ অর্থনৈতিক অবস্থায় এই বিলাসবহুল স্পোর্টস কার কেনার উদ্যোগ নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। প্রতিটি গাড়ির দাম পড়বে প্রায় দেড় কোটি টাকা।
দেশে এখন সরকারি পর্যায়ে কৃচ্ছতাসাধনের আদেশ বহাল আছে। রিজার্ভের ওপর চাপ আছে। ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে। আছে মূল্যস্ফীতি। এই অবস্থার মধ্যে ওই গাড়ি কেনার প্রক্রিয়া বাতিলের দাবি করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল
বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচলক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি একে অপ্রয়োজনীয় ‘গাড়িবিলাস’ বলে অভিহিত করেছেন। আর সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং সাবেক কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘সবার তো গাড়ি আছে। আবার কেন এই দামি গাড়ি? সব গাড়ি কি নষ্ট হয়ে গেছে?’
এই গাড়িলো হবে স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকেল (এসইউভি)। প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে এক কোটি ৪৬ লাখ টাকা। জন প্রশাসন সচিব মোহাম্মদ মেসবাহ উদ্দিন চৌধুরী গাড়ি কেনার এই প্রস্তাব পাছিয়েছেন। এনিয়ে জানার জন্য জনপ্রশাসন সচিবকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি যানবাহন অধিদফতরের পরিবহন কমিশনার অতিরিক্ত সচিব মো: আবুল হাসনাত হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এই প্রস্তাব আমরা গত অক্টোবরে পাঠিয়েছি। তবে এটার আর কোনো অগ্রগতির খবর আমার জানা নাই। গাড়ি কেনার জন্য প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে কী না জানি না। আমরা কোনো কাগজপত্র পাইনি। তবে ক্রয় কমিটিতে প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য আছে বলে শুনেছি।’
২৬১টি গাড়ির মধ্যে ডিসিদের জন্য ৬১টি এবং ইউএনওদের জন্য ২০০ গাড়ি কেনার কথা। জানা গেছে, গাড়ি কেনার ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি না এলেও প্রধানমন্ত্রীর দফতর প্রস্তাবটি অনুমোদন করেছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে মাঠ পর্যায়ে কতগুলো সরকারি গাড়ি এবং তার অবস্থা জানতে চাওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অনুমোদনের পর গত ১৫ মে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে গাড়ি কেনার প্রস্তাব ওঠার কথা থাকলেও ওঠেনি বলে জানাগেছে।
গাড়িগুলো দুই হাজার ৪৭৭ সিসির মিতসুবিশি পাজেরো জিপ। মডেল মিতসুবিশি পাজেরো স্পোর্টস কিউ এক্স। ক্রয় কমিটিতে জনপ্রশাসন সচিব যে সারসংক্ষেপ পাঠান, তাতে ডিসি ও ইউএনওদের জন্য পার্ল হোয়াইট বা মেরুন রঙের গাড়ি কেনার কথা বলা হয়।
জানা গিয়েছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত বছরের জুনে প্রথম জেলা প্রশাসনের জন্য ৯৬টি ও উপজেলা প্রশাসনের জন্য ৩৬৫টিসহ মোট ৪৬১টি এসইউভি কেনার প্রস্তাব করে। অর্থ মন্ত্রণালয় গাড়ির সংখ্যা কমাতে বললে পরে অক্টোবরে ২৬১টি এসইউভি কেনার বিষয়ে একটি সংশোধিত প্রস্তাব পাঠায় মন্ত্রণালয়। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে নির্বাচনকে সামনে রেখে ওই গাড়ি কেরার তোড়জোড় করা হয়েছিল। তবে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে গত নভেম্বরে তা স্থগিত করা হয়। এখন আবার তা অনুমোদন করা হয়েছে।
‘প্রশাসনের কাজে গতি আনতে’ এই গাড়িগুলো কেনা হচ্ছে বলে প্রস্তাবে বলা হয়েছে। আর গাড়িগুলো সরাসরি ক্রয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে যাতে দ্রুত পাওয়া যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, এখন ডিসিরা মিতসুবিসির পাজোরো স্পোর্টস কার ব্যবহার করেন। আর ইউএনও-রাও পাজোরো গাড়ি ব্যবহার করেন। ডিসিদের পরিবহনপুলে আরো গড়ি আছে। কয়েকটি জলা ও উপজেলায় কথা বলা জানাগেছে গাড়িগুলো ভালো অবস্থায় আছে এবং ডিসি বা ইউএনওরা তাদের জন্য নতুন গাড়ির কোনো ডিমান্ডও দেননি। আর নতুন গাড়ি কেনার প্রস্তাব দেয়ার আগে এখন যে গাড়িগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে তার অবস্থা কেমন সে ব্যাপারে মাঠ পর্যায় থেকে কোনো প্রতিবেদনও নেয়া হয়নি। নতুন গাড়ি কেনা হলে পুরনো গাড়িগুলো কী কাজে লাগানো হবে তারও কোনো প্রস্তাব নেই।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘দুই কারণে এই গাড়ি কেনা বন্ধ করা উচিত। প্রথমত, দেশের মানুষের ট্যাক্সের পয়সায় সরকারি কর্মকর্তাদর জন্য বিলাসবহুল গাড়ি কেনা যায় না। আর এখন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকারই কৃচ্ছতাসাধনের কথা বলছে। সেখানে নতুন গাড়ি কেন?’
তার কথায়, ‘যার প্রয়োজন তাকে গাড়ি অবশ্যই দিতে হবে। কিন্তু একসাথে সব গাড়ি কি নষ্ট হয়ে গেছে যে এতগুলো গাড়ি কিনতে হবে। যেটা নষ্ট হয়েছে সেটা রিপ্লেস করা যায়। কিন্তু এভাবে তো গাড়ি বিলাস করা যায় না।’
তার প্রশ্ন, ‘এই গাড়িগুলো কিনতে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হবে। এখন এমনিতেই ডলার সঙ্কট। সেই সঙ্কটে এই গড়ি কেনা কেন?’
আর সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং সাবেক অডিটর ও কম্পট্রোলার জেনারেল হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘দেশের এই খারাপ অর্থনৈতিক অবস্থায় ডিসি ও ইউএনওদের জন্য এত টাকা খরচ করে গাড়ি কেনা বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না। আমার জানামতে তারা যে গাড়ি এখন ব্যবহার করছেন সেগুলো ভালো আছে, চলছে। তারপর আবার নতুন গাড়ি কেন?’
তার কথায়, ‘আমরাও তো প্রশাসনে ছিলাম তখন তো আমরা এত দামি গাড়ি পাইনি। যে দামের স্পোর্টস কারের কথা বলা হচ্ছে তা তাদের কী প্রয়োজনে লাগবে। আমার জানামতে আমাদের পাশের দেশের সরকারি কর্মকর্তারা এত দামি গাড়ি ব্যবহার করেন না।’
আর সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এম এ মান্নান এমপি বলেন, ‘আমাদের কৃচ্ছতাসাধন করতে হবে। সেটা ব্যক্তিগত এবং জাতীয় পর্যায়ে। সরকারি পর্যায়ে কৃচ্ছতার নীতি এখনো চলছে। তাই গাড়ি কেনা হলে সেটা যেন প্রয়োজন বিবেচনা করে কেনা হয়। যে গাড়িগুলো আছে সেগুলো তো চলছে। তাপরও কোনো গাড়ি ব্যবহার অনুপযোগী হলে নতুন গাড়ি কেনা যায়।’
দামের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বেশি দামের গাড়ি হলে সার্ভিস ভালো পাওয়া যাবে। সেটা বড় কথা নয়। কথা হলো প্রয়োজন আছে কী না সেটা বিবেচনা করে কিনতে হবে।’ বাংলাদেশে মোট ৬৪ জেলা। তার মধ্যে ৬১ জেলার জন্যই নতুন গাড়ি কেনা হচ্ছে। আর উপজেলা ৪৯৫টি । তার মধ্যে ২০০ উপজেলার জন্য নতুন গাড়ি কেনা হচ্ছে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা